বাইরে লেখা ‘প্রবেশ নিষেধ’। ভেতরে চলছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই তৈরি।

বাইরে লেখা ‘প্রবেশ নিষেধ’। ভেতরে চলছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই তৈরি।
নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঙলা কাগজ; নীলফামারী : ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায় শুরু হয়েছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই তৈরি। শতাধিক কারখানায় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা নিম্নমানের পাম অয়েল ও ডালডা দিয়ে তৈরি করছেন এসব সেমাই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে তৈরি করা এসব সেমাই স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেছেন চিকিৎসকেরা। সরেজমিনে দেখা গেছে, সৈয়দপুরের পাটোয়ারীপাড়া, কাজীরহাট, পুরাতন বাবুপাড়া, বাঁশবাড়ি, মিস্ত্রিপাড়া, হাতিখানা, নিয়ামতপুর, মুন্সিপাড়া ও গোলাহাটসহ শহরের আনাচকানাচে গড়ে উঠেছে এসব মৌসুমি সেমাই কারখানা। অধিকাংশ সেমাই তৈরির কারখানার নেই বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) অনুমোদন। এ ছাড়া কারখানাগুলোয় মানা হচ্ছে না কোনও নিয়মনীতি। হাতেগোনা কয়েকটি সেমাই তৈরির বৈধ কারখানা থাকলেও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দাপটে তাঁরা বিপাকে পড়েছে। অবৈধ কারখানাগুলোয় কোনও সাইনবোর্ড নেই। কারখানার বাইরে থেকে ‘প্রবেশ নিষেধ’ সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে অথবা গেট বন্ধ করে চলে সেমাই তৈরির কাজ। এসব কারখানা এক স্থানে বেশি দিন থাকে না। সচেতন মহলের চোখ পড়ার আগেই স্থান পরিবর্তন করা হয়। এসব সেমাইয়ের প্যাকেটে নামীদামি কোম্পানির লেবেল ও স্টিকার লাগিয়ে পাইকারি বিক্রি করা হয়। গোপন স্থানে কারখানা থাকায় প্রশাসনেরও নজরদারিতেও আসে না। ফলে নির্বিঘ্ন ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। গাউসিয়া বেকারির মালিক আওরঙ্গজেব বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, প্রতিবছর রমজান মাসের শুরুতে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় অল্প টাকায় বেশি লাভের আশায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ব্যবসা শুরু করেন। তাঁরা কারখানাতে কোনও স্বাস্থ্যবিধি মানেন না। ‘এ ছাড়া তাঁদের কোনও বৈধ কাগজপত্রও নেই। মাসখানেক ধরে এসব অবৈধ মৌসুমি কারখানায় সেমাই তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনও তৎপরতা দেখা যায় নি।’ স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ও বিশিষ্ট চিকিৎসক শেখ নজরুল ইসলাম বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি সেমাই খেয়ে অনেক রোজাদার, সাধারণ মানুষ পেটের পীড়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। রং ও অন্যান্য রাসায়নিক মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। খাদ্যদ্রব্যে মেশানো রং মানুষের পেটে গেলে তা গ্যাস্ট্রিক, আলসার থেকে ক্যানসারের কারণ হতে পারে। তাই সুস্থ থাকতে এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শামসুল আলম বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, পচা ডিম, প্রাণিজ চর্বি, কৃত্রিম ঘি ও সুগন্ধিমিশ্রিত সেমাই তৈরি যাতে না হয়, সেজন্য কারখানাগুলো নজরদারিতে রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়ে এসব ভেজাল কারখানায় নিয়মিত অভিযান চালানো হবে এবং কোনও প্রকার অনিয়ম পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।