পুলিশ সদস্য সুমনের বাবা জানেন না তাঁর ছেলে আর নেই

পুলিশ সদস্য সুমনের বাবা জানেন না তাঁর ছেলে আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঙলার কাগজ; খুলনা : খুলনায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় নিহত পুলিশ সদস্য সুমন কুমার ঘরামীর (৩৫) বাড়ি বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার কিসমত মালিপাটন গ্রামে। শনিবার (৩ আগস্ট) সকাল থেকে স্বজন ও প্রতিবেশীরা সেখানে অপেক্ষায় ছিলেন তাঁর লাশের জন্য। তবে ছেলের মৃত্যুর কথা জানেন না তাঁর অসুস্থ বাবা।

সুমনের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা সুশীল কুমার ঘরামী। প্রতিবেশীরা বলেন, তিনবার স্ট্রোক হয়েছে তাঁর। শারীরিকভাবে বেশি সুস্থ নন। তাই কেউ তাঁকে ছেলের মৃত্যুর খবর বলেন নি।

সুমনের মা গীতা রানী অবশ্য গত রাতেই জেনেছেন ছেলের মৃত্যুর খবর। সেই থেকে বিলাপ করছেন তিনি। তাঁকে পাশের এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে রাখা হয়েছে। স্বজনেরা কিছুতেই সান্ত্বনা দিতে পারছেন না তাঁকে।

দুপুরে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, সুমনের মা গীতা রানীকে তাঁর বোন, মেয়েসহ অন্য স্বজনেরা সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে কিছুতেই থামছে না তাঁর কান্না ও বিলাপ। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলছিলেন, ‘বন্দুক কি আনছো, তোমরা বন্দুক আনছো, হেইলে কও। হেইলে ওই বন্দুকটা দিয়া আমার বুকটার ওপর একটা গুলি করো। আমি আমার বাবার লগে চইলে যাবো।’ বলতে বলতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি।

আজ সকাল থেকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী স্থানীয় হরি মন্দিরের সামনে অপেক্ষায় সবার প্রিয় সুমনের জন্য। এই মন্দিরের পেছনেই পুলিশ কনস্টেবল সুমনের ঘর। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বীর নিবাসের ঘর পেয়েছেন তাঁরা।

প্রতিবেশী ও সুমনের বন্ধু সমর কৃষ্ণন ঘরামী বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে এসএসসি পাস করেছি। এরপর সে পিরোজপুরের বিএম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে। এর কিছুদিন পর পুলিশে যোগ দেয়।’

সুমনের ভাগনে অর্পন সমাদ্দার কচুয়ার মোবাইদুল ইসলাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে পড়ে। মুঠোফোনে মামার ছবি দেখিয়ে সে বলছিলো, তাঁকে এভাবে মেরে ফেললো! মানুষ তো, একটু কি মায়া হলো না!

নিহত সুমন তাঁর স্ত্রী ও একমাত্র মেয়ে স্নিগ্ধা ঘরামীকে নিয়ে খুলনার পূজাখোলা এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। তিনি খুলনা মহানগর পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনারের (সোনাডাঙ্গা জোন) দেহরক্ষী ছিলেন।