‘হায় হোসেইন’ মাতমে অনুষ্ঠিত তাজিয়া মিছিল।

‘হায় হোসেইন’ মাতমে অনুষ্ঠিত তাজিয়া মিছিল।

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : ১০ মহরম তথা আশুরা মুসলিম বিশ্বে ত্যাগ ও শোকের দিন। ঘটনাবহুল এ দিনে বর্তমান ইরাকের অন্তর্গত কারবালা প্রান্তরে মুয়াবিয়ার হাতে শহিদ হন হজরত মোহাম্মদ (সা.) এর দৌহিত্র ইমাম হোসেইন (রা.)।

মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে আশুরা।

এদিন সকাল ১০টায় রাজধানীর হোসেনি দালান থেকে কারবালার মর্মান্তিক শোকের স্মরণে তাজিয়া মিছিল শুরু হয়। করোনা মহামারির কারণে ২ বছর পর পূর্ণাঙ্গ পরিসরে তাজিয়া মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। মিছিল সমন্বয়ের মূল দায়িত্ব পালন করেছে হোসেনি দালান ইমামবাড়া ম্যানেজমেন্ট কমিটি।

তাজিয়া মিছিল সাজানো হয়েছে কারবালার শোকের নানা প্রতিকৃতি দিয়ে। বিবি ফাতেমার স্মরণে মিছিলের শুরুতেই দুটি কালো গম্বুজ বহন করা হয়েছে। অংশগ্রহণকারীরা বহন করছেন বিভিন্ন নিশান (পতাকা)।

মিছিলে দুটি ঘোড়া ছিলো। যার মধ্যে একটিকে রঙ দিয়ে রক্তের রূপ দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ইমাম হোসেইন যখন কারবালায় যান, তখন ঘোড়াটি এক রকম থাকে, আবার যুদ্ধের শেষে রক্তাক্ত ঘোড়ার অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে।

তাজিয়া তৈরি করা হয়েছে ইমাম হোসেইনের সমাধির আদলে। একদল ছিলেন যাঁরা শোকের গান গাইতে গাইতে সামনের দিকে এগিয়েছেন। 

এ ছাড়া অনেকেই বুক চাপড়ে ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ বলে মাতম করেছেন। 

গায়ে রঙ লাগিয়ে কারাবালার সেই রক্তপাতের দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে মিছিলে।

কারবালার রক্তাক্ত স্মৃতির স্মরণে মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত নিজের দেহে ছুরি দিয়ে আঘাত করে রক্ত ঝরিয়ে মাতম করেন। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশের অনুরোধে গত কয়েক বছর ধরেই ছুরি দিয়ে মাতম করা হচ্ছে না।

হোসেনি দালান ইমামবাড়া থেকে তাজিয়া মিছিলটি শুরু হয়ে বকশীবাজার রোড, নিউমার্কেট হয়ে ধানমন্ডি লেকের ‘প্রতীকী কারবালা’ প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়।

এর আগে সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে যোগ দেন অনেকে। মূল তাজিয়া মিছিলে যোগ দিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে কালো কাপড় পড়ে হোসেনি দালানে আসতে থাকেন মানুষ।

নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা : নিরাপত্তা বিবেচনায় মিছিলে অংশ নিতে ইচ্ছুক আগত প্রত্যেককে পুলিশের তল্লাশি চৌকির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।

হোসেনি দালানের চারপাশে ছিলো কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী। পোশকধারী র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও বিপুল সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেছেন।

এদিকে, তাজিয়া মিছিল শুরুর পর থেকে মিছিলের সামনে ও পেছনে বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছিলো। যে সড়ক দিয়ে মিছিল গিয়েছে, পুরো রাস্তা ঘিরে নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছিলো। রাস্তার পাশের ভবনগুলোর রুফটপ থেকে পুলিশ সদস্যদের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে দেখা গেছে। প্রস্তুত ছিলো পুলিশের জলকামান ও সাজোয়া যানও।

পাশাপাশি নিরাপত্তার স্বার্থে আশুরার তাজিয়া মিছিলে দা, ছুরি, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি বহন নিষিদ্ধ করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। একইসঙ্গে আতশবাজি ও পটকা ফোটানোও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

ডিএমপি জানায়, তাজিয়া মিছিলকে কেন্দ্র করে অনেক সময়েই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। যা নগরবাসীর মনে আতঙ্ক ও ভীতি সৃষ্টিসহ জননিরাপত্তার প্রতি হুমকি হয়ে ওঠে। এ কারণে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

রাজধানীর পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জের বিবিকা রওজা, পুরানা পল্টন, মগবাজার, মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প ও মিরপুর-১১ নম্বরে বিহারি ক্যাম্পগুলোয় শিয়ারা আশুরা পালন করেছেন। এসব এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করে ডিএমপি।