বাংলাদেশে বড় মার্কিন বিনিয়োগ চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশে বড় মার্কিন বিনিয়োগ চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

বাসস : প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা মার্কিন বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইল এবং ফার্মাসিউটিক্যালসসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ তাঁদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রদানের প্রস্তাব দিতে পেরে সন্তুষ্ট।

তিনি বলেন, ‘আমি মার্কিন বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য শক্তি, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইল, ওষুধ, ভারি যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক সার, আইসিটি, সামুদ্রিক সম্পদ, জাহাজ নির্মাণ, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরিতে বিনিয়োগের জন্য আমন্ত্রণ জানাই।’

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানস্থলের হোটেলে ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল আয়োজিত উচ্চ-স্তরের পলিসি গোলটেবিলে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি বলেন, বাংলাদেশের উদার বিনিয়োগ নীতি রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বিদেশি বিনিয়োগ সুরক্ষা, কর অবকাশ, রয়্যালটির রেমিট্যান্স, অনিয়ন্ত্রিত প্রস্থান নীতি এবং পুরোপুরি প্রস্থানের সময় লভ্যাংশ ও মূলধন নিয়ে যাওয়ার সুবিধা।

বাংলাদেশে বিভিন্ন স্থানে ১ শটি ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড)’ এবং বেশ কয়েকটি হাইটেক পার্ক স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে ৬ লাখেরও বেশি ফ্রিল্যান্সিং আইটি পেশাদার রয়েছেন। ফলে বাংলাদেশ আইটি বিনিয়োগের জন্য সঠিক গন্তব্য।

তিনি বলেন, তা ছাড়া, প্রতিযোগিতামূলক মজুরিতে দক্ষ মানবসম্পদ বাংলাদেশে একটি অতিরিক্ত সুবিধা। এমনকি যদি প্রয়োজন হয়, আমরা মার্কিন বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি ডেডিকেটেড ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের’ প্রস্তাব করতে পরলে খুশি হবো।

তিনি আস্থা প্রকাশ করে বলেন, ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আঞ্চলিক সংযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় অগ্রগামী এবং বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক কেন্দ্র হওয়ার অভূতপূর্ব সম্ভাবনা প্রদান করেছে।

‘ভারত, চীন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ ৪ বিলিয়ন মানুষের সম্মিলিত বাজারের মাঝখানে রয়েছে,’ তিনি বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী নেতাদের সমাবেশে বলেন।

‘প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবন হচ্ছে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চাবিকাঠি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এভাবে বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক, তৃতীয় বৃহত্তম সবজি উৎপাদনকারী, ৪র্থ বৃহত্তম ধান উৎপাদনকারী এবং বিশ্বের ৫ম বৃহত্তম অভ্যন্তরীণ মৎস্য উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হয়েছে।

‘বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে তাঁর প্রতিবেশি দেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বৈশ্বিক সমমনা দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক বিষয়গুলো চালিয়ে যাবে। আমরা ক্রমাগত আমাদের ভৌত, আইনি এবং আর্থিক অবকাঠামো উন্নত করছি এবং দেশে যোগাযোগ উন্নত করছি,’ বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা বহুমুখী সেতুর সমাপ্তি অভ্যন্তরীণ এবং আঞ্চলিক সংযোগ উভয়ই উন্নত করেছে, যেখানে ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্পটি ২০২২ সালের ডিসেম্বরে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা দ্রুত অভ্যন্তরীণ গতিশীলতা যোগ করবে।

‘বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে এলডিসি মর্যাদা থেকে স্নাতক হতে চলেছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা এবং রপ্তানি বাস্কেট বাড়ানোর জন্য বিশ্বের সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর পর্যাপ্ত সহায়তা প্রয়োজন।

‘আমি নিশ্চিত যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই চ্যালেঞ্জিং প্রচেষ্টায় আমাদের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশীদার হতে পারে,’ বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার দেশে শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে। আইএলও রোডম্যাপ উদ্যোগ মোকাবেলা করার জন্য কর্মের একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা এবং সময়রেখা প্রদান করে এবং শ্রম খাতে প্রতিকারের পরামর্শ দেয়।

তাঁর সরকার এই সেক্টরে ক্রমাগত উন্নতির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে পর্যাপ্তভাবে নিযুক্ত রয়েছে। মার্কিন সরকার শ্রম ইস্যুতে ৩+৫+১ প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে প্রতিনিধিত্ব করছে, উল্লেখ করেন তিনি।