বঙ্গবন্ধুর জীবনচরিত নিয়ে ২টি রেল জাদুঘরের যাত্রা শুরু।

বঙ্গবন্ধুর জীবনচরিত নিয়ে ২টি রেল জাদুঘরের যাত্রা শুরু।

বাসস : আজ সোমবার (পহেলা আগস্ট) থেকে যাত্রা শুরু হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরের। এ জাদুঘর দুটি দেশব্যাপী প্রদর্শন করা হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ, অধিকার আদায়ের আন্দোলন, সংগ্রাম এবং তাঁর অসামান্য কর্মজীবন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে প্রতিষ্ঠিত এই ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরগুলো রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল এবং পশ্চিমাঞ্চল জোন থেকে উদ্বোধন করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত এই রেল জাদুঘরটির ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন বিকেল ৫টায় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহ্‌মুদ ও দুপুর ১২টায় গোপালগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন রেল জাদুঘরের প্রদর্শনীর শুভ সূচনা করছেন।

রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মঞ্জুর উল আলম চৌধুরী বাসসকে জানান, বঙ্গবন্ধুর জীবন সংগ্রাম, স্বাধীনতা যুদ্ধ আর ইতিহাসের সমন্বয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ একটি ব্রডগেজ এবং একটি মিটারগেজ কোচ নিয়ে তৈরি করেছে জাদুঘরটি। অত্যাধুনিক জাদুঘর দুটি দেশের ৩৫টি রেল স্টেশনে প্রদর্শিত হবে। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে কোনও স্টেশনে একদিন আবার কোনও স্টেশনে পাঁচদিন পর্যন্ত অবস্থান করবে বিশেষ জাদুঘর দুটি।

তিনি জানান, জাদুঘরটিতে ১৯২০ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জাতির পিতার ঐতিহাসিক জীবন, মুক্তিযুদ্ধ, সংগ্রামী ঘটনা প্রবাহ তুলে ধরা হয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর’।

এর আগে ব্যতিক্রমী এই জাদুঘরটি গত ২৭ এপ্রিল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অতিরিক্ত মহাপরিচালক বাসসকে আরও জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে জাদুঘরটি নির্মাণ করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। জাদুঘর দুটি বঙ্গবন্ধুর জীবনের ওপর নির্মিত তথ্যবহুল ও মনোমুগ্ধকর ১২টি পৃথক চিত্র ও দুর্লভ আলোকচিত্রের সমন্বয়ে সাজানো হয়েছে।

কোচের এক পাশের দেয়ালের ৬টি ভাগে রাখা হয়েছে কিংবদন্তির প্রথম প্রহর, ধ্রুবতারার প্রথম কিরণ, নক্ষত্র হওয়ার পথে, বাংলার মাটি ও ভাষার বঙ্গবন্ধু, ধূমকেতু থেকে নক্ষত্র, মুক্তির স্বপ্নের সূচনা- শিরোনামে বঙ্গবন্ধুর জীবনচরিত। 

এখানে বঙ্গবন্ধুর শৈশব থেকে পর্যায়ক্রমে তাঁর ছাত্রজীবন, রাজনীতিতে হাতেখড়ি এবং গণমানুষের প্রাণের নেতা হয়ে উঠার ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে।

তিনি বলেন, ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরে রয়েছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অবর্ণনীয় নির্যাতন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট, মিথ্যা মামলা ও কারাভোগ, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রামের ইতিহাস। 

‘আরেক পাশের দেয়ালে থাকা ৬ ভাগে রয়েছে দুর্বার পথচলা; নিপীড়িতদের কাণ্ডারি; এক নতুন স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন; মুক্তি, সংগ্রাম ও স্বাধীনতার কথা; স্বপ্নগড়ার দিনগুলো; যে আলো নেভে নি আজও- এমন শিরোনামের শিল্প প্রদর্শনী।’ 

‘এতে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ’৬৬ এর ঐতিহাসিক ছয় দফা, ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ও জাতির গৌরবোজ্জ্বল একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জনের প্রধান নায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর অবদান দর্শকদের চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠবে। দেখার সঙ্গে সঙ্গে যেনো দর্শকেরা ভালোভাবে শুনতে পারেন, সেজন্য রাখা হয়েছে হেডফোনের ব্যবস্থাও। কোচের এক প্রান্তে রাখা হয়েছে একটি বড় এলইডি টেলিভিশন।’ 

‘এতে দেখানো হবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য ও ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ।’

‘এ ছাড়া শিশুদের জন্য বঙ্গবন্ধুর রচিত বিভিন্ন শিশুতোষ বইও রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জাদুঘরটি দুটিতে।’

‘জয়বাংলা স্লোগানের আদলে তৈরি করা একটি বুক শেলফ রয়েছে। এখানে রয়েছে প্রায় এক শ বই।’

জাদুঘরটিতে ‘যাদু মনি’ সম্বোধন করে মেয়ে হাসুকে (শেখ হাসিনা) নিয়ে লেখা বঙ্গবন্ধুর চিঠিসহ মোট ৬টি চিঠি রাখা হয়েছে। যা দর্শনার্থীদের বঙ্গবন্ধুকে আরও গভীরভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।

জাদুঘরের ভেতরে কৃত্রিম ফুলের বাগান দর্শকদের আকৃষ্ট করবে সহজেই। 

আরও রয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যবহৃত পোশাক ও জিনিসপত্রের প্রতিকৃতি। রয়েছে বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থল ও স্মৃতিসৌধ। ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর দুটিতে ডিসপ্লে রয়েছে, যেখানে বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানা সময়ের ভিডিওচিত্রও প্রদর্শিত হবে।