রাজশাহীতে ঘুষের ১০ লাখ টাকাসহ কর কর্মকর্তা হাতেনাতে আটক

রাজশাহীতে ঘুষের ১০ লাখ টাকাসহ কর কর্মকর্তা হাতেনাতে আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঙলার কাগজ ও ডন; রাজশাহী : ঘুষের ১০ লাখ টাকা গ্রহণের সময় মহিবুল ইসলাম ভুঁইয়া নামে রাজশাহী আয়কর বিভাগের এক কর্মকর্তাকে হাতেনাতে আটক করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) বেলা ১১টায় দুদক কর্মকর্তারা রাজশাহী কর কমিশনারের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে তাঁকে আটক করেন। এ সময় দুদক ও আয়কর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আটক কর্মকর্তা হলেন রাজশাহী কর কমিশনারের কার্যালয়ের সার্কেল-১৩ (বৈতনিক)-এর উপ-কর কমিশনার।

এ বিষয়ে রাজশাহী কর কমিশনার শাহ আলী সাংবাদিকদের বলেন, অভিযানের বিষয়টি দুদকের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক তাঁকে জানিয়েছিলেন এবং সহযোগিতা চেয়েছিলেন। তিনি সব ধরনের সহযোগিতার কথা জানিয়ে দুদক কর্মকর্তাদের তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে বলেন। এরপর অফিসে আর কী হয়েছে তা তিনি জানেন না বলে দাবি করেন। 

কর কর্মকর্তা মহিবুল ইসলামকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি শুনেছেন জানিয়ে কর কমিশনার বলেন, দুদক একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। এটা নিয়ে কোনো আপত্তি নেই। এ বিষয়টি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে জানানো হয়েছে। বোর্ড থেকে এখন যে ধরনের নির্দেশনা আসবে সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। 

এর আগে আজ বেলা ১১টার দিকে দুদক কর্মকর্তারা উপ-কর কমিশনার মহিবুল ইসলামের কক্ষে অভিযান চালান। এ সময় আয়কর অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ওই কর্মকর্তার কক্ষের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। সেখানে দুদক কর্মকর্তা ও আয়করের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। 

বেলা আড়াইটার পর পুলিশের সহায়তায় দুদক কর্মকর্তারা মহিবুল ইসলামকে আটক করে নিয়ে যান। ওই কর্মকর্তাকে যখন বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন তাঁর গলায় আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। দুদকের রাজশাহী বিভাগীয় এবং সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের নয়জন কর্মকর্তা এ অভিযান পরিচালনা করেন বলে জানা গেছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আয়কর অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, অভিযানের সময় দরজা বন্ধ করে তাঁকে মারধর করা হচ্ছিল। চিৎকার শুনে তাঁরা গিয়ে জানালা দিয়ে এ দৃশ্য দেখেন। এ সময় অফিসের সবাই মনে করেন, বাইরে থেকে সেবা নিতে আসা কোনো লোকজন তাঁকে মারধর করছেন। 

তিনি আরও বলেন, কারণ, দুদক কর্মকর্তারা সবাই সাধারণ পোশাকেই ছিলেন। তাই দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। তারপর কর্মকর্তারা ‘দুদক’ লেখা জ্যাকেট পরলে তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত হন সবাই। এর মধ্যেই রাজপাড়া-থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে চলে আসে।

অভিযান শেষে সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাজশাহীর মাদারল্যান্ড ইনফার্টিলিটি সেন্টার ও হাসপাতালের মালিক ডা. ফাতেমা সিদ্দিকা দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগ করেন, কর কর্মকর্তা মহিবুল ইসলাম তাঁর কাছে ঘুষ দাবি করছেন। চাহিদামতো ঘুষ না দিলে তিনি মোটা অঙ্কের করারোপ করার ভয় দেখাচ্ছেন।’ 

তিনি বলেন, ডা. ফাতেমা দুদককে জানান, তাঁর কাছে ৬০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার কথা হয়েছে। প্রথম কিস্তিতে মঙ্গলবার ১০ লাখ টাকা দেওয়া হবে। সে অনুযায়ী এদিন সকালে ফাতেমা সিদ্দিকা তাঁর স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে মহিবুল ইসলামের দপ্তরে যান এবং ঘুষের ১০ লাখ টাকা দেন। টাকা নিয়ে মহিবুল ইসলাম তা ড্রয়ারে রাখেন। তখন দুদক কর্মকর্তারা সেখানে গিয়ে টাকা উদ্ধার করেন।’ এ ব্যাপারে মহিবুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুদক আইনে মামলা করা হবে বলেও জানান তিনি। 

আয়কর কর্মকর্তা মহিবুল ইসলামকে মারধরের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা মারধর করিনি। আয়কর অফিসের কর্মীরাই রুমে ঢুকে আমাদের ওপর আক্রমণ করেন। তখন আমরা দরজা বন্ধ করে দিই। তারপর তাঁরা দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে আক্রমণ করেন। মারামারি নয়, ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। এতে মহিবুল ইসলামের গলায় একটা আঁচড় লেগেছে। ধস্তাধস্তির কারণে আমাদেরও তিনজন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।’ 

আটক কর কর্মকর্তা মহিবুল ইসলামকে পুলিশের সহায়তায় দুদকের গাড়িতে তোলার সময় তিনি সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, ডা. ফাতেমা সিদ্দিকার ব্যাংকে যে পরিমাণ টাকা আছে তিনি তার চেয়েও বেশি টাকার জমি কিনেছেন। তাঁর ২৬ কোটি টাকার আয়করের গড় মিল আছে। এ জন্য তাঁর কাছ থেকে আয়কর আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছিল। এ জন্য তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। 

তিনি আরও দাবি করেন, অভিযানের সময় ডা. ফাতেমা সিদ্দিকাও ছিলেন। তিনি টাকা এনে রেখেছেন। আর ডা. ফাতেমা যখন আসেন, তখন তিনি অফিসের ভেতরে ছিলেন না। পরে তাঁকে অফিসের বাইরে থেকে জোরপূর্বক কক্ষের ভেতরে ঢোকানো হয়েছে।

এ বিষয়ে আয়কর অফিসেই সাংবাদিকেরা ডা. ফাতেমা সিদ্দিকার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। তবে তিনি কোনো কথা বলেন নি।