পোশাকে পূজার রং

পোশাকে পূজার রং

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : পূজার পোশাকে দেবীমুখ, পদ্ম, জবা, মন্ত্র ইত্যাদির পাশাপাশি জ্যামিতিক নকশা, পশ্চিমা ধাঁচের নকশার সঙ্গে দেশীয় নকশার মিশেল ও ফিউশন দেখা যাচ্ছে। কিছু কিছু পোশাকে মান্ডালা আর্ট, ইক্কত, মুঘল, চক্রে আঁকা শিল্প, নৃত্যরত নারী, ঐতিহ্যবাহী এবং বিভিন্ন মোটিফের সংমিশ্রণ প্রাধান্য পেয়েছে।

বছর ঘুরে আবার পূজার বাদ্যি বাজতে চললো। কিছুদিন পর শুরু হয়ে যাবে ঢাকঢোল ও বাজনা। মন্দির, মণ্ডপ, বিভিন্ন জায়গায় দেখা যাবে সাজসাজ রব। কার্তিকের শুরুর দিকে দেবী এলেও, দেবীবরণের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। শুরু হয়েছে কেনাকাটা। বিভিন্ন ব্র্যান্ড, ফ্যাশন হাউসগুলোও নিয়ে এসেছে রংবেরঙের পোশাক, গহনা ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র। পোশাকের ব্র্যান্ড– বিশ্বরঙ, কে ক্র্যাফট, রঙ বাংলাদেশ, অঞ্জন’স, টুয়েলভ ক্লদিং, সারা, আর্ট, ইয়েলো, এম্পেরিয়র, নাগরদোলাসহ সব ব্র্যান্ড পূজার পোশাকের পসরা নিয়ে এসেছে। থেমে নেই ছেলেদের পোশাকের ব্র্যান্ডগুলোও। ইজি, আর্টিসান, মেনস ওয়্যার, রিচম্যান, প্লাস পয়েন্ট, আর্টিজ্যানসহ অন্য ব্র্যান্ডগুলোও এনেছে পূজার পোশাক। শাড়ি, পাঞ্জাবি, কামিজ, কুর্তি, ফতুয়া, পোলো ও টি-শার্টে বাহারি থিম ও নকশার সংমিশ্রণ করা হয়েছে। কাটিং, প্যাটার্নে কিছুটা ভিন্নতা আছে। বরাবরের মতো রয়েছে ফিউশনও। বিশ্বরঙের পোশাকে বরাবরের মতো উজ্জ্বল রঙের প্রাধান্য থাকলেও, এবারের পোশাকে মূল গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে পদ্মফুল, দেবী দুর্গার প্রতিকৃতি, মন্ত্র, দেবী দুর্গার স্তুতিবাক্য ইত্যাদি। এমনটাই জানান পোশাকের ব্র্যান্ড বিশ্বরঙের স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার বিপ্লব সাহা। দেবী দুর্গার মুখ ও অন্যান্য পূজার থিম ছাড়াও এবারের পোশাকে বিভিন্ন জ্যামিতিক নকশা, আর্ট ইত্যাদি দেখা যাচ্ছে। শাড়ি ও সালোয়ার-কামিজে হাতের কাজ, টার্সেল ও লেইসের ব্যবহারও চোখে পড়ার মতো।

নকশায় থিমে : এবারের পূজার পোশাকে প্রতিটি ব্র্যান্ডের নকশা ও থিমে রয়েছে ভিন্নতা। সারার ডিজাইনার শামীম রহমান জানান, ‘সারা’র পূজার কালেকশনে এবারের থিম হলো, মান্ডালা আর্ট। নারী ও পুরুষের সব ধরনের পোশাকে এ আর্টকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শিশুদের পোশাকেও রয়েছে বিভিন্ন বৈচিত্র্য। সারার পোশাকে দেশীয় ঘরানার সঙ্গে পশ্চিমা ঘরানার সংমিশ্রণ বেশি বলেও জানান শামীম রহমান। সারার পোশাকে থিমের সঙ্গে মিল রেখে ডিজাইন, পোশাকের প্যাটার্ন ও মোটিফের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন চক্রে আঁকা শিল্প। সাতকাহনের পোশাকে হ্যান্ডপেইন্ট করা জবা ফুল, সিল্কের শাড়িতে ডাইয়ের কাজ, কান্তজির মন্দিরের নকশা ইত্যাদি রয়েছে। হরীতকী ও মহাশয়ের পোশাকে দেবীর প্রতিকৃতি, ঢোল, বাদ্যযন্ত্র, ফুলের নকশা, কুলা, পটচিত্র, সনাতনি সংস্কৃতি ইত্যাদি তুলে ধরা হয়েছে।

অলঙ্করণের অনুষঙ্গ : বিপ্লব সাহা জানান, বিশ্বরঙ ‘দুর্গাপূজা ২০২৩’-এর পোশাক অলঙ্করণের অনুষঙ্গ হিসেবে বেছে নিয়েছে দুর্গা প্রতিমার প্রতিকৃতি, প্রকৃতির নান্দনিক রূপের গ্রাফিক্যাল জ্যামিতিক ফর্মের সমন্বয়ে দুর্গা মোটিফ, মন্ত্র ইত্যাদি। পোশাকগুলোয় উৎসবের আমেজ ফুটিয়ে তুলতে উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার করা হয়েছে। বিশ্বরঙ, কে ক্র্যাফটসহ অন্য দেশীয় পোশাকের ব্র্যান্ডগুলো পোশাকের অলঙ্করণ বাড়াতে প্রাধান্য দিয়েছে চুনরি, টাইডাই, ব্লক, বাটিক, কারচুপি, অ্যাপলিক, কাটওয়ার্ক, ডলার, কাঁথা স্টিচ, স্ক্রিন প্রিন্ট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রিন্ট, ডিজিটাল প্রিন্ট ইত্যাদি।

রঙের বাহার : পূজা মানেই লাল ও মেজেন্টা রং। একটু উজ্জ্বল রং না হলে উৎসব যেন ঠিক জমে না। নবমী ও দশমীর পোশাকের সংগ্রহে এই দুই রঙের পোশাক রাখতে পারেন। বাটার ক্রিম, পেস্তা সবুজ, শ্যাওলা সবুজ, হালকা কমলা, গাঢ় কমলা, ফিরোজা, পিঙ্ক, চেরি পিঙ্ক, পাউডার পিঙ্ক, মেরুন, মেজেন্টা, হোয়াইট, অফ হোয়াইট, ব্রিক রেড, অরেঞ্জ, স্যালমন অরেঞ্জ, টেন ব্রাউন, মেরি গোল্ড, ল্যাভেন্ডার, নেভি, কোরা, কোরাল রেড, ক্রিমসন রেড, রয়্যাল ব্লু ইত্যাদি রংগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। অষ্টমীতে সবুজের বিভিন্ন শেড, প্যাস্টেল, ব্রিক রেড, টেন ব্রাউন রঙের কুর্তি, কামিজ, ফ্রক, পালাজ্জো-টপস, স্কার্ট-টপস ইত্যাদি রঙের পোশাক বেছে নিতে পারেন। এতে গরমে খানিকটা আরাম পাবেন। নবমী ও দশমীর দিনে নানা শেডের কমলা, কোরাল রেড, গাঢ় গোলাপি, রানী গোলাপি রঙের পোশাক বেছে নিতে পারেন। অন্যদের থেকে ভিন্নতা থাকতে আইভরি, ক্রিম, বাটার ক্রিম রঙের পোশাকও নির্বাচন করতে পারেন।

মোটিফ : কে ক্র্যাফটের ডিজাইনার খালিদ মাহমুদ খান জানান, শারদীয় উৎসবকেন্দ্রিক নানা মোটিফের অনুপ্রেরণা এবং বিচিত্র রঙের বিন্যাসে চলমান ট্রেন্ড অনুযায়ী ডিজাইন করা হয়েছে শারদীয় দুর্গাপূজা কালেকশন। এ ছাড়া থাকছে ফ্লোরাল, ওয়াটার লিলি, ট্রাইবাল, আলাম, ইক্কত, মোগল, ট্র্যাডিশনাল এবং মিক্সড মোটিফের ব্যবহার।

প্যাটার্ন : প্যাটার্নে ভিন্নতা আনা হয়েছে কে ক্র্যাফটের পোশাকে। ব্র্যান্ডটিতে ক্ল্যাসিক লুকের সঙ্গে রেট্রো লুকের মিশেলে নতুন মাত্রা যোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া ট্র্যাডিশনাল প্যাটার্নেও করা হয়েছে নানা পোশাক। টুয়েলভ ক্লদিং, সারা, লা রিভ, ইয়েলোর পোশাকের প্রচলিত ধারার কাটিংয়ে আছে নতুনত্বের মিশেল।

ফেব্রিকের ধরন : গরমের কথা মাথায় রেখে সুতি, লিনেন, ভিসকস, ভয়েল, স্লাব, শ্যামলে কাপড়ের পোশাক এনেছে বিশ্বরঙ। আভিজাত্য তুলে ধরতে জয়সিল্ক, ডুপিয়ান, হাফ সিল্ক, জর্জেট, সিফনসহ ভিন্ন ভিন্ন বাহারি কাপড়ে ফুটিয়ে তুলেছে পছন্দের নকশা। কে ক্র্যাফট ও অন্যান্য ব্র্যান্ডের পোশাকে কটন, লিনেন, হাফ সিল্ক, জর্জেট, সিল্ক, মম সিল্ক, ধুপিয়ান সিল্ক, কাতান, এলেক্স, অরগাঞ্জা ফেব্রিক ব্যবহার করা হয়েছে। এ ধরনের ফেব্রিকের পোশাক আপনাকে স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে সাহায্য করবে। এর পাশাপাশি আপনাকে আকর্ষণীয় ও উৎসবমুখর করে তুলবে। ফ্যাশন হাউসগুলোয় আরামদায়ক, সময়োপযোগী ও উৎসবধর্মী পোশাকের আয়োজনকে ঘিরে করা হয়েছে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, কুর্তি, টপস, টিউনিক, কটি, স্কার্ট ও অন্যান্য বোটম-ওয়্যার। ছেলেদের জন্য রয়েছে রেগুলার ও ফিটেড পাঞ্জাবি। এ ছাড়া রয়েছে কাটবেইসড একরঙা পাঞ্জাবিও। পাঞ্জাবির সঙ্গে পরার জন্য আছে কাতান, সিল্ক এবং কটন কাপড়ে হালকা ও ভারী প্রিন্ট করা কটি। এ ছাড়া পাওয়া যাচ্ছে স্মার্ট ক্যাজুয়াল শার্ট, এথনিক শার্ট, ফতুয়া, পলো শার্ট ও টি-শার্ট।

পূজার ব্লাউজ : শাড়ির সঙ্গে ম্যাচিং ব্লাউজ না হলে ঠিক জমে না। পছন্দের ব্লাউজ বেছে নিতে পারেন খাঁচা, সাতকাহন, গোধূলি, বর্ণন লাইফস্টাইল, ড্রিম ফ্যাশন হাউস, কালার ক্রেজ ইত্যাদি থেকে। এ ছাড়া চাইলে দেবীমুখ, ঢোলঢাক, পদ্ম, কাশফুলের প্রিন্টের বা হ্যান্ডপেইন্টের কাপড় কিনে মনের মতো ব্লাউজ বানিয়ে নিতে পারেন।

কোথায় পাবেন : যে কোনও ব্র্যান্ড থেকে পূজার পোশাক কেনা যাবে। ঘরে বসে পূজার পোশাক পেতে যে কোনও ব্র্যান্ড কিংবা অনলাইন পেজ অথবা ওয়েবসাইট থেকে অর্ডার করতে হবে। এ ছাড়া বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত স্কয়ার, টোকিও স্কয়ার, শ্যামলী স্কয়ার, নিউমার্কেট, মৌচাক মার্কেট, গাউছিয়া, আজিজ সুপারমার্কেট, চাঁদনী চক থেকে পোশাক কেনা যাবে।