রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা : কমলাপুরে ঢাবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর অবস্থান।

রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা : কমলাপুরে ঢাবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর অবস্থান।

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : বাংলাদেশ রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা পরিবর্তনে এবং সহজ ডটকম দ্বারা যাত্রী হয়রানির প্রতিবাদে ৬ দফা দাবিতে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে টানা ৮ দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি।

যদিও শুরুতে তিনি অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি গণস্বাক্ষর কর্মসূচি করেন, কিন্তু পুলিশের ১ সদস্যের বাধার মুখে তিনি গণস্বাক্ষর বন্ধ রেখেছেন। তবে ইতোমধ্যে রনির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) থেকে টানা ৮ দিন ধরে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন রনি। পরে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের ছাত্রী জয়া মণ্ডল এবং আইভী আক্তার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র মোহাম্মদ মাহিন রুবেল ও কাজী আশিকুর রহমান, গর্ভমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হোম ইকোনমিক্সের ফারহানা রাহাসহ আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী।

এদিকে গত মঙ্গলবার (১২ জুলাই) কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে মহিউদ্দিনদের কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়েছেন ডাকসু’র সাবেক জিএস ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। এদিন মহিউদ্দিনরা রেলের কিছু কর্মকর্তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে দুর্নীতি ভেঙে দেওয়ার আহ্বান জানান।

যতোদিন পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা পরিবর্তন না হচ্ছে, ততোদিন এখানে অবস্থান করে যাবেন জানিয়ে মহিউদ্দিন রনি বলেন, ‘আমি রেলওয়ের সমস্যার শেষ দেখতে চাই। আল্লাহ ভরসা, দৃঢ়চিত্তে বলছি, সমাধান করেই তবে বাড়ি ফিরবো। শুরুতে আমি একা দাঁড়ালেও এখন আমার পাশে আমার কয়েকজন ভাইবোন দাঁড়িয়েছে। তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে এখান থেকে সরে যেতে আমাকে হুমকিও দেওয়া হচ্ছে, তবে আমরা অনড়।’

জানা গেছে, গত ১৩ জুন বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট থেকে ঢাকা-রাজশাহী রুটের ট্রেনের আসন বুক করার চেষ্টা করেন মহিউদ্দিন। কিন্তু মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা সংস্থা বিকাশ থেকে ভেরিফিকেশন কোড (যাচাইকরণ কোড) দিয়ে তাঁর পিন কোড (গোপন কোড) ছাড়াই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়। মহিউদ্দিন ট্রেনের কোনও আসন পান নি, এমনকি কেনো টাকা নেওয়া হলো, সে বিষয়ে কোনও ডকুমেন্টও (রশিদ) তাঁকে দেওয়া হয় নি। সেদিন কমলাপুর রেলস্টেশনে সার্ভার কক্ষে অভিযোগ জানালে, সেখান থেকে তাঁকে ‘সিস্টেম ফল’ করার কথা বলা হয় এবং ১৫ দিনের মধ্যে টাকা না পেলে আবার যেতে বলা হয়। কিন্তু ওই মুহূর্তে ওই কক্ষে থাকা কম্পিউটার অপারেটর ৬৮০ টাকার আসন ১ হাজার ২ শ টাকায় বিক্রি করেন বলে অভিযোগ মহিউদ্দিনের।

পরে এ বিষয়ে ১৪ ও ১৫ জুন দুইবার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন তিনি। কিন্তু সেখান থেকে কোনও জবাব বা শুনানির জন্য ডাক আসে নি। এমন পরিস্থিতিতে ৭ জুলাই থেকে তিনি কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে অবস্থান ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু করেন। অবস্থানের তৃতীয় দিনে ৯ জুলাই পুলিশ সদস্যরা তাঁকে বাধা দেন। তখন থেকে তিনি গণস্বাক্ষর বন্ধ রেখে দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই শুধু অবস্থান কর্মসূচি করছেন। তবে প্রথম তিনদিনে মহিউদ্দিন শ খানেক মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন। রেলের অব্যবস্থাপনা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে রিট করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেই জানান মহিউদ্দিন।

তাঁর সঙ্গে অবস্থান করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জয়া মণ্ডল বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, আমরা যাঁরা রেলপথে যাতায়াত করি, প্রায় সবাইকে এসব সমস্যার মুখোমুখী হতে হচ্ছে। কোনোভাবেই যেনো এর সমাধান হচ্ছে না। মহিউদ্দিন রনি ভাইয়ার সঙ্গে এ সংগ্রামে যুক্ত হতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। সমস্যার সমাধান নিয়ে তবেই আমরা ঘরে ফিরবো।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মাহিন রুবেল বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘মহিউদ্দিন রনি আমাদেরই বন্ধু। রেলওয়ে ও সহজের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে সে ৭ তারিখ থেকেই আন্দোলন শুরু করে। এর মধ্যে ঈদের আগের দিন ৯ জুলাই তাঁকে পুলিশ ধাক্কা দেয়। বিষয়টি আমার গায়েও লাগছে। এজন্য ঈদের পরদিন অর্থাৎ ১১ জুলাই থেকে আমিও তাঁর সঙ্গে এসে এখানে অবস্থান করছি।’

অবস্থানকারীদের ৬ দফা দাবি হলো :

১. টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সহজ ডটকম কর্তৃক যাত্রী হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। হয়রানির ঘটনায় তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

২. যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধ করতে হবে।

৩. অনলাইন-অফলাইনে টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সর্বসাধারণের সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

৪. যাত্রী চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

৫. ট্রেনের টিকিট পরীক্ষক ও তত্ত্বাবধায়কসহ অন্যান্য দায়িত্বশীলদের কর্মকাণ্ড সার্বক্ষণিক মনিটর, শক্তিশালী তথ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে রেল সেবার মান বৃদ্ধি করতে হবে।

৬. ট্রেনে ন্যায্য দামে খাবার বিক্রি, বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।