৬ সংবাদপত্র পেলো নোয়াব সম্মাননা

৬ সংবাদপত্র পেলো নোয়াব সম্মাননা

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) সম্মাননা পেলো দেশের ঐতিহ্যবাহী ৬ সংবাদপত্র। ৫০ বছরের বেশি সময় অতিক্রম করে আসা চারটি সদস্য সংবাদপত্র দৈনিক সংবাদ, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক আজাদী, দৈনিক পূর্বাঞ্চল আর ২৫ বছর পেরোনো দৈনিক মানবজমিন ও প্রথম আলোকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়।

শনিবার (পহেলা জুন) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশান ক্লাবে বর্ণাঢ্য আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। নোয়াবের সভাপতি এ. কে. আজাদ এমপির সভাপতিত্বে ও সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী আলী আরাফাত। 

এ সময় সংবাদপত্রের মালিকেরা বলেন, দেশে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করা যাচ্ছে না।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, সংবাদপত্র শিল্পের বিকাশে এর মালিকদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। জনমত গঠন করা, সামাজিক দায়িত্ব পালন করার মতো মৌলিক দায়িত্ব থেকে সংবাদপত্র যেনো দূরে সরে না যায়। 

তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী বলেন, স্পিকার এবং তথ্য প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দু’জন সম্পাদক অভিযোগ করলেন, স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করা যচ্ছে না। এটাই প্রমাণ করে আপনারা মতপ্রকাশ করতে পারেন। গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার কোনও ইচ্ছা সরকারের নেই। 

তিনি আরও বলেন, আপনারা স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করুন। মুক্ত গণমাধ্যম আমাদের জন্য খুবই দরকার। একইসঙ্গে দরকার অপতথ্য বন্ধ রাখা। 

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, সংবাদের পরিচালনা বোর্ডের সদস্য নিহাত কবির, আজাদীর নির্বাহী সম্পাদক নিহাত মালেক।

মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে অনেক কিছু বলা যায়, আবার অনেক কিছুই বলা যায় না। বললেও সমস্যা, না বললেও সমস্যা। আমরা যাবো কোথায়? 

তিনি বলেন, আমরা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছি। যেসব আইনকানুন দিয়ে আমাদের আটকে দেওয়া হয়েছে, তা যদি না থাকে তাহলে আমাদের হাতটা খুলে যাবে। আমরা লিখতে পারবো। আমরা না লিখতে পারলে পাঠকরা কোনোদিনই আমাদের কাগজ গ্রহণ করবেন না। 

প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, সারাদেশে এখন স্বাধীন, দলনিরপেক্ষ সাংবাদিকতা করা সম্ভব নয়। তবে নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যে কাজ চালিয়ে যাওয়া আমাদের দায়িত্ব। 

ছাত্রজীবনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ঢাকা কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় যেসব দাবিতে স্লোগান দিয়েছিলাম, ৬২ বছর পরও আজ সেই স্লোগান দিতে হচ্ছে। এখনও বলতে হচ্ছে– অবাধ গণতন্ত্র চাই, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চাই, সংবাদপত্রের পূর্ণ স্বাধীনতা চাই। 

সভাপতির বক্তব্যে এ. কে. আজাদ বলেন, আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয় হলো– সাইবার নিরাপত্তা আইন (সিএসএ)। নোয়াব এবং সম্পাদক পরিষদ ইতোমধ্যে এটি নিয়ে তাঁদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আশা করি, সরকার আমাদের উদ্বেগকে আমলে নেবে। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল সাংবাদিকতার সমস্যা সমাধানে একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে কাজ করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, উদ্বেগের সঙ্গে উল্লেখ করতে চাই, আন্তর্জাতিক মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশ দুই ধাপ পিছিয়েছে। ২০২৪ সালের রিপোর্টে ১৮০ দেশের মধ্যে ১৬৫তম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। 

এ. কে. আজাদ বলেন, স্বাধীনতা-পূর্বকালে আমাদের মুক্তি আন্দোলনকে রূপ দিতে সংবাদপত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলো। স্বাধীনতার পরও সরকারকে তাঁদের নীতির দুর্বলতা চিহ্নিত করতে এবং জনগণের জন্য উপকারী যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়তা করে জাতি গঠন প্রক্রিয়ায় কাজ করছে। ভুল তথ্য ও ভুয়া খবরের এই যুগে মানুষ ছাপা সংবাদপত্রকে বেশি বিশ্বাস করে। চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও আমরা আমাদের পূর্বসূরিদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রতিদিন সঠিক তথ্য প্রকাশ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ইনকিলাব সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দীন, প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক, প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী শুভ প্রমুখ।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, শিল্পপতি তপন চৌধুরী, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।