পদ্মা সেতু দিয়ে সর্বসাধারণের গাড়ি চলবে ২৬ জুন। উদ্বোধনের দিন হেঁটে পার হওয়ার সুযোগ থাকতে পারে।

পদ্মা সেতু দিয়ে সর্বসাধারণের গাড়ি চলবে ২৬ জুন। উদ্বোধনের দিন হেঁটে পার হওয়ার সুযোগ থাকতে পারে।

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : দেশের মানুষের বহুল আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হচ্ছে আগামী ২৫ জুন। তবে সর্বসাধারণের জন্য স্বপ্নের সেতুতে গাড়ি নিয়ে উঠতে অপেক্ষা করতে হবে আরও একদিন। অর্থাৎ ২৬ জুন পর্যন্ত। তবে উদ্বোধনের দিন হেঁটে পদ্মা সেতু পার হওয়ার সুযোগ থাকতে পারে।

বুধবার (৮ জুন) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে দক্ষিণাঞ্চলের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ কথা জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। 

আর সেতু বিভাগের সচিব মঞ্জুর হোসেন জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন। তবে ওইদিনই পদ্মা সেতু সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে না।

সচিব আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু উদ্বোধন শেষে চলে যাওয়ার পর যান চলাচলের উন্মুক্তের সময় প্রজ্ঞাপন দিয়ে জানানো হবে। সেটা হতে পারে পরদিন সকাল ৬টা থেকে।

সস্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত দেশের বৃহৎ এ অবকাঠামো আগামী ২৫ জুন সকাল ১০টায় উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

সেতু মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে অনুষ্ঠিত সভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখবেন, ২৫ তারিখে কোনও গাড়ি পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যাবে না। ২৬ তারিখ সকাল থেকে… সময় জানিয়ে দেওয়া হবে, টোল দিয়ে পার হতে হবে। আসা যাওয়া হবে। সেটা পরের দিন। আগের দিন (২৫ জুন) হয়তো কিছু সময়ের জন্য খোলাও হতে পারে, সেটা এখনো নিশ্চিত না। সেদিন পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে পারবেন। এমন সময়সীমা দেওয়ার চিন্তাভাবনা আছে।’

দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, ‘অনেক ঘটনা ঘটছে। জানি না চট্টগ্রামের এই কন্টেইনার ডিপোর অগ্নিকাণ্ড নাশকতা কি না? পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে সামনে রেখে এ ধরনের অন্তর্ঘাত করার ষড়যন্ত্র আছে। এমনকি উদ্বোধনের দিনেও একটা ঘটনা ঘটানোর জন্য অনেকে কিন্তু মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে। আমাদের সাবধান থাকতে হবে। সবাই সতর্ক থাকবেন। যাতে শত্রুরা ভেতরে ঢুকে কোনও ধরনের নাকশতা ও অন্তর্ঘাত না করতে পারে। এই কথাটা বলার জন্য আমি আপনাদের সামনে দাঁড়িয়েছি।’

সবাইকে সুশৃংখল পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে জনসভার দিন পানি ও টয়লেটসহ প্রয়োজনীয় বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলেই জানান সেতুমন্ত্রী।

২৫ জুন কাঁঠালবাড়ি ফেরীঘাটে অনুষ্ঠেয় জনসভায় ১০ লাখ মানুষের সমাবেশ হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা যে বক্তব্য দিয়েছেন, সে বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেন কাদের। 

তিনি বলেন, ‘সেটা ১৫ কিংবা ২০ লাখও হতে পারে। কি হবে সেটা এখন বলতে পারবো না। তবে, জনতার ঢল নামবে এটা বলতে পারি। পদ্মা সেতু ও শেখ হাসিনাকে দেখতে আসবেন। এই দুটোই তো আকর্ষণ।’

পদ্মা সেতুর সব কর্তৃত্ব আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার উল্লেখ করে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শেখ হাসিনার অসীম সাহসের সোনালী ফসল, সততা ও সাহসের প্রতীক।’

পদ্মা নদীর বুকে নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ হাজার কোটি টাকায় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর কাজ ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে উদ্বোধন করেছিলেন শেখ হাসিনা।

এরপর ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে বসে প্রথম স্প্যান। মাঝে ২২টি খুঁটির নিচে নরম মাটি পাওয়া গেলে নকশা সংশোধনের প্রয়োজন হয়। তাতে বাড়তি সময় লেগে যায় প্রায় ১ বছর।

করোনাভাইরাস মহামারি আর বন্যার মধ্যেও কাজের গতি কমে যায়। সব বাধা পেরিয়ে অক্টোবরে বসানো হয় ৩২তম স্প্যান। এরপর বাকি স্প্যানগুলো বসানো হয়ে যায় অল্প সময়ের মধ্যেই। ঠিক পাঁচ বছরের মাথায় পূর্ণ আকৃতি পায় স্বপ্নের সেতু, যুক্ত হয় পদ্মার দুই পাড়।

‘পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্র করে গুজব ছড়ানো হয়েছিলো’ দাবি করে এখনও সেসব হচ্ছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ব্যয় সঙ্কোচন করে হেলিকপ্টার কেনা হবে এমন গুজবও তো আছে।

পদ্মা সেতুর মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া দুটি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন দাবি করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের জবাবে কাদের বলেন, তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদা সাংবাদিকদের বলেছেন, এ নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি, কিন্তু কোনও ভিত্তিপ্রস্তর হয় নি। কি মিথ্যাচার। মির্জা ফখরুল, কীভাবে যে এতো মিথ্যা কথা বলে। এদের বুকে বিষজ্বালা নিয়ে অপপ্রচার, মিথ্যাচার করছে।

এদিকে সেতু বিভাগের সচিব মঞ্জুর হোসেন আরও জানান, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে দুইটি অনুষ্ঠান করা হবে। একটি সেতুর মাওয়া প্রান্তে অন্যটি জাজিরা প্রান্তে। মাওয়া প্রান্তের অনুষ্ঠানটি হবে সুধী সমাবেশ, শুধু প্রধানমন্ত্রীই সেখানে কথা বলবেন। এরপর মাওয়া প্রান্তে উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। সবমিলিয়ে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু পার হয়ে বেলা ১১টায় জাজিরা প্রান্তের সমাবেশে যোগ দেবেন।

উদ্বোধনের সবগুলো অনুষ্ঠান ৬৪ জেলায় একযোগে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।