বাণিজ্যমেলায় পণ্য কিনে কেউ প্রতারিত হবে না : প্রতিমন্ত্রী

বাণিজ্যমেলায় পণ্য কিনে কেউ প্রতারিত হবে না : প্রতিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : বাণিজ্যমেলায় কোনও ক্রেতা পণ্য কিনে প্রতারণা বা হয়রানির শিকার হবে না বলে নিশ্চয়তা দিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। ব্যবসায়ীদের কেউ প্রতারণার আশ্রয় নিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

শনিবার (২০ জানুয়ারি) রাজধানীর পূর্বাচলে ২৮তম বাণিজ্যমেলার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান। 

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামীকাল (রবিবার) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণিজ্যমেলার উদ্বোধন করবেন। এরপরই শুরু হবে মেলার বেচাকেনা। 

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা বলা হলেও এখানে উচ্চ দামে নিম্নমানের পণ্য বিক্রি করা হয়, এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ থাকবে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, মেলায় কোনো দর্শনার্থী বা ক্রেতা পণ্য কিনে প্রতারণা কিংবা হয়রানির শিকার হবেন না। এ নিশ্চয়তা দেওয়া হবে। এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সোচ্চার থাকবে। পাশাপাশি অভিযোগ বক্স ও হেল্পডেস্ক থাকবে। অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মেলায় পণ্য বিক্রি মূল উদ্দেশ্য নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, রপ্তানি বাড়ানোর মূল কৌশল হচ্ছে, পণ্যের বাজার সৃষ্টি করা। এ আয়োজনের মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে স্থানীয় পণ্যের পরিচিতি, প্রচার, প্রসার, বিপণন ব্যবস্থা তুলে ধরা হবে। এটি মেলার মূল লক্ষ্য। মেলায় অনেক ইলেকট্রনিক পণ্য ব্যবসায়ীরা অংশ নিয়েছেন। ভবিষ্যতে হস্তশিল্প, ফার্নিচার, হিমায়িত খাদ্য পণ্যকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

সরকার ই-কমার্সের প্রতি জোর দিচ্ছে জানিয়ে আহসানুল ইসলাম বলেন, ই-কমার্সকে গতিশীল করা হবে। যেন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হয়। এ খাতের ব্যবসায় যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে সেগুলোর নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া হবে। একই সঙ্গে রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে তৈরি পোশাকের মতো চামড়া, চামড়াজাত পণ্য ও পাট খাতকে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।

অন্য বছরের তুলনায় এবার ঢাকা থেকে মেলায় যেতে সহজ হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফার্মগেটে মেট্রোরেলের সঙ্গে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে লিংক স্থাপন করা হয়েছে। ফার্মগেট থেকে দ্রুত মেলায় আসা যাবে। ফার্মগেট থেকে প্রতিদিন বিআরটিসি বাস আসবে মেলায়।

সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, পুরোনো বাণিজ্যমেলার মাঠে দ্বিতল বা তিনতলা স্থাপনা নির্মাণ করা যেত। তবে এখানে মূল অবকাঠামোতে তা সম্ভব নয়। তাই এর বাইরেও স্থায়ী স্থাপনা করা হবে। যেখানে ভবিষ্যতে দ্বিতল বা তিনতলা প্যাভিলিয়ন স্থাপন করা যাবে। 

এদিকে শনিবার সরেজমিন দেখা যায়, অনেকটা অপ্রস্তুত অবস্থায় রোববার উদ্বোধন হচ্ছে মেলা। অধিকাংশ স্টল নির্মাণের কাজ চলছে। হাতে গোনা কয়েকটি স্টলে পণ্য দেখা গেছে। অবশ্য জাতীয় নির্বাচনের কারণে মেলা কবে শুরু হবে তা নিয়ে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। 

মেলায় নির্মাণাধীন টেস্টি ট্রিটের স্টলের ফিরোজ আলম নামের এক প্রতিনিধি বলেন,  ১৪ জানুয়ারি আমরা জানতে পারছি মেলা ২১ তারিখে শুরু হবে। এরপর থেকেই তোড়জোড় শুর হলো। এরই মধ্যে আমাদের পাঁচটি স্টল ও প্যাভিলিয়ন নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। 

আয়োজক প্রতিষ্ঠান ইপিবি জানিয়েছে, মাসব্যাপী মেলা ক্রেতা-দর্শনার্থীদের জন্য সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত। 

এবারের মেলায় বিদেশি অংশগ্রহণ কিছুটা কমেছে। তুরস্ক, ভারত, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, হংকং ও ইরান- এ ছয়টি দেশের ব্যবসায়ীরা অংশ নেবেন। 

এবারের বাণিজ্যমেলার লে-আউট প্ল্যান অনুযায়ী দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়ন ও স্টল থাকবে ৩৫১টি। মূল অবকাঠামোর দুটি হলে ১৭৪টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। 

মেলার মেইন গেইটের পূর্বপাশে বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়নসহ প্রিমিয়ার ও সংরক্ষিত ক্যাটাগরির স্টল রয়েছে ৬২টি। মূল ভবনের পেছনে ফরেন ও দেশীয় স্টল থাকছে ৫৩টি। মূল সেন্টারের বাইরে ৩২টি রেস্টুরেন্ট ও মিনি রেস্টুরেন্টসহ স্টল থাকবে ৬২টি। 

প্রতিবারের মতো এবারও মূল ভবনের সম্মুখভাগে রয়েছে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন। সেখানে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শ, স্বাধীনতা সংগ্রাম, উন্নত দেশ গড়তে বঙ্গবন্ধুর অবদান ও ভাবনা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরা হবে। দর্শনার্থীদের তথ্য সহায়তা দিতে রয়েছে একটি তথ্য কেন্দ্র। আর্থিক লেনদেনের জন্য কয়েকটি ব্যাংকের বুথ থাকবে। 

এবার প্রবেশ মূল্য বাড়ানো হয়েছে। প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য প্রবেশ টিকিটের মূল্য ৫০ টাকা এবং শিশুদের (১২ বছরের নীচে) জন্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অনলাইনেও কেনা যাবে টিকিট।