১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা : আপিল শুনানি ৩ জানুয়ারি

১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা : আপিল শুনানি ৩ জানুয়ারি

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ ও ডন : বহুল আলোচিত দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স এবং আপিল শুনানির জন্য আগামী ৩ জানুয়ারি দিন রেখেছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) এ মামলা শুনানির জন্য নতুন এই তারিখ দেন।

‘রাষ্ট্র বনাম মো. লুৎফুজ্জামান বাবর এবং অন্যরা’ শিরোনামের এ মামলা শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসার পর রাষ্ট্রপক্ষ সময়ের আবেদন করায় আদালত নতুন এই তারিখ দিলেন।

এদিন রাষ্ট্রপক্ষে আদালতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নির্মল কুমার দাস। নতুন তারিখের বিষয়টি নির্মল কুমার পরে সাংবাদিকদের জানান।

২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি দশ ট্রাক অস্ত্রের চোরাচালানের ঘটনার দুই মামলায় চট্টগ্রামের একটি আদালতে রায় হয়। এরপর একই বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি মামলার রায় ও অন্যান্য নথি অনুমোদনের জন্য নিয়ম অনুযায়ী হাইকোর্টে আসে।

দশ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনায় করা চোরচালান মামলার রায়ে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ মোট ১৪ জনের ফাঁসির রায় দেন চট্টগ্রামের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক এস এম মজিবুর রহমান।

এই ১৪ জনের মধ্যে এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আবদুর রহীম এবং ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়াও রয়েছেন।

২০০৪ সালের পহেলা এপ্রিল মধ্যরাতে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কর্ণফুলী নদী তীরে রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) সংরক্ষিত জেটিঘাটে দুটি মাছ ধরার ট্রলার থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র খালাস করে ট্রাকে তোলার সময় পুলিশ আটক করে।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদের সর্ববৃহৎ চালান ধরা পড়ার পর দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

পরে তদন্তে দেখা যায়, চীনের তৈরি এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ সমুদ্রপথে আনা হয় ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘উলফা’র জন্য। বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ওই চালান ভারতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো।

অস্ত্র উদ্ধারের পর ৩ এপ্রিল চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে চোরাচালানের অভিযোগে একটি এবং ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনে অন্য মামলাটি দায়ের করা হয়।

ওই দুই মামলায় আসামি ছিলেন মোট ৫২ জন। তাদের মধ্যে ৩৮ জনকে খালাস দেন চট্টগ্রামের আদালত।

চোরাচালান মামলায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ বি ও ২৫ ডি ধারায় ১৪ আসামির ফাঁসির রায় আসে। একইসঙ্গে হাইকোর্টের অনুমোদন সাপেক্ষে তাদের ৫ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।

আর অস্ত্র আইনের ১৯ এ ধারায় ওই ১৪ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। 

এ ছাড়া অস্ত্র আইনের মামলার ১৯ এফ ধারায় তাদের দেওয়া হয় সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড।

এই ঘটনায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জামায়াত নেতা নিজামী বেঁচে নেই। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ভিন্ন মামলায় ২০১৬ সালের মে মাসে তার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।

আর ১৫ বছর ধরে কারাগারে থাকা লুৎফুজ্জামান বাবর এ মামলা ছাড়াও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডের রায় পেয়েছেন। অবৈধ সম্পদের আরেক মামলায় তার আট বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।