নড়াইলে শিক্ষকের গলায় জুতার মালা : গ্রেপ্তার ৩।

নড়াইলে শিক্ষকের গলায় জুতার মালা : গ্রেপ্তার ৩।

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঙলা কাগজ; নড়াইল : নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পড়িয়ে লাঞ্ছিত করা, শিক্ষক শ্যামল ঘোষকে মারপিট এবং মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর আগে পুলিশ বাদি হয়ে গতকাল সোমবার (২৭ জুন) প্রায় ২ শ জন অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে নড়াইল সদর থানায় মামলা দায়ের করে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো : নড়াইল সদরের বিছালী ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামের মালেক মুন্সীর ছেলে বখাটে শাওন মুন্সী, মির্জাপুর গ্রামের সৈয়দ মিলনের ছেলে সৈয়দ রিমন এবং একই গ্রামের মনিরুল শেখ। প্রাথমিকভাবে মনিরুল শেখের বাবার নাম জানা যায় নি। 

পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের পৃথক পৃথক স্থান থেকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে ঘটনার মূলহোতা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন বলেই এলাকাবাসীর অভিযোগ।

জানা গেছে, মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ছাত্র রাহুল দেব রায় গত শুক্রবার (১৭ জুন) ফেসবুকে ভারতের নুপুর শর্মার ছবি দিয়ে ‘প্রণাম নিও বস নুপুর শর্মা, জয় শ্রী রাম’ ক্যাপশন দেয়। এরপর শনিবার (১৮ জুন) সকালে তাঁকে কলেজে দেখে সাধারণ শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে।

কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) স্বপন কুমার বিশ্বাস তাৎক্ষণিক বিষয়টি উপস্থিত শিক্ষকদের জানান। এরপর স্থানীয় মির্জাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মুরসালিন, কলেজের জিবির সভাপতি অচিন চক্রবর্তী, পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, নড়াইল-১ আসনের সাংসদ কবিরুল হক মুক্তিসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে জানান।

মির্জাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মুরসালিন কলেজ থেকে রাহুলকে নিয়ে যেতে গেলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মারমুখী হয়ে উঠেন এবং বাধা দেন। কিছু সময়ের মধ্যে নড়াইল সদর থানার ওসি শওকত কবির অতিরিক্ত ফোর্স নিয়ে সেখানে পৌঁছান। রাহুলকে উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরপর নড়াইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিয়াজুল ইসলাম আরও পুলিশ নিয়ে মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজে যান। সাধারণ শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের বুঝিয়ে রাহুলকে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। ধীরে ধীরে লোকজন বাড়তে থাকে এবং উত্তেজনাও বাড়তে থাকে। পরে আরও অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় সেখানে যান। রাহুলের উপযুক্ত বিচার দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ওই এলাকার সাধারণ জনগণ ও শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে রাহুল রায়কে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন।

এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় লোকজন যোগ দেওয়ায় পুলিশের সঙ্গে জনগণের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এমনকি ৬ রাউন্ড টিয়ার শেলও নিক্ষেপ করে। এ সময় কলেজ চত্বর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। কয়েকজন পুলিশ, কলেজছাত্র ও সাধারণ মানুষ আহত হন। কলেজের বাংলা বিষয়ের শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে বাথরুমে আটকে রাখা হয়। বিক্ষুব্ধরা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন বিশ্বাস, শিক্ষক প্রশান্ত রায় ও শিক্ষক অরুন কুমার মন্ডলের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে পুড়িয়ে দেয়। সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এসব চলে। বিকেলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ঘটনাস্থলে যান। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার দু’জন মিলে উপযুক্ত বিচার দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে রাহুলকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। উদ্ধারের সময় ওই কুচক্রীদের উস্কানিতে একদল যুবক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরিয়ে মারপিট করেন।

ঘটনার সময় একটি কুচক্রী মহল তাদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করে আন্দোলন ঘনীভূত করে।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘আমি বড় ধরনের ষড়যন্ত্রের শিকার। অহেতুক আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা হচ্ছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাই।’

এলাকার সাধারণ মানুষ উস্কানি দিয়ে কলেজ এলাকায় নৈরাজ্য সৃষ্টি, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে জুতার মালা দেওয়া ও নাশকতার সঙ্গে জড়িত সকল অপরাধীর গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।