শাসনগাছার ইয়াবা ব্যবসায়ী জুয়েলের দৌরাত্ম্য

শাসনগাছার ইয়াবা ব্যবসায়ী জুয়েলের দৌরাত্ম্য

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : কুমিল্লার শাসনগাছার ইয়াবা ডিলার জুয়েলের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। সে শাসনগাছা স্ট্যান্ড লিজ নিয়েছে বলে বা বলিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করিয়ে তার বাসায় নিয়ে ইয়াবার ফাঁদে ফেলে। তবে সে বুঝতে দেয় না যে, সে ইয়াবার ডিলার। সে বিভিন্নজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তার লোকদের মাধ্যমে ইয়াবা আনায়। অথচ তার নিজেরই এসব ইয়াবা সেসব ব্যক্তিদের কাছে দেওয়া থাকে। আর ইয়াবার আসরে বসিয়ে লুডুর জুয়ায় মানুষকে মত্ত করে ফেলে সে। তাতে দিনে দিনে মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় বিপুল অঙ্কের টাকা। পরে এক সময় একজন একজন করে বিদায় করে নতুন ব্যক্তিদের আনা হয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সবকিছু বুঝে ফেললে তাকে বাসায় আটকে রেখে মানসিক নির্যাতন করা হয়। এ ধরনের ক্ষেত্রে জুয়েলের দৌরাত্ম্য দিনদিন বেড়েই চলেছে। মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৮টা থেকে এক ব্যক্তি তার বাসায় চরম মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ওই মানসিক নির্যাতন চলে একটানা প্রায় রাত ১২টা পর্যন্ত।

অভিযোগের ব্যাপারে জানার জন্য বুধবার (১৮ অক্টোবর) জুয়েলের মুঠোফোনে কল দেওয়া হলেও সে ফোন রিসিভ করে নি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শাসনগাছা বাসস্ট্যান্ড থেকে শহরের দিকে যেতে এশিয়া বাস কাউন্টারের আগে কাশেম হোটেলের গলি দিয়ে ঢুকে একটু সামনে গিয়ে বাম দিকে যাওয়ার পর ডান দিকের গলি দিয়ে সামনের দিকে গিয়ে প্রথম একটি মুদি দোকানের ঠিক আগের বামদিকের গলি দিয়েই জুয়েলের বাসা। ওই গলি দিয়ে গেলে সোজা যে দুই তলা বাসাটি দেখা যায়, সেটিই জুয়েলের বাসা। আর গলি থেকে যে জানালাটি দেখা যায়, অর্থাৎ দ্বিতীয় তলায় ঢুকে হাতের বামপাশের কক্ষটিতেই জুয়েল মাদক এবং জুয়ার আড্ডা বসিয়ে থাকে। প্রথমে অপরিচিত কোনও লোক এলে তার সামনে ইয়াবা খাওয়া হয়। পরে লুডু খেলা হয়। এরপর ওই ব্যক্তিকে ইয়াবা খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়। সার্বিকভাবে ওই কক্ষটিতেই জুয়েল বেলা ১টা/২টা থেকে শুরু করে রাত ১১টা/১২টা পর্যন্ত মাদকের আসর বসিয়ে রাখে। 

খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, জুয়েল নিজেকে বাসস্ট্যান্ড লিজ নেওয়া ব্যক্তি হিসেবে দাবি করলেও আসলে স্ট্যান্ডটি লিজে রয়েছে অন্য এক ব্যক্তির। আর স্ট্যান্ড লিজ নেওয়ার কথা বলেই মূলত তার কয়েকজন লোকের মাধ্যমে জুয়েল তার বাসায় লোক নেওয়ায়। পরে কয়েকদিন টাকা-পয়সা খরচ করে জুয়েলের বিষয়গুলো জেনে ফেললে সে ওই ব্যক্তিকে নানান ধরনের হেনস্তা করে। যাতে ওই ব্যক্তি আর জুয়েলের বাসায় না যান।

আরও জানা গেছে, জুয়েলের দ্বিতীয় তলার সেই কক্ষের দেয়াল ছিদ্র করেও ইয়াবা রাখা হয়। এক্ষেত্রে ওই কক্ষে ঢুকে দক্ষিণ দিকের দেয়ালটির পলেস্তরার দিকে খেয়াল করলেই বিষয়টি বোঝা যাবে। আর তার ইয়াবার চালান প্রদানকারী ব্যক্তিদের মধ্যে একজন জামায়াতের লোকও রয়েছে। সেই ব্যক্তি প্রায় প্রতিদিন বিকেল বেলায় জুয়েলের বাসায় গিয়ে লুডু খেলে এবং ইয়াবা খায়।

বিভিন্ন অভিযোগ জমা হওয়ায় ইয়াবার ডিলার জুয়েলের ব্যাপারে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন ভুক্তভোগীরা। পাশাপাশি এলাকাবাসীও জুয়েলের অপকর্মে অতিষ্ট। কারণ সে তার বাসায় প্রায় সারাক্ষণই ওয়াজ এবং বিভিন্ন ভুয়া খবর উচ্চ শব্দে মোবাইলে বাজিয়ে থাকে। এর মাধ্যমে মূলত সে তার বাসায় যারা আসে, তাদেরকে বিব্রত করার চেষ্টা করে থাকে।

মাদকের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বাঙলার কাগজকে বলেছেন, কোনও মাদক ব্যবসায়ীকেই ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে।