খুলনা-মোংলা রেলপথ সেপ্টেম্বরে উদ্বোধনের সম্ভাবনা

খুলনা-মোংলা রেলপথ সেপ্টেম্বরে উদ্বোধনের সম্ভাবনা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঙলার কাগজ; খুলনা : দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি খুলনা-মোংলা রেলপথের কাজ এখন একেবারেই শেষের পথে। আশা করা হচ্ছে, আগামী সেপ্টেম্বরের শেষে বহু কাঙ্ক্ষিত এ রেলপথটি উদ্বোধন করা হবে। ইতোমধ্যে রেলপথের ৯৭ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে মাত্র ৩ শতাংশ রেলপথ ও কিছু ফিনিশিংয়ের কাজ বাকি রয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই বাকি কাজও সম্পন্ন হবে। এই রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সামুদ্রিক বন্দর মোংলার সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এবং নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে পণ্য পরিবহনে সাশ্রয় ও সহজ করতে খুলনার ফুলতলা রেলস্টেশন থেকে মোংলা পর্যন্ত রেলপথ স্থাপনের প্রকল্পটি শুরু হয় ২০১০ সালে। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হয় নি। এরপর দুই দফা সংশোধনের পর সর্বশেষ ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু গত বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেও প্রকল্পের কাজের ৯০ কিলোমিটারের মধ্যে ৭৫ কিলোমিটারের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়। বাকি থাকে আরও ১৫ কিলোমিটার রেলপথের কাজ। এজন্য চলতি বছরের (২০২৩ সাল) জুন পর্যন্ত আরও ছয় মাস প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। এরপর আরেক দফা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হলেও প্রকল্পের কাজে আর কোনও অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় নি।

রেলওয়ে প্রকল্প সূত্র জানায়, ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রথম দফায় প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় প্রথম সংশোধনীতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকায়। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয় নি। দ্বিতীয় দফা সংশোধনের পর সর্বশেষ ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়। সেই সঙ্গে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ টাকায়। এর মধ্যে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লারসেন অ্যান্ড টুব্রো রূপসা নদীর ওপর রেলসেতুর নির্মাণকাজ করেছে। বাকি কাজ করেছে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইরকন ইন্টারন্যাশনাল। প্রকল্পটির কাজ তিনটি ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে রয়েছে : রূপসা নদীর ওপর রেল সেতু নির্মাণ, মূল রেললাইন স্থাপন এবং টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং স্থাপন। শুরু থেকেই প্রকল্পটি নানা ধরনের বাধার মুখে পড়ে। তিন বছর  মেয়াদের কাজটির জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দিতে সময় লাগে দুই বছর।

সূত্রমতে, তিন বছর মেয়াদের প্রকল্পটি ধীরগতির কাজের কারণে ব্যয় বেড়ে ১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা থেকে ৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকা হয়েছে। দুই দফায় প্রকল্প সংশোধনের কারণে এই ব্যয় বেড়েছে ২ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা। তবে তৃতীয় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও ব্যয় বাড়ে নি বলেই জানা গেছে।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় পরিষদের সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ জামান বাঙলার কাগজকে বলেন, খুলনা-মোংলা রেলপথ চালু খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি। এই রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান বাঙলার কাগজকে বলেন, খুলনা-মোংলা রেলপথের ৯০ কিলোমিটারের মধ্যে ইতিমধ্যে ৮৭ কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে বাকি রয়েছে মাত্র ৩ কিলোমিটার রেলপথ ও কিছু ফিনিশিংয়ের কাজ। আশা করা হচ্ছে, এই স্বল্প কাজও দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ হবে।

তিনি আরও বলেন, কোনও প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক না ঘটলে আগামী মাসের (সেপ্টেম্বর) শেষের দিকে খুলনা অঞ্চলের মানুষের বহু কাঙ্ক্ষিত খুলনা-মোংলা রেলপথ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা সম্ভব হবে।