প্রধানমন্ত্রী : শত প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে এই উন্নয়ন, একে অব্যাহত রাখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী : শত প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে এই উন্নয়ন, একে অব্যাহত রাখতে হবে।

বাসস : প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে বাংলাদেশ আজ যে অবস্থানে পৌঁছেছে, সেই উন্নয়নের ধারাটা যেনো অব্যাহত থাকে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যদিয়ে আমরা একটা জায়গায় আসতে পেরেছি, এই ধারা (উন্নয়নের) যেনো অব্যাহত থাকে।’

প্রধানমন্ত্রী আজ মঙ্গলবার (২ আগস্ট) সকালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) নিয়মিত সভায় সূচনা বক্তব্যে এ কথা বলেন।

তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে মাধ্যমে রাজধানীর শের-ই বাংলা নগরের পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রের বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চিরদিন আমিও থাকবো না, কিন্তু বাংলাদেশের এই উন্নয়নের অগ্রযাত্রা যেনো ব্যাহত না হয়, এটাই আমি চাই। আমরা যেনো এগিয়ে যেতে থাকি এবং যে আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ গড়ে উঠেছিলো, সেই আদর্শ যেনো বাস্তবায়ন করতে পারি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশের প্রতিটি গৃহহীনকে ঘর করে দেওয়া, খাদ্য নিরাপত্তা প্রদান, চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া, শিক্ষার ব্যবস্থা করা- সবক্ষেত্রেই আজকে তাঁর সরকার সাফল্য অর্জন করেছে। তবে, আরও সামনে এগিয়ে যাবার আকাঙ্ক্ষাও ব্যক্ত করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সরকারপ্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন, তাঁর আদর্শের সংগঠন, তাই যখনই ক্ষমতায় এসেছে, জনগণের ভাগ্যোন্নয়নেই কাজ করেছে। তাই আজকে যতোটুকু অর্জন, আমি মনে করি তা জনগণেরই অবদান।

আজকে বাংলাদেশকে একটি অবস্থানে নিয়ে আসতে পারার জন্য তাঁর সহকর্মীদের এ সময় ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, যেভাবে আমরা উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়েছি, সেভাবেই বাস্তবায়ন করতে পেরেছি বলেই ঠিক যখন ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্‌যাপন করছি, তখনই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এটা আমাদের একটা বিরাট অর্জন। তবে আরও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

তিনি বলেন, একটানা (৩ বার) জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় থাকতে পারার কারণে আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি এবং আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। কাজেই আমাদের ওপর জনগণের যেমন আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে, তেমনি আমারও জনগণের প্রতি সেই আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে।

তাঁর সরকার স্বল্প মেয়াদি, মধ্য মেয়াদি ও দীর্ঘ মেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা নির্ধারণ করে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়নের পাশাপাশি আশু করণীয় নির্ধারণ ও পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। তাঁর সরকার ২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী, যে রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা করেছিলো, তা বাস্তবায়ন করতে সমর্থ হয়েছে।

‘আজকের অর্জনের পেছনে পরিকল্পনা কমিশনের একটা বিরাট অবদান রয়েছে’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তাঁদেরও ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা ঔপনিবেশিক আমলের শাসন কাঠামোকে পরিবর্তন করে ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে চেয়েছিলেন এবং সেজন্য পদক্ষেপও নিয়েছিলেন যার সুফল দেশের মানুষ পেতে শুরু করেছিলো।

তিনি বলেন, জাতির পিতা পরিকল্পনা কমিশন গঠন করেন এবং এ দেশের স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদদের নিয়ে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে দীর্ঘ পরিকল্পনা প্রণয়ণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ যেনো কারও মুখাপেক্ষী না থেকে আত্মমর্যাদাশীলভাবে গড়ে ওঠে; সেটাই ছিলো তাঁর চিন্তা এবং দেশকে তিনি স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হন।

সরকারপ্রধান আরও বলেন, তিনি এ দেশের যে মাটি ও মানুষ আছে, তা দিয়েই বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন। এজন্য তাঁর যেমন আত্মবিশ্বাস ছিলো, তেমনি মাটি ও মানুষের প্রতি ছিলো গভীর ভালবাসা। কারণ, তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েই বাংলাদেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং তাঁর নির্দেশে যাঁর যেটুকু সামর্থ্য ছিলো, তাই নিয়ে বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।

‘কিন্তু যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশকে গড়ে তুলে জাতির পিতা যখন বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই আঘাত আসলো, তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। শুধু তাই নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, আদর্শ এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করা হলো। বাংলাদেশে আবার নেমে এলো স্থবিরতা,’ বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫ এর পর অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল এ দেশের মানুষের ভাগ্যের কোনও পরিবর্তন করে নি। তবে, ক্ষমতাসীনদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছে।

‘মানুষের তখন গণতান্ত্রিক অধিকার বা ভোটের অধিকার কিছুই ছিলো না, প্রতি রাতে কারফিউ থাকতো। ক্ষমতা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি ছিলো। আমরাই আন্দোলন সংগ্রাম করে জনগণের ক্ষমতা আবার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিই।’ আপনজন হারানোর ব্যাথা বুকে ধারণ করে কেবল বাবার যে স্বপ্ন, এ দেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নেই তাঁর পথ চলা বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, আপনজন হারানোর যে ব্যাথা, বেদনা, কষ্ট তা সহ্য করা যায় না। কিন্তু আমি দেখেছি, ছোটবেলা থেকে এ দেশের মানুষকে ভালোবাসতে এবং মানুষের জন্য কিছু একটা করার তাগিদ অনুভব করতেন তিনি (বঙ্গবন্ধু)। 

‘তা ছাড়া তাঁর সঙ্গে যেটুকু কথা বলার সুযোগ পেতাম, এই একই গল্প হতো, কীভাবে এই দেশের মানুষের উন্নতিটা হবে। কাজেই আমারও সেই প্রচেষ্টা।’

জাতির পিতার খুনিদের বিচার বন্ধে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমরা যাঁরা ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট আপনজন হারিয়েছি, তাঁদের কোনও বিচার চাওয়ার অধিকার পর্যন্ত ছিলো না। মামলা করার বা বিচার চাওয়ার সে অধিকারটুকুও কেড়ে নেওয়া হয়েছিলো। আমাদের প্রতি যে অবিচারটা হয়েছিলো, যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছিলো, জানি না তা আর কেউ স্মরণ করে কি-না। 

’৯৬ সালে আওয়ামী সরকারে এসে সেই ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিলের পরই কেবল মামলার সুযোগ পাই বলেই প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিলো, খুনিদের পুরস্কৃত করে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা, কূটনৈতিক মিশনে চাকরি দিয়ে তাদের উৎসাহিত করা, কি না করা হয়েছে। কতো অন্যায় কাজ এ দেশে হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, হত্যা হলে যে কেউ বিচার চাইতে পারে; কিন্তু আমাদেরতো সে অধিকার ছিলোই না; বরং আমরা চোখের সামনে দেখেছি, জনগণের ভোট চুরি করে, সেই খুনিদের খালেদা জিয়া পার্লামেন্টে বসিয়েছে। জিয়াউর রহমান তাদেরকে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছে। এরশাদ তাদের রাজনৈতিক দল করে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হবার সুযোগ করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, এই রকম অন্যায়-অবিচার আমরা চোখের সামনে দেখে সবকিছু সহ্য করে, ধৈর্য্য ধরে, জনগণের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে কারণ আমাদের একটাই সম্পদ ছিলো- জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা। এবং সেটাকে মূলধন করেই আমি এগিয়ে যাবার চেষ্টা করেছি। আর আজকে জনগণের সহযোগিতায় যতটুকু এগুতে পেরেছি; তা দেখে আমার বাবার আত্মা নিশ্চয়ই শান্তি পাবে।