সিলেটে মন্ত্রীর অনুষ্ঠানে ত্রাণ নিয়ে কাড়াকাড়ি। ‘লাঠিপেটা’ করে শান্ত করলো পুলিশ।

সিলেটে মন্ত্রীর অনুষ্ঠানে ত্রাণ নিয়ে কাড়াকাড়ি। ‘লাঠিপেটা’ করে শান্ত করলো পুলিশ।

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঙলা কাগজ; সিলেট : সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে কাড়াকাড়ির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিপেটা করে।

শনিবার (২১ মে) এমন ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণে মন্ত্রী সকালে নিজ নির্বাচনি এলাকায় আসেন। মন্ত্রীর ত্রাণ বিতরণের খবরে সকালে উপজেলা পরিষদের সামনে জড়ো হন হাজারও মানুষ। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাত্র ২ শ প্যাকেট ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, সকালে কয়েকজনের হাতে প্যাকেট তুলে দিয়ে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন মন্ত্রী ইমরান আহমদ। এপরপর তিনি অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন। মন্ত্রী চলে যাওয়ার পর ত্রাণ নিয়ে বনার্তদের মাঝে কাড়াকাড়ি ও হট্টগোল শুরু হয়। এ সময় পরিস্থিতি শান্ত করতে পুলিশ লাঠিপেটা করে।

ত্রাণ নিতে আসা কোম্পানীগঞ্জের বর্ণি এলাকার বাসিন্দা হাসমত আলী বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘ঘরে এক সপ্তাহ ধরে পানি। খাবারও নেই। মন্ত্রী ত্রাণ নিয়ে এসেছেন শুনে এখানে এসেছিলাম। কিন্তু ত্রাণ তো পাই-ইনি, উল্টো পুলিশের মার খেলাম।’

কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত চক্রবর্তী বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘ত্রাণের প্যাকেট সীমিত সংখ্যক। এ সময় উপস্থিত মানুষের মধ্যে হট্টগোল ও হাতাহাতি হয়েছে। পুলিশ তাঁদের শান্ত করেছে।’

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রীর ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানের জন্য আগের দিনই ১২০ জনের তালিকা করা হয়েছিলো। তাঁদের ত্রাণ নেওয়ার জন্য সকালে উপজেলা কমপ্লেক্সের সামনে আসার জন্য বলা হয়। কিন্তু সকালেই হাজারখানেক মানুষ সেখানে জড়ো হওয়ায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুসিকান্ত হাজং বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘আমরা আজকে ত্রাণ বিতরণের জন্য ১২০ জনের তালিকা করেছিলাম। তবু ২ শ প্যাকেট ত্রাণসামগ্রী রাখা হয়েছিলো। কিন্তু তালিকার বাইরেও প্রচুর মানুষ এসে যাওয়ায় একটু ঝামেলা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজকে মন্ত্রী ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন। যেহেতু মন্ত্রীর অনুষ্ঠান, তাই বেশি মানুষকে বলা হয় নি। কিন্তু আমাদের কাছে পর্যাপ্ত সংখ্যক ত্রাণ আছে। পর্যায়ক্রমে বন্যাকবলিত সবার কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে।’

এর আগে ত্রাণ বিতণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, ‘আমাদের পর্যাপ্ত সংখ্যক ত্রাণ আছে। ত্রাণ সামগ্রীর অভাব নেই। প্রশাসন ইতোমধ্যে ত্রাণ বিতরণ শুরু করেছে।’

বন্যার্তদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা নিশ্চিত থাকেন, আপনাদের কয়েকদিনের জন্য একটু কষ্ট করতে হবে। আমরা চেষ্টা করবো, কীভাবে আপনাদের কষ্ট কমানো যায়। আর পানি নেমে যাওয়ার পর আপনাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।’

গত ১১ মে থেকে ঢল ও অতিবৃষ্টিতে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলাগুলোর একটি। এই উপজেলার প্রায় সবকটি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়। এতে প্রায় ৫০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছেন। আর জেলায় মোট পানিবন্দি রয়েছেন ১৫ লাখ মানুষ।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘আমাদের হাতে এখনও ১ শ মেট্রিক টন চাল রয়েছে। আজকেও বিভিন্ন ইউনিয়নে ৮৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্ধ দিয়েছি। ইতোমধ্যে ৩০৫ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। নগদ অর্থও বিতরণ করা হচ্ছে।’