রপ্তানি আয় কমলেও বেড়েছে রেমিট্যান্স

রপ্তানি আয় কমলেও বেড়েছে রেমিট্যান্স

বিশেষ প্রতিবেদক, কালাম আঝাদ, বাঙলার কাগজ ও ডন : একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম মূল ভিত্তি হচ্ছে রপ্তানি ও প্রবাসী আয়। কারণ আমদানি ব্যয় মেটাতে ডলারের প্রয়োজন, আর এই ডলার আসে রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স (প্রবাসী আয়) থেকেই। যে দেশের রপ্তানি ও প্রবাসী আয় যতো বেশি, সে দেশের রিজার্ভও ততো বেশি। বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্প বিশ্বজুড়ে দ্বিতীয় আর ১ কোটিরও বেশি মানুষ প্রবাসে থেকে আমাদের অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রাখছেন। এই যখন অবস্থা, তখন সদ্য শেষ হওয়া মার্চ মাসে তুলনামূলকভাবে ভালো পরিমাণে প্রবাসী আয় এসেছে দেশে। তবে বিপরীতে রপ্তানি আয় কমেছে কিছুটা।

প্রবাসী আয় বেড়েছে : ব্যাংকের মাধ্যমে আসা রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় আবারও ২ শ কোটি (২ বিলিয়ন) ডলার ছাড়িয়েছে। বিদায়ী মার্চ মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ২০১ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। এর আগে গত বছরের জুলাই ও আগস্টে প্রবাসী আয় ২ শ কোটি ডলার ছাড়িয়েছিলো। এরপর আর ২ শ কোটি ডলারের ঘর অতিক্রম করতে পারে নি রেমিট্যান্স। প্রবাসী আয় সংক্রান্ত পরিসংখ্যান নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক আজ রোববার (২ এপ্রিল) হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। এতেই এক মাসে ২ শ কোটি ডলারের বেশি প্রবাসী আয় আসার কথা জানা গেছে।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, মার্চ মাসে বেশকিছু ব্যাংক নির্ধারিত দামের তুলনায় বেশি দামে প্রবাসী আয় দেশে নিয়ে আসে। এর প্রভাব পড়েছে প্রবাসী আয় আসার চিত্রে। ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয়ে ডলারপ্রতি সর্বোচ্চ ১০৭ টাকা দাম দিতে পারবে বলে নির্ধারণ করা আছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, মার্চ মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ২০১ কোটি ৭৬ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ বেশি। আর ফেব্রুয়ারির তুলনায় আয় বেশি এসেছে ২৯ দশমিক ২৯ শতাংশ।

গত ফেব্রুয়ারিতে ১৫৬ কোটি ১২ লাখ মার্কিন ডলারের প্রবাসী আয় দেশে এসেছিলো। এই আয় জানুয়ারির তুলনায় ৩৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার বা প্রায় ২০ শতাংশ কম ছিলো। জানুয়ারিতে প্রবাসী আয় এসেছিলো প্রায় ১৯৬ কোটি ডলার। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির চেয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসী আয় বাড়ে ৬ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এসেছিলো ১৪৯ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের প্রবাসী আয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, মার্চ মাসে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে আসে ৪৫ কোটি ৬১ লাখ ডলার, সিটি ব্যাংকের মাধ্যমে আসে ১৫ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ও পূবালী ব্যাংকের মাধ্যমে ১২ কোটি ২৩ লাখ ডলার। এরপরই সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় আসে ১০ কোটি ৭৫ লাখ ডলার, আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ৯ কোটি ৮৭ লাখ ডলার এবং অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে ৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

প্রবাসী আয় সংগ্রহের শীর্ষ তালিকায় যোগ হয়েছে সোস্যাল ইসলামী ও আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংকের নাম।

রেমিট্যান্স ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠাতে উৎসাহিত করতে সরকার প্রণোদনার হার দুই শতাংশ থেকে বাড়িয়ে এখন আড়াই শতাংশ দিচ্ছে।

সামনে বৈশাখ ও দুটি ঈদ রয়েছে। উৎসের সময় প্রবাসী আয় বেড়ে যায়। ফলে চলতি মাসেও রেমিট্যান্সে রেকর্ড হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

রপ্তানি আয় কমেছে : অপরদিকে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় গত মার্চে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ২ দশমিক ৪৯ শতাংশ কমে ৪ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে বলে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’র (ইপিবি) প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে।

মার্চে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৫ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলার। এক বছর আগে এই লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার। 

এর আগে ফেব্রুয়ারিতে দেশের প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা আয়কারী- তৈরি পোশাকের চালান বিশ্ববাজারে গত বছরের তুলনায় কিছুটা ভালো গেলেও তা ছিলো একটানা এর আগের তিন মাসের তুলনায় কম। এক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারিতে বছরওয়ারি হিসেবে পণ্য রপ্তানি ৭ দশমিক ৮১ শতাংশ বেড়ে ৪ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলারের হলেও এর আগের তিন মাস ছিলো পাঁচ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।