বিজয়ের আগে রামপাল-পায়ারার বিদ্যুৎ পদ্মা হয়ে ঢাকায়

বিজয়ের আগে রামপাল-পায়ারার বিদ্যুৎ পদ্মা হয়ে ঢাকায়

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ ও ডন : বিজয় দিবসের আগের দিন বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) বাগেরহাটের রামপাল ও পটুয়াখালীর পায়রা কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ঢাকায় এসেছে। এদিন আমিনবাজার-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেন প্রকৌশলীরা। এতে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে রামপাল ও পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঢাকার আমিনবাজারে নবনির্মিত ৪০০/২৩০ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রে আসে। আর সেখান থেকেই আসে ঢাকায়।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (পিজিসিবি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র ও পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ঢাকায় বিদ্যুৎ আনার জন্য পদ্মা নদীতে সাড়ে সাত কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ প্রথমে নদীতে পাইলিং করে কংক্রিট-রডের ঢালাই দিয়ে পানির উচ্চতার সমান ১১টি পিলার নির্মাণ করেছে। এর ওপর ১২২ মিটার উঁচু ১১টি টাওয়ার নির্মাণ করেছে পিজিসিবির প্রকৌশলীরা। ওই টাওয়ারের ওপর দিয়ে বিদ্যুতের তার টানা হয়েছে। এর মধ্যে নদীগর্ভে ৭টি ও তীরবর্তী স্থানে ৪টি টাওয়ার বসানো হয়েছে।

রামপাল ও পায়রায় উৎপাদিত বিদ্যুৎ নির্বিঘ্নে ঢাকায় আনার জন্য গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশে ৪ শ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্র বসানো হয়েছে, যা ‘পাওয়ার ট্রান্সমিশন হাব’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। রূপপুর থেকেও ওই উপকেন্দ্রে বিদ্যুৎ আনা হচ্ছে। সেখান থেকে ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে আমিনবাজারে ৪০০/২৩০ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে।

দুই বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র থেকে গোপালগঞ্জ ও আমিনবাজার উপকেন্দ্র পর্যন্ত ১৭৭ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন যুক্ত হয়েছে। সঞ্চালন লাইন ও গোপালগঞ্জ উপকেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে দুটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদিত হয়। ২০১৮ মালে মাঠপর্যায়ে নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রকল্পটির প্রথম ধাপে গোপালগঞ্জ উপকেন্দ্র পর্যন্ত সঞ্চালন লাইন যুক্ত করা হয়। গত মার্চে ওই উপকেন্দ্র পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হয়। এবার বিদ্যুৎ সরবরাহ ঢাকায় আনার জন্য আমিনবাজার-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন চালু করা হয়েছে।

গোপালগঞ্জ উপকেন্দ্র থেকে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর, মাদারীপুর জেলার রাজৈর, শিবচর, ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা, শরীয়তপুর জেলার জাজিরা, পদ্মা নদী, মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং, শ্রীনগর, সিরাজদিখান, ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, সাভার এলাকার ওপর দিয়ে সঞ্চালন লাইনটি আমিনবাজার ৪০০/২৩০ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিজিসিবির এক সহকারী প্রকৌশলী বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, এটা বাংলাদেশের একটি চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প ছিলো। পদ্মা নদীর মধ্য দিয়ে উঁচু টাওয়ার নির্মাণ করা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। ২৭০ জন প্রকৌশলী ও কর্মী দীর্ঘদিন ধরে এ ঝুঁকিপূর্ণ কাজটি করে গিয়েছেন। এ প্রকল্পে বিদেশি বন্ধুদের ভূমিকাও প্রশংসার যোগ্য।