দুর্বল ৫ ব্যাংকে সমন্বয়ক নিয়োগ, আরও ৫ ব্যাংকে বসানো হচ্ছে

দুর্বল ৫ ব্যাংকে সমন্বয়ক নিয়োগ, আরও ৫ ব্যাংকে বসানো হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ ও ডন : বেসরকারি খাতের পাঁচটি ব্যাংকে সমন্বয়ক নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের ঘোষণা অনুযায়ী, এসব ব্যাংক দুর্বল। তারই প্রেক্ষিতেই ব্যাংকগুলোতে সমন্বয়ক বসানো হয়েছে। ব্যাংক পাঁচটি হলো : এবি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক। এর বাইরে আরও পাঁচটি ব্যাংকে সমন্বয়ক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।

তবে ব্যাংকগুলোর অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধে সমন্বয়ক নিয়োগ কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, এসব ব্যাংকে আগে থেকেই পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া ছিলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষক থাকা অবস্থাতেই এসব ব্যাংকে নানা ধরনের অনিয়মের ঘটনা ঘটে। পর্যবেক্ষকেরা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পর্ষদ, নির্বাহী কমিটি ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় অংশ নিতেন। এরপর তা নিয়ে মন্তব্য দেওয়ারও সুযোগ ছিলো।

তবে নতুন করে যেসব ব্যাংকে সমন্বয়ক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা ব্যাংকের পর্ষদ সভায় অংশ নিতে পারবেন না। এক্ষেত্রে ব্যাংকের সব নথিপত্র দেখতে ও তদারক করতে পারবেন। এদিকে গত কয়েক বছরে যেসব ব্যাংকে বড় ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে সেগুলোকে দুর্বল ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত করে নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, সমন্বয়কেরা চাইলে পর্ষদ সভাতেও অংশ নিতে পারবেন। দুর্বল সব ব্যাংকই ভবিষ্যতে ধাপে ধাপে তদারকির আওতায় আসবে।

গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ১২ জুলাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যোগ দিয়েই দুর্বল ব্যাংকগুলোকে পৃথকভাবে তদারকির উদ্যোগ নেন। গত ৩ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর বলেন, ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ১০টি দুর্বল ব্যাংককে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোর সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করা হবে। প্রতিটি ব্যাংকের অগ্রগতি বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পর্যবেক্ষণ করবেন।

জানা গেছে, দায়িত্ব নেওয়ার পর একে একে দুর্বল ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সভা করেন গভর্নর। এসব সভায় অংশ নেন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান আর্থিক কর্মকর্তারা (সিএফও)। সভার পর একে একে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করা হচ্ছে।

এরই মধ্যে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড (এনবিএল), বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক), বিদেশি খাতের আইসিবি ইসলামিক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের সঙ্গে সভা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সব শেষ সভা করেছে এবি ব্যাংকের সঙ্গে। এর মধ্যে কোনও কোনোটির সঙ্গে তিন বছর মেয়াদি এমওইউ সই হয়েছে। নির্বাহী পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে সমন্বয়ক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় পাঁচ ব্যাংকে।

ন্যাশনাল ব্যাংকে সমন্বয়ক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সাইফুল ইসলামকে, কমার্স ব্যাংকে নির্বাহী পরিচালক ফোরকান হোসেনকে, পদ্মা ব্যাংকে শফিকুল ইসলামকে, এবি ব্যাংকে আনোয়ার হোসেনকে এবং ওয়ান ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক নূরুল আমীনকে। আর আগে থেকেই পর্যবেক্ষক রয়েছে সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও বেসিক ব্যাংকে।

সবশেষ এবি ব্যাংকের সঙ্গে সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারসহ অন্য কর্মকর্তারা। আর ব্যাংকের পক্ষে চেয়ারম্যান খায়রুল আলম চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারিক আফজাল প্রমুখ।

ব্যাংকটির প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার নিরাপত্তা সঞ্চিতি ঘাটতি পূরণে বিশেষ সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক, তাতে ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটে। কারণ, নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয় ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সুবিধা না পেলে ব্যাংকটিকে বড় অঙ্কের লোকসান গুনতে হতো। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, এই কারণেই ব্যাংকটিকে দুর্বল তালিকায় নিয়ে বিশেষ তদারকির আওতায় আনা হয়েছে।

এবি ব্যাংকের এমডি তারিক আফজাল বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক সভা ডেকেছিলো। আমরা অংশ নিয়েছিলাম। এতে আমরা ব্যাংকের উন্নয়নে যে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি, তা তুলে ধরেছি।’

এ অবস্থায় সমন্বয়ক নিয়োগের মাধ্যমে ব্যাংক খাতে কতোটা সুফল আসে, সেটাই দেখার বিষয়।