শাবিপ্রবির মোস্তফা কামাল অক্সফোর্ডে

শাবিপ্রবির মোস্তফা কামাল অক্সফোর্ডে

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঙলার কাগজ; শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থী ড. মোস্তফা কামাল। পড়েছেন পদার্থবিজ্ঞানে। এখন গবেষণা করছেন বায়োমেডিক্যালে। কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে ক্যানসার নিয়েও করছেন মূল গবেষণা। আর তিনি এই গবেষণার কাজে করছেন বিশ্ববিখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যলয়ের অধীনে। অনার্সের স্বল্প সিজিপিএ নিয়ে স্বপ্ন পূরণের এই যাত্রা তাঁর সহজ ছিলো না।

সময়ের ব্যবধানে মোস্তফা কামালের পেছনে ছিলো হোঁচটের গল্পও। অনার্সে অধ্যয়নরত অবস্থায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন গান বাজনা কনসার্ট, সড়ক অলপনা, বাকস্টেজ ম্যানেজমেন্ট কাজে। জড়িয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতিতেও। এসব কিছু তাঁর একাডেমিক ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ২০০৮ সালে কোনও রকমে স্নাতক শেষ করেন মোস্তফা। পরবর্তীতে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আর মাস্টার্স করা সম্ভব হয় না তাঁর। উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী মোস্তফা হতাশা নিয়ে টেকনিক্যাল অফিসার হিসেবে যোগ দেন রেডিও ফুর্তিতে। কিন্তু তাঁর আগ্রহের জায়গা বরাবরই মেডিক্যাল ফিজিক্স ও কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তায়। এরপর এক পর্যায়ে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ২০১১ সালে কোরিয়ার চোনবুক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্সে ভর্তি হন। বিষয় ছিলো কম্পিউটার ভিশন ও মেশিন লার্নিং। এখান থেকেই শুরু তাঁর ঘুরে দাঁড়ানো। মাস্টার্সের পর স্পেনের ইউনিভার্সিটি অব রোভিরি আই ভার্জিলিতে ২০১৯ সালে বেস্ট পিএইচডি অ্যাওয়ার্ডসহ পিএইচডি সম্পন্ন করেন।

এরপর পোস্ট ডক্টরেট করেন স্পেনের ইউনিভার্সিটি অব বার্সেলোনায়। লন্ডনের কুইন্স ইউনিভার্সিটিতে কাজ করেন রিসার্চ ফেলো হিসেবে। এরপরেই ডাক পান বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধীনে ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সিনিয়র রিসার্চ সায়েন্টিস্ট বা রিসার্চ ফেলো হিসেবে। এ বছরের সেপ্টেম্বরে যোগ দিয়েছেন তিনি। কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার মডেল দিয়ে ইকোকার্ডিওগ্রাফিতে নবজাতকের জন্মগত হার্টের ত্রুটি শনাক্তের জন্য সেখানে এখন গবেষণা করছেন তিনি। এর আগে ব্রেস্ট ক্যানসার, স্কিন ক্যানসার, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে কোলন ক্যানসার নির্ণয়, আন্ডার ওয়াটার রোবোটিক্স অ্যান্ড অর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে সফলভাবে গবেষণা করেছেন। এসব গবেষণা প্রবন্ধ বিশ্ববিখ্যাত আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

মোস্তফা কামালের স্বপ্ন অক্সফোর্ডে অধ্যাপনা করার। মোস্তফার বাড়ি নাটোরের লালপুর উপজেলার কুজিপুকুর গ্রামে। বাবা মরহুম আবদুল আজিজ সরকার ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। ৯ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট মোস্তফা। অক্সফোর্ডে যোগদানের পর নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে ড. মোস্তফা কামাল বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, এ যেনো আজন্ম লালিত আকাশ-ছোঁয়া গল্পের মতো। নাটোরের সেই কুজিপুকুর এবং শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পৌঁছানোর স্মৃতি বারবার মনে পড়ে। এর পেছনে রয়েছে অনেক পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং বারবার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। এই দীর্ঘ যাত্রায় নিজের পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধবরা বিভিন্ন ভূমিকায় সব সময় পাশে ছিলেন। 

‘তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’