সাহিত্য মেলার খবর জানেন না সাহিত্যিকরাই!

সাহিত্য মেলার খবর জানেন না সাহিত্যিকরাই!

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঙলার কাগজ ও ডন; বরগুনা : সুপরিচিত কবি-সাহিত্যিকদের বাদ দিয়েই বরগুনা জেলায় সাহিত্য মেলার আয়োজন হয়েছে বলে দাবি করেছে একটি পক্ষ।

জেলার একাধিক কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিকের অভিযোগ, তাঁদের আমন্ত্রণ না জানিয়ে লেখালেখি ও সাহিত্য কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন এমন অনেককেই ডেকে নিবন্ধন করিয়ে দায়সারাভাবে মেলার আয়োজন হয়েছে। এতে মেলার মূল লক্ষ্য অর্জিত হয় নি, বরং বরাদ্দের অর্থ বৃথাই খরচ হয়েছে।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রের তথ্যমতে, তৃণমূল পর্যায়ের কবি-সাহিত্যিকদের জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরতে ৩০টি জেলায় সাহিত্য সম্মেলন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। মেলার ব্যয় বাবদ প্রতি জেলায় ৫ লাখ করে মোট ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দও দেওয়া হয়।

বরগুনা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে মঙ্গলবার (পহেলা নভেম্বর) সকাল ৯টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ৫০ জন কবি-সাহিত্যিক ও লেখককে নিয়ে সাহিত্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রবন্ধ, পুঁথিপাঠ ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে মেলার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম দুপুর ১টার দিকে শেষ হয়।

এতে নাখোশ জেলার বেশ কয়েকজন কবি-সাহিত্যিকের মতে, যাঁদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, তাঁদের অধিকাংশই সাহিত্য কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত নন।

দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করা, একাধিক গ্রন্থের সম্পাদক ও জাতীয় দৈনিকে কলাম লেখক মর্তুজা হাসান সৈকত বলেন, ‘আমি যতটুকু খবর পেয়েছি, সাহিত্য মেলা বাস্তবায়ন কমিটি সর্বোচ্চ গোপনীয়তা বজায় রেখেছিলো মেলা নিয়ে। ফলে জেলার সাহিত্যকরা জানতেই পারেন নি যে, এ রকম একটা আয়োজন হতে যাচ্ছে। পাশাপাশি, মেলা বাস্তবায়ন কমিটি তাঁদের পছন্দের কিছু লোককে দিয়ে নিবন্ধন করিয়েছে। মূলত এই অংশটাই আজকের মেলায় অংশ নিয়েছে।’

তাঁর মতে, অনেকটা চুপিসারে মেলার আয়োজন সম্পন্ন করেছে জেলা প্রশাসন।

হাসান সৈকত আরও বলেন, ‘এ জেলা থেকেই উঠে এসেছেন দেশবরেণ্য কবি ও প্রাবন্ধিক মতিন বৈরাগী, বহুমাত্রিক শব্দসৈনিক কবি মোশতাক আল মেহেদী, কবি ও কথাসাহিত্যিক জহিরুল হক, সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত কবি ও প্রাবন্ধিক আখতারুজ্জামান আজাদ, কবি প্রান্তিক জসীম, পরমাণুকাব্য নামে কবিতার নতুন ধরন নিয়ে আসা কবি সুশান্ত পোদ্দার, কবি ও কথাসাহিত্যিক মাসুদ আলম, কবি তুহিন ওসমান, কবি ফরহাদ নাইয়া, অনুকাব্য লেখক রুদ্র রুহান, প্রাবন্ধিক আবদুর রহমান সালেহ, কবি শাওন মুতাইত, কবি সুলতান মাহমুদ, কবি মিজান হাওলাদার, কবি শুক্লা দেবনাথ, কবি জাকিয়া সুলতানা শিরিন, কবি ও গল্পকার আরেফিন সায়ন্তী, কবি বিপ্লব কুমার শীল, কবি জাফর ইদ্রিস, কবি ও প্রচ্ছদ শিল্পী আল নোমান, কবি বেলীন্দা তুরকান শাহ। তাঁদের অনেকেই বরগুনায় অবস্থান করেই সাহিত্যচর্চা করে যাচ্ছেন। অথচ মেলার বিষয়ে তাঁদের কাউকেই কিছু না জানিয়ে এমন কাঙাল টাইপের সাহিত্য মেলার আয়োজন করে রাষ্ট্রের এতোগুলোর টাকার অপচয় কেনো করা হলো?’

মেলা বাস্তবায়ন কমিটির অব্যবস্থাপনার কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘তাঁরা জেলার সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে প্রবন্ধ লেখার জন্য যে দুজন ব্যক্তিকে নির্বাচন করেছিলো, তাঁদের একজনের প্রবন্ধের মান এতোটাই খারাপ যে, বাংলা একাডেমির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেটিকে বাতিল করতে বাধ্য হন।’

লেখক ও কবি প্রান্তিক জসীম বলেন, ‘আমি মেলার আয়োজন সম্পর্কে কিছুই জানি না।’

মেলায় আমন্ত্রণ না পাওয়ার কথা জানান কবি সুশান্ত পোদ্দার।

কবি শাওন মুতাইত বলেন, ‘যাঁরা জীবনে একটা ছড়া, কবিতা, গল্প কিংবা প্রবন্ধও লিখেন নি মূলত তাঁদের নিয়েই সাহিত্য মেলার আয়োজন হয়েছে। এই মেলা ফলপ্রসূ হতে পারে না।’

এসব বিষয়ে জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বাংলা একাডেমি আমাদের কিছু গাইডলাইন দিয়েছে, আমরা তা অনুসরণ করেই মেলায় আমন্ত্রণ জানিয়েছি।’

বাংলা একাডেমির সংস্কৃতি বিভাগের উপপরিচালক এবং বাংলা একাডেমির পক্ষে সাহিত্য মেলার সমন্বয়ক ড. সায়মন জাকারিয়া মুঠোফোনে বলেন, ‘মেলার আয়োজনটাই মূলত তৃণমূলের কবি-সাহিত্যিকদের জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরার জন্য। সেখানে জেলার কবি-সাহিত্যিকরাই আমন্ত্রিত হবে। বরগুনায় যদি তেমন না হয়ে থাকে তবে তা দুঃখজনক। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’