ফয়সালের হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ!

ফয়সালের হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ!

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে ১ হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের বিরুদ্ধে। দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানে এ পর্যন্ত ১৬ কোটি ৪১ লাখ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। বাকি সম্পদ খুঁজে বের করতে অনুসন্ধান চলছে। 

দুদক সূত্র জানায়, ঢাকায় এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে ট্যাক্সেস লিগ্যাল অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট শাখায় প্রথম সচিবের (অতিরিক্ত কর কমিশনার) দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তিনি ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ লুটেছেন দুই হাতে। সম্প্রতি তাকে বগুড়ায় বদলি করা হয়েছে। এর আগে তিনি বন্দরনগরী নারায়ণগঞ্জে যুগ্ম কর কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন। 

তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রথম অভিযোগ দুদকে আসে গত বছর। ওই সময় কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দুদকের সহকারী পরিচালক আরিফ হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম অনুসন্ধান শুরু করে। তাঁদের অনুসন্ধানে তেমন অগ্রগতি হয় নি। চলতি বছরের শুরুতে ফয়সালের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ জমা পড়ে দুদকে। এতে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নামে-বেনামে ১ হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়। 

এর পর দুটি অভিযোগ একসঙ্গে অনুসন্ধানে দুদক উপপরিচালক শেখ গোলাম মাওলার নেতৃত্বে একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। ওই কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন : দুদকের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজ ও সোমা হোড়। কমিটি অনুসন্ধান চালিয়ে ফয়সালের নামে-বেনামে ১৬ কোটি ৪১ লাখ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্যপ্রমাণ পায়।

দুদক সূত্র জানায়, ফয়সাল দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ করেছেন তাঁর স্ত্রী আফসানা জেসমিন, শ্বশুর আহমেদ আলী ও শাশুড়ি মমতাজ বেগমের নামে। তিনি তাঁর আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠজনের নামে ৭০০ ব্যাংক হিসাব খুলেছেন। অপরাধলব্ধ আয়ের প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ গোপন করতে তিনি এসব হিসাব খুলেছেন।

কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল ২৪তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে বিসিএস (কর) ক্যাডারে সহকারী কর কমিশনার হিসেবে ২০০৫ সালের ২ জুলাই যোগদান করেন। সূত্র জানায়, তিনি অপরাধলব্ধ অর্থের উৎস গোপন করতে একটি ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখায় নিজের নামে এফডিআর খোলেন। এফডিআরগুলোর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে নেন। এর পর তাঁর ঘনিষ্ঠ ফারহানা আক্তার, শাশুড়ি মমতাজ বেগম, মাহমুদা হাসান, খন্দকার হাফিজুর রহমান ও করিমা খাতুনের নামে নতুন এফডিআর খোলেন। পরবর্তী সময়ে এবি, মার্কেন্টাইল, ওয়ান, ঢাকা, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, লংকা-বাংলা ফাইন্যান্স ও হজ ফাইন্যান্সে শ্বশুর আহমেদ আলী, ঘনিষ্ঠজন আফতাব আলী, শেখ নাসির উদ্দিনসহ বিভিন্ন জনের নামে ৭শ ব্যাংক হিসাব খোলেন। 

দুদকের অনুসন্ধান টিমের সদস্য মোস্তাফিজের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৭ জুন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত ফয়সালের ১৬ কোটি ৪১ লাখ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ দেন। জব্দ হওয়া সম্পদের মধ্যে আছে : ঢাকার একটি ফ্ল্যাট ও ১০ কাঠার দুটি প্লট, তাঁর ও তাঁর স্ত্রীসহ স্বজনের নামে থাকা ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র এবং ১৪ জনের নামে ৮৭টি ব্যাংক হিসাবে থাকা ৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।  আর ফয়সালের নামে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে ৫০ লাখ টাকার দুটি সঞ্চয়পত্র, তাঁর স্ত্রী আফসানা জেসমিনের নামে চারটি সঞ্চয়পত্রে ৫০ লাখ টাকা, আফতাব আলীর নামে দুটি সঞ্চয়পত্রে ৩০ লাখ টাকা, কাজী খালিদ হাসানের নামে একটি সঞ্চয়পত্রে ৩০ লাখ টাকা, খন্দকার হাফিজুর রহমানের নামে দুটি সঞ্চয়পত্রে ৪০ লাখ টাকা, আহম্মেদ আলীর নামে তিনটি সঞ্চয়পত্রে ৫০ লাখ টাকা ও মাহমুদা হাসানের একটি সঞ্চয়পত্রে ৫ লাখ টাকা রয়েছে। স্থাবর সম্পদের মধ্যে আরও আছে : আফসানা জেসমিনের নামে ১০ কাঠা জমি, ২শ বর্গমিটারের প্লট, ফয়সালের নামে ভাটারা, খিলগাঁও ও রূপগঞ্জে থাকা সম্পদ, আহমেদ আলীর নামে থাকা ফ্ল্যাট ও কার পার্কিংয়ের ৩ হাজার ২২৮ বর্গফুট জায়গা ও মমতাজ বেগমের নামে থাকা ১০ কাঠা জমি। যাদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে তারা হলো : শেখ নাসির উদ্দিন, মমতাজ বেগম, রওশন আরা খাতুন, আহম্মেদ আলী, খন্দকার হাফিজুর রহমান, ফারহানা আফরোজ, আশরাফ আলী মুনির, আফতাব আলী তানির, মাহফুজা আক্তার, মাইনুল হাসান, আফসানা জেসমিন, মাহমুদা হাসান ও কাজী খালিদ হাসান।

দুদকের অনুসন্ধানে বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসা ও সম্পদগুলো আদালতের আদেশে জব্দ ও অবরুদ্ধ করার পর গত ৩০ জুন ফয়সালকে এনবিআরের প্রধান কার্যালয় থেকে বগুড়ায় বদলি করা হয়।