ডন প্রতিবেদন : পিলখানায় সীমান্তরক্ষা বাহিনীর সদরদপ্তরে ১৩ বছর আগে বিদ্রোহের মধ্যে নৃশংস হত্যাযজ্ঞে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের স্মরণ করা হলো ফুলেল শ্রদ্ধায়।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তাঁদের সামরিক সচিবেরা শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে বনানীর সামরিক কবরস্থানে নিহত সেনা সদস্যদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
আইএসপিআর জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতির পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমেদ।
পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন স্মৃতিস্তম্ভে। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান শ্রদ্ধা জানান একসঙ্গে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার হোসেন ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলামও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
র্যাবের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা জানানো হয়। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের স্বজনরাও ছিলেন বনানীর সামরিক কবরস্থানে। এ সময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
বিজিবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দিবসটি পালন উপলক্ষে বিজিবির সকল স্থাপনায় বিজিবির পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। বিজিবির সকল সদস্য কালো ব্যাজ ধারণ করেছেন। বিজিবির সকল সেক্টর ও ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে হয়েছে বিশেষ দরবার।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর পিলখানা বিজিবি কেন্দ্রীয় মসজিদ, ঢাকা সেক্টর মসজিদ এবং বর্ডার গার্ড হাসপাতাল মসজিদে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল হবে।
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানা বিদ্রোহ আর হত্যাযজ্ঞে প্রাণ হারান ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন।
সেদিন সকালে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরের দরবার হল থেকে বিদ্রোহের সূচনা হয়। নানা ঘটন অঘটনের মধ্য দিয়ে পরদিন ঘটে এর অবসান।
পিলখানায় বিদ্রোহের সূত্র ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে জওয়ানরা বিদ্রোহ করে। সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীর ওই বিদ্রোহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আলোড়ন তোলে।
রক্তাক্ত সেই বিদ্রোহের পর সীমান্তরক্ষা বাহিনী বিডিআরের নাম বদলে যায়, পরিবর্তন আসে পোশাকেও। এ বাহিনীর নাম এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি।
পিলখানা হত্যা মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে হাই কোর্ট বলেছে, ওই ঘটনা ছিলো রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক-সামাজিক নিরাপত্তায় বিঘ্ন সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্র। শুধু তাই নয়, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে একটি দক্ষ, প্রশিক্ষিত বাহিনীকে ধ্বংসেরও চেষ্টা।
আদালত সেই রায়ে বলে, বিডিআরের জওয়ানরা ‘দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়াসহ স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের উপর প্রত্যক্ষ হুমকির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে’ যে কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছে, সেই কলঙ্কের চিহ্ন তাঁদের বহুকাল বহন করতে হবে।