মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের বিশেষ নজর

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের বিশেষ নজর

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : কোভিড মহামারি এবং যুদ্ধের প্রভাবে এমনিতেই দেশের মূল্যস্ফীতি লাগামছাড়া। এর মধ্যে নতুন ‘অনুঘটক’ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকা হরতাল-অবরোধ। ফলে জাতীয় নির্বাচনের আগে এসে মূল্যস্ফীতি কমাতে বিশেষ নজর দিতে হচ্ছে সরকারকে। এরই মধ্যে নানা ধরনের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে; বিশেষ করে খাদ্য সহায়তা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এদিকে শুধু সহায়তা বাড়ানো নয়, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে নিয়ে আসতে কাজ করছে সরকার।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, চলতি অর্থবছরে গত ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত খোলাবাজারে বিক্রি (ওএমএস) ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মতো প্রকল্পগুলোর আওতায় ১২ লাখ ৯২ হাজার টন চাল ও গম বিতরণ করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে তা ছিলো সাড়ে ১০ লাখ টন।

জানা গেছে, বেশ কয়েকটি প্রকল্পের আওতায় খাদ্যশস্য বিতরণ দ্রুত বেড়েছে। এটি জুলাই থেকে নভেম্বরে ছিলো ১ লাখ ৬৪ হাজার টন। ১ বছর আগে তা ছিলো ২৭ হাজার ৬৫৮ টন।

সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশের বাজারগুলোর চিত্র লক্ষ্য করে দেখা গেছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আগের চেয়ে বেশ কমেছে। এক্ষেত্রে মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। এমন কঠোর অবস্থা বজায় থাকলে নিত্যপণ্যের দাম আরও কমবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

অপরদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, চাপ সামলাতে রাজধানীর ৩০টি স্থানে টিসিবির পণ্য বিক্রির কার্যক্রম চলছে। প্রতি জায়গায় ৩ শ জনকে টোকেন দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের কাছেই কেবল পণ্য বিক্রি করেন টিসিবির ডিলাররা। একেকজন ক্রেতা টিসিবির ট্রাক থেকে ২ কেজি করে মসুর ডাল, আলু ও পেঁয়াজ এবং ২ লিটার সয়াবিন তেল কিনতে পারেন। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫০ টাকা, আলু ৩০ টাকা ও মসুর ডাল ৭০ টাকায় এবং প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১ শ টাকায় বিক্রি হয়।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে সরকারি ও বেসরকারিভাবে চাল আমদানি হয় নি। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যে জানা যায়, গত অর্থবছরে চাল আমদানি হয়েছিলো ১০ লাখ ৫৫ হাজার টন। এর মধ্যে সরকারের আমদানি ছিলো ৬ লাখ ৩৩ হাজার টন।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ দেশের মানুষকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে হবে এবং আমরা সে চেষ্টাই করে যাচ্ছি। বৈশ্বিক কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ে ভীষণ দুঃসময় পার করতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী গরিব-দুঃখী, অসহায় মানুষকে যাঁরা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন, তাঁদের কথা বিবেচনা করে ১ কোটি ফ্যামিলি কার্ড অর্থাৎ ৫ কোটি মানুষকে কমমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বাংলাদেশে যে পরিমাণ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে, তার চেয়েও বেশি মানুষকে সরকার ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রয় করছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি ঝুঁকি তৈরি করছে। মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য পূরণে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি কমলেও বাংলাদেশে কমে না। এর কারণ মুষ্টিমেয় কয়েকটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আমদানি সীমাবদ্ধ থাকা। ফলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে লক্ষ্য ঠিক করলেও লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয় না। আগে নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করলেও এবার রাজনীতির সঙ্গে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়াচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, ভোটের আগেই নিত্যপণ্যের দাম আরও কমাতে উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে।