‘এক রাইতে গ্যাসের গাড়ি ত্যালের হইয়া গ্যালো’

‘এক রাইতে গ্যাসের গাড়ি ত্যালের হইয়া গ্যালো’

ডন প্রতিবেদন : ‘এহন ঢাকার বাসে আর ৫ টাকার ভাড়া নাই। জানেন না ভাড়া বাড়ছে?’ বাসচালকের সহকারী এভাবেই ‘অজ্ঞ’ বাসযাত্রীকে জ্ঞান দিচ্ছিলেন। যাত্রী রাজধানীর ফার্মগেট থেকে মানিক মিয়ার শেষে আড়ংয়ের কাছে যাবেন। এটুকু রাস্তার ভাড়া তিন দিনের বাস ধর্মঘটের আগপর্যন্তও ছিল ৫ টাকা। কিন্তু এখন আর ৫ টাকায় ঢাকার বাসে ওঠা যাবে না। যাত্রী অগত্যা ১০ টাকার একটি নোট গুঁজে দেন সহকারীর হাতে। মোবারক হোসেন নামের এক যাত্রী ফার্মগেট থেকে যাবেন শিশুমেলা। আগে ভাড়া দিতেন ১০ টাকা। আজ দিতে হলো ১৫ টাকা। এ ক্ষেত্রে বৃদ্ধি ৫০ শতাংশ। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বেড়েছে ২৩ শতাংশ, আর পরিবহনভাড়া বেড়েছে ২৭ শতাংশ। কিন্তু ঢাকার বেশির ভাগ গণপরিবহন তো চলে গ্যাসে। এর তো দাম বাড়েনি। এক যাত্রীর কথা, তাহলে গ্যাসচালিত এসব গাড়ির ভাড়া বাড়বে কেন? চালক সহকারী এবারও সরব। তাঁর উত্তর, ‘এসব গাড়ি ত্যালে চলে, গ্যাসে না।’ যাত্রীর পাল্টা উত্তর, ‘এক রাইতে গ্যাসের গাড়ি ত্যালের হইয়া গ্যালো। ভালোই রঙ্গ খাড়া করছ তোমরা।’ গতকাল রবিবার (৭ নভেম্বর) যানবাহনের মালিকদের সঙ্গে সরকারের দর-কষাকষির কারণে দূরপাল্লার বাস ভাড়া ২৭ শতাংশ বেড়েছে। বেড়েছে রাজধানীর বাসভাড়াও। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কথা। ফার্মগেট থেকে মানিক মিয়ার মাথা পর্যন্ত ৫ টাকার ভাড়া ১০ ধরার অর্থ হলো, ১০০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি। এ কেমন কথা? বাসের কোনো এক যাত্রীর এ প্রশ্ন হাওয়ায় ভাসে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে যানবাহনের ভাড়া বৃদ্ধির এ রঙ্গের গ্যাঁড়াকলে যে সাধারণ মানুষ পিষ্ট, তা সহযাত্রীদের কথায় স্পষ্ট। ভাড়া বৃদ্ধিজনিত কাজিয়া উত্তাপ ছড়াচ্ছিল বিভিন্ন গাড়িতেই। অবশ্য তা চরম আকার নেয়নি। কখনো মানুষের অসহায়ত্ব সরস মন্তব্যে গড়িয়েছে। সাভার থেকে যাত্রাবাড়ী পথের লাব্বায়েক পরিবহনে যাচ্ছিলেন নাহিদ হোসেন। ৩৫ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা দিতে হবে- এ কথা শুনে নাহিদের মন্তব্য, ‘ডিজিটাল গতিতে দাম বাড়াইছে। কওয়ার কিছু নাই। ডিজিটাল বাংলাদেশ।’ তেলের দামের বাড়ায় গ্যাসনির্ভর গাড়িগুলোর দাম বাড়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুললে শুনতে হচ্ছে, গাড়ি তেলে চলে। পরীক্ষা কে করবে? কিন্তু নিশ্চিতভাবেই গ্যাসে চালিয়ে দিব্যি ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে লেগুনা বা হিউম্যান হলারগুলো। ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডে মোহাম্মদপুর ও জিগাতলায় যাওয়ার লেগুনাগুলো সারি ধরে দাঁড়িয়ে। মোহাম্মদপুরের ভাড়া আগে ছিলো ১০ টাকা। ১ নভেম্বর থেকে সেগুলো করা হয়েছে ১৫ টাকা। চালক শেখ আবদুল্লাহ বলেন, ‘আগে পেছনে ১২ জন বসত। যাত্রীদের কষ্ট হইতো। এহন ১০ জন বসাই, তাই ভাড়া বাড়তি।’ এই গাড়িতে চড়া শিক্ষার্থী অপূর্ব মিত্র বলেন, আসলে যাত্রী বসানোর ক্ষেত্রে কোনও রকমফের হয় নি। এরা এখনো ঝুলিয়ে লোক নেয়। আর এগুলোয় তো ১২ জনের সংকুলান হয় না। এরা জোর করে নিত। এখন ১০ জন তোলার কথা বলে বাড়তি ৫০ শতাংশ বাড়ালো। এ কথায় একটু চড়া গলা চালক শেখ আবদুল্লাহর। বলেন, ‘সবকিছুর দাম বাড়তাছে। চালের দাম বাড়তি, সয়াবিনের দাম বাড়ছে। আমরা কি হাওয়া খাইয়া থাকুম?’ যাত্রী নাসরিন সুলতানার তাৎক্ষণিক জবাব, ‘এসব জিনিস আমাদের খাইতে হয় না? নাকি আমাদের জন্য কম দামে দ্যায়?’ ভাড়া বৃদ্ধির কারণে যাত্রীর সংখ্যা কমছে বলে জানান ওয়েলকাম বাসের চালকের সহকারী হাবিল। বাসটির প্রায় অর্ধেক আসন ফাঁকা। এই প্রবণতা কিছুদিন চলবে। আবার সব ঠিক হয়ে যাবে বলেই বিশ্বাস হাবিলের। বলেন, ‘কয় দিন ঘরে বইয়া থাকব, কন?’