কাগজ সঙ্কট থাকায় পুরোনোতে তৈরি নতুন বই

কাগজ সঙ্কট থাকায় পুরোনোতে তৈরি নতুন বই

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : রিজার্ভের অর্থের যথাযথ ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক তফসিলি ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ প্রদান করে যে, প্রয়োজনীয় ছাড়া অন্য পণ্য আমদানিতে এলসি খুলতে নিরুৎসাহিত করার জন্য। এমন অবস্থায় কাগজ আমদানিতে এবার কম এলসি খোলার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সবমিলে কিছুক্ষেত্রে কাগজের দাম যেমন বেড়ে গিয়েছিলো, তেমনি কাগজ সঙ্কটও দেখা দিয়েছিলো। আর কাগজ সঙ্কট দূর করে এবার সঠিক সময়ে বই দেওয়ার জন্য পুরোনো বইয়ের কাগজ থেকে নতুন বই তৈরি করা হয়েছে।

জানা গেছে, গেলো কয়েক বছরের মতো এবারও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর সময় কাগজের সঙ্কট দেখা দেয়। তাই কাগজ উৎপাদনের পাল্প বা কাঁচামাল সঙ্কট নিরসনে প্রতিষ্ঠানটি এবার কাগজকলগুলোয় নিজেদের পুরোনো বই সরবরাহ করেছে। এসব পুরনো কাগজ রিসাইকেল করে উৎপাদন করা হয়েছে নতুন কাগজ, যা দিয়ে এবার ছাপানো হয়েছে এনসিটিবির নতুন পাঠ্যবই। রোববার (পহেলা জানুয়ারি) পাঠ্যপুস্তক উৎসবের দিন তাই একটি বড় অংশের বই তুলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে শিক্ষার্থীদের হাতে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এবার মাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তুক উৎসব হবে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার কাপাসিয়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে। অন্যদিকে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের বই উৎসব হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এক আদেশে পাঠ্যপুস্তক উৎসব আয়োজন করতে সব আঞ্চলিক পরিচালক, অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনুরোধ জানিয়েছে।

অভিযোগ আছে, কাগজ সঙ্কটের অজুহাতে প্রতিবছর পাঠ্যবই ছাপানোয় দেরি করেন ছাপাখানার মালিকেরা। এনসিটিবিকে অনেকটা জিম্মি করে বছরের শেষ মুহূর্তে ডিসেম্বরে তড়িঘড়ি করে নিম্নমানের কাগজ, সেলাই ও বাঁধাই করা বই সরবরাহ করা হয়। কিন্তু পহেলা জানুয়ারি পাঠ্যপুস্তক উৎসব নিশ্চিত করার তাগিদ থাকায় এনসিটিবিও দিশাহারা হয়ে মান যাচাইয়ের চেয়ে বই হাতে পাওয়াকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। যদিও দিনের পর দিন এই সঙ্কটে ঘুরপাক খেতে থাকা এনসিটিবি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের কোনও উদ্যোগ এখনো নেয় নি।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, পাঠ্যবই ছাপার মান ও সরবরাহ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও পহেলা ১ জানুয়ারি পাঠ্যপুস্তক উৎসব আয়োজনে কোনও শঙ্কা নেই। এই সময়ের আগেই প্রায় শতভাগ পাঠ্যবই বিভিন্ন উপজেলায় পৌঁছে যাবে। তবে পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ বই উৎপাদন সম্পন্ন করা যাবে না নির্ধারিত সময়ের মধ্যে।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, প্রায় সব উপজেলায় ইতোমধ্যে মাধ্যমিক স্তরের নতুন পাঠ্যবই পৌঁছে গেছে। যে দুই-একটি উপজেলায় বাকি, সেগুলোতেও দুই-তিন দিনের মধ্যে বই পৌঁছে যাবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা সারাদেশের স্কুলগুলোর কাছ থেকে তথ্য নিয়েছি। নতুন বছরের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে কারও শতভাগ বইয়ের প্রয়োজন হয় না। প্রথম সপ্তাহে স্কুলগুলোর ৬০ শতাংশ পাঠ্যপুস্তকের প্রয়োজন হয়। আমরা ১ জানুয়ারির মধ্যে ৯৫-৯৮ শতাংশ বই পৌঁছে দিচ্ছি। কাজেই বই নিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কোনও কারণ নেই।’

বই ছাপার কার্যক্রম কিছুটা পিছিয়ে যাওয়ার বিষয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘অন্য বছরের তুলনায় এবার প্রথম থেকেই বই ছাপানোর প্রক্রিয়ায় নানামুখী সঙ্কট ছিলো। পরবর্তী সময়ে কাগজের অভাব সঙ্কট আরও বাড়িয়ে তোলে। সবকিছুর ব্যয়ও বেড়ে যায়। এসব কারণে ছাপাখানা মালিকরা বেকায়দায় পড়েন। এই বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যেও যথাসময়ে পাঠ্যপুস্তক ছাপানো সম্ভব হচ্ছে।’

অধ্যাপক ফরহাদ আরও বলেন, ‘ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও কাঁচামাল আমদানি বন্ধ থাকায় এবার দেশে ভালোমানের কাগজের সঙ্কট রয়েছে। এ কারণে ছাপার কাজও এবার কিছুটা পিছিয়ে ছিলো। ভার্জিন পাল্পের পরিবর্তে পুরোনো বইয়ের কাগজ থেকে রিসাইকেল করে ফের নতুন কাগজ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য এনসিটিবির পুরোনো প্রায় এক হাজার টন বই দেওয়া হয়েছিলো কাগজ কলে। এ কারণে কাগজের মানে হয়তো সামান্য তারতম্য থাকবে।’

বই ছাপার মান রক্ষা ও সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ে এনসিটিবি এবার শক্ত অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন বোর্ডের কর্মকর্তারা। তাঁরা জানান, মাধ্যমিক স্তরের বই ছাপাতে নিম্নমানের কাগজ ক্রয় ও অনুমোদনহীন কাগজে বই ছাপানোর অভিযোগে এখন পর্যন্ত ১১টি ছাপাখানার বিপুল সংখ্যক বই নষ্ট করা হয়েছে। নষ্ট করা বই ও কাগজের মধ্যে হাওলাদার অফসেট প্রেসের তিন হাজার কপি পাঠ্যবই, সরকার প্রেসের তিন লাখ ফর্মা কাগজ, আল আমিন প্রেসের ৫০ হাজার কপি পাঠ্যবই ও এক লাখ ফর্মা কাগজ, সরকার অফসেট প্রেসে দুই লাখ ফর্মা কাগজ এবং ভাই ভাই প্রেসের তিন লাখ ফর্মা কাগজ রয়েছে। একই অভিযোগে মেসার্স সৃষ্টি প্রিন্টার্স, মেরাজ প্রেস, দিগন্ত প্রিন্টার্স, সোনালি ওয়েব প্রিন্টার্স ও এস এস প্রিন্টার্সের বিপুল পরিমাণ কাগজ ছাপার অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।

বরাবরের মতো এবারও পহেলা জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা তাঁর কার্যালয়ে বিভিন্ন স্তরের নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিয়ে বই উৎসব উদ্বোধন করবেন। নতুন শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের স্তরের ৪ কোটি ৯ লাখ ১৫ হাজার ৩৮১ শিক্ষার্থীর জন্য পাঠ্যপুস্তক ছাপা হচ্ছে।