সেই নড়াইলেই ফেসবুকে ‘ধর্ম অবমাননার’ অভিযোগে হিন্দু বাড়িতে আগুন।

সেই নড়াইলেই ফেসবুকে ‘ধর্ম অবমাননার’ অভিযোগে হিন্দু বাড়িতে আগুন।

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঙলা কাগজ; নড়াইল : অধ্যক্ষকে লাঞ্ছনার পর ফেসবুকে একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে ধর্ম অবমাননার কথিত অভিযোগ তুলে সেই নড়াইলেই হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকটি বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

শুক্রবার (১৫ জুলাই) সন্ধ্যায় লোহাগড়ার দিঘলিয়া গ্রামের সাহা পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ‘গুলি ছুঁড়ে’ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে জানিয়ে লোহাগড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হারান চন্দ্র পাল বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘এখন সবকিছু স্বাভাবিক।’

নড়াইলের পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী কাজ করছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

পুলিশ পরিদর্শক হারান চন্দ্র জানান, ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসকে ঘিরে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক তরুণের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগের পর এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে।

তিনি বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বিক্ষুদ্ধ জনতা কয়েকটি হিন্দু বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। মন্দিরে ইট ছুঁড়ে। তারা একটি বাড়িতে আগুন দেয়। আমরা গিয়ে নিভিয়ে ফেলি এবং ফাঁকা গুলি করে ছত্রভঙ্গ করি।’

ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, যার ফেসবুক আইডির পোস্টকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তাকে পাওয়া যায় নি। তবে তার বাবা অশোক সাহাকে থানায় নেওয়া হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, আকাশ সাহা নামে এক কলেজ ছাত্রের ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে দিঘলিয়ায় শুক্রবার জুমার নামাজের পর থেকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তার গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে তাদের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করেন বিক্ষুব্ধ লোকজন।

বিকেলে উত্তেজনা আরও বাড়ে এবং সন্ধ্যায় তারা সাহা পাড়ার কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর করে। পরে টিনের একটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন রয়েছে।

দিঘলিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য প্রভাত কুমার ঘোষ বাঙলা কাগজ ও ডনকে জানান, আকাশ সাহার ফেসবুকে বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগকে কেন্দ্র করে উত্তেজিত জনতার বাড়িঘরে ভাঙচুর ও মন্দিরে হামলা করেছে। একটি বাড়িতে আগুন দিয়েছে।

ফেসবুককেন্দ্রিক আরেক পোস্টকে কেন্দ্র করে গত মাসে এক অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা পরানোর খবরে বেশ কিছুদিন থেকে আলোচনায় রয়েছে নড়াইল।

গত ১৭ জুন নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের একাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নিজের ফেসবুকে ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিজেপির বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মাকে প্রণাম জানিয়ে ছবিসহ একটি পোস্ট দেন। পরদিন এ নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হলে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস কলেজ শিক্ষক, ওই শিক্ষার্থীর বাবা ও কলেজ পরিচালনা পরিষদের কয়েকজন সদস্যকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কলেজ ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকে শিক্ষার্থীকে তাঁদের কাছে সোপর্দ করা হয়। পুলিশ সদস্যরা ওই শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস থেকে নিয়ে যেতে চাইলে উত্তেজিত ছাত্র ও বহিরাগতরা বাধা দেন। তখন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে বিষয়টি জানানো হয়। বিকেল চারটার দিকে শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাস এবং ওই শিক্ষার্থীকে কলেজের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষ থেকে বের করা হয়। নিচতলার কলাপসিবল গেটের সামনে আনার পর তাঁদের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় এসপি ও ডিসি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। 

শিক্ষক লাঞ্ছনার ওই ঘটনায় দুটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন ৫ জন।