দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী

ডন প্রতিবেদন : গ্লাসগোতে জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে দুই সপ্তাহের সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে রবিবার (১৪ নভেম্বর) সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে তিনি ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। প্রধানমন্ত্রীর এ সফরকে ‘ঐতিহাসিক’হিসেবে বর্ণনা করেছেন তাঁর সফরসঙ্গী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তাঁর ভাষায়, ‘এই সফরে তাঁকে (প্রধানমন্ত্রী) যে সম্মান জানানো হয়েছে, এ ধরনের সম্মান আগে কখনও বাংলাদেশের কোনও রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান পান নি।’ জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে (কপ২৬) যোগ দিতে গত ৩১ অক্টোবর স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনের মূল পর্বের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ে বৈঠকেও অংশ নেন তিনি। ‘ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম’ এর সংলাপে সভাপতি হিসেবে অংশ নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কার্বন নিঃসরণকারী উন্নত দেশগুলো প্রতিশ্রুত তহবিল না দেওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো আরও অসহায় হয়ে পড়েছে। সেখানে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনেরসঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্রিটেনের রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকার প্রিন্স চার্লসসহ বিভিন্ন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান, বিভিন্ন সংস্থা প্রধানেরসঙ্গেও তাঁর বৈঠক হয়। কপ-২৬ সম্মেলনে অংশগ্রহণ শেষে গত ৩ নভেম্বর লন্ডনে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২১: বিল্ডিং সাসটেইনেবল গ্রোথ পার্টনারশিপ’ শীর্ষক রোড শোর উদ্বোধন ছাড়াও বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন। পরদিন লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে নতুন প্রজন্মের ব্রিটিশ বাংলাদেশিদেরসঙ্গেও আনন্দময় একটি সন্ধ্যা কাটান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে গবেষক, ফুটবলার, সঙ্গিতশিল্পী এবং নবীন উদ্যোক্তারাও ছিলেন। প্যারিস রওনা হওয়ার আগে প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদেরসঙ্গে কথা বলেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলীয় নেতাকর্মীদের তিনি বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে সবার সঙ্গে সরাসরি দেখা করা সম্ভব হয় নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সবারসঙ্গে দেখা হবে। নেতাকর্মীদের দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে যেতে বলেন শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার লন্ডন থেকে প্যারিসে পৌঁছালে বিমানবন্দরে ‘স্ট্যাটিক গার্ড’ দেওয়া হয় শেখ হাসিনাকে। ফ্রান্স সফরের প্রথম দিন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর আমন্ত্রণে এলিজে প্রাসাদে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে দুই নেতার বৈঠক হয়। ফরাসি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটির প্রধানমন্ত্রী জ্যঁ কাসতেক্সেরসঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। ফ্রান্স সফরে দেশটির ব্যবসায়ীদের অন্যতম সংগঠন মুভমেন্ট অব দ্য এন্টারপ্রাইজ অব ফ্রান্স (এমইডিইএফ) এর উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। প্যারিস পিস ফোরামের (পিপিএফ) অনুষ্ঠানেও বক্তব্য দেন তিনি। অনুষ্ঠানে তিনি হুঁশিয়ার করেন, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমারে ফেরাতে না পারলে বাংলাদেশ থেকে নিরাপত্তা ঝুঁকি বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাঁর এই সফরে কোভিড ব্যবস্থাপনা, পানি ও বিমান চলাচল খাতে আর্থিক সহায়তা ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার বাড়াতে ফ্রান্সেরসঙ্গে তিনটি চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া প্যারিসে ইউনেস্কো সদর দপ্তরে সৃজনশীল অর্থনীতির জন্য ‘ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ পুরস্কার বিতরণ এবং ইউনেস্কোর ৭৫তম বার্ষিকীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানসহ বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশ নেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের প্রস্তাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে এই পুরস্কার চালু করেছে জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা– ইউনেস্কো। গত ১১ ডিসেম্বর ইউনেস্কোর নির্বাহী পরিষদের শরৎকালীন অধিবেশনে এ পুরস্কার প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বঙ্গবন্ধুর নামে জাতিসংঘের কোনও সংস্থার প্রবর্তন করা প্রথম আন্তর্জাতিক পুরস্কার এটি। ‘ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ইন দি ফিল্ড অব ক্রিয়েটিভ ইকোনমি’ দেওয়া হবে প্রতি দুই বছরে একবার, যার আর্থিক মূল্য ৫০ হাজার ডলার।