দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ে সুরঞ্জিতের এপিএস ফারুক জড়িত : পুলিশ

দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ে সুরঞ্জিতের এপিএস ফারুক জড়িত : পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : ঢাকার আদালত থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় প্রয়াত সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের এপিএস ওমর ফারুক তালুকদার জড়িত ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। ছয়দিন আগে তাঁকে গ্রেপ্তার করে দুই দফায় চারদিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) বলেন, ঢাকার আদালত থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেল ও মোজাম্মেল হোসেনকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ওমর ফারুকের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। ওমর ফারুক পালিয়ে যাওয়া জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেলের বোনকে বিয়ে করেছেন। ঘটনার আগে-পরের প্রযুক্তিগত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ওমর ফারুক আবু সিদ্দিক সোহেল ও মোজাম্মেল হোসেনের স্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আদালত প্রাঙ্গণ থেকে এই দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় তাঁর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

তবে পুলিশের এমন অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন ওমর ফারুকের আইনজীবী মো. আবদুল আওয়াল। তিনি আজ রাতে বলেন, ওমর ফারুক তালুকদার পেশায় একজন আইনজীবী। আদালত থেকে যেদিন দুই জঙ্গি পালিয়ে যান, সেদিন তিনি সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে মামলা পরিচালনা করেন। অবশ্য আবদুল আওয়াল বলেন, চলতি বছর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেলের বোন তানজিলা আফরোজকে (জাহান) বিয়ে করেন ওমর ফারুক। বিয়ে করলেও আবু সিদ্দিক সোহেলের সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ ছিল না। হয়রানি করার জন্য পুলিশ ওমর ফারুককে এই মামলায় গ্রেপ্তার করেছে।

গত ২০ নভেম্বর ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতের প্রধান ফটকের সামনে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেল ও মোজাম্মেল হোসেনকে ছিনিয়ে নেন তাঁদের সঙ্গীরা। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে পুলিশ। পুলিশ ও আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার মামলায় এখন পর্যন্ত ওমর ফারুক ও তাঁর স্ত্রী তানজিলাসহ ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা সবাই এখন কারাগারে আছেন।

ফারুকের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে যা বলছে পুলিশ :
প্রয়াত সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের সাবেক এপিএস ওমর ফারুক তালুকদার ও তাঁর স্ত্রী তানজিলাকে গত ২০ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন ওমর ফারুককে আদালতে তুলে ১৫ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে। পুলিশের পক্ষ থেকে সেদিন লিখিতভাবে আদালতের কাছে দাবি করা হয়, দুর্নীতির মামলায় ২০১২ সালে ওমর ফারুক যখন কারাগারে ছিলেন, তখন তিনি জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েন। আবু সিদ্দিকের বোনকে বিয়ে করে আনসার আল ইসলাম নামের সংগঠনকে নানাভাবে সহযোগিতা করেন। আইনজীবী পেশার আড়ালে তিনি জঙ্গিদের সহযোগিতা করেছেন। আদালত থেকে শ্যালক আবু সিদ্দিককে ছিনিয়ে নিতে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেন। ওমর ফারুকের মুঠোফোনের খুদে বার্তা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, তাঁর প্রথম স্ত্রী ওমর ফারুককে জঙ্গি আখ্যায়িত করেছিলেন।

চার দফা রিমান্ড শেষে পুলিশের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে আদালতকে বলা হয়েছে, ওমর ফারুক আবু সিদ্দিকের স্ত্রী শিখার সঙ্গে ময়মনসিংহে যান। তাঁর সঙ্গে নানা বিষয়ে পরামর্শ করেন। আবার আদালত চত্বরেও অপর পলাতক জঙ্গি মোজাম্মেলের স্ত্রীর সঙ্গে ওমর ফারুক কথা বলেন।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, ওমর ফারুক কীভাবে দুই জঙ্গিকে পালাতে সহযোগিতা করেছেন, সে ব্যাপারে আবু মোহাম্মদ হোসাইন (জঙ্গি মোজাম্মেলের বাবা) সাক্ষী হিসেবে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ওমর ফারুক ময়মনসিংহে গিয়ে তাঁর মেয়ে শিখা এবং মোজাম্মেলের স্ত্রী তৃষ্ণার সঙ্গে কথা বলেন।

পলাতক দুই জঙ্গির অবস্থান কোথায় জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তাঁদের ধরার চেষ্টা চলছে।

তবে ওমর ফারুকের পক্ষে তাঁর আইনজীবী লিখিতভাবে আদালতে বলেছেন, ওমর ফারুকের সাবেক স্ত্রীর মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে হয়রানি করার জন্য তাঁর মক্কেলকে মামলায় জড়ানো হয়েছে।

২০১২ সালের ৯ এপ্রিল তৎকালীন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস ওমর ফারুক, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক ইউসুফ আলী মৃধা ও রেলওয়ের কমান্ড্যান্ট এনামুলকে বহনকারী একটি গাড়ি বিজিবি সদর দপ্তরে ঢুকিয়ে দেন গাড়িচালক আজম। ওই গাড়ি থেকে একটি বস্তায় ভরা ৭০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হলে রেলমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান সুরঞ্জিত।

ওই সময় রেলের ১৩টি ক্যাটাগরিতে ১ হাজার ৬৯ জন কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। উদ্ধার হওয়া টাকার উৎস সম্পর্কে দুদক অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধানে ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের সন্ধান পাওয়ায় ওই বছরের ১৪ আগস্ট রমনা থানায় মামলা করে দুদক। ওই মামলায় ২০১৭ সালে ওমর ফারুক তালুকদারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত । একই সঙ্গে তাঁকে ১ কোটি ২৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।