দুদকে ছালামের বিরুদ্ধে অভিযোগ : খতিয়ে দেখা হচ্ছে অর্থ পাচারও

দুদকে ছালামের বিরুদ্ধে অভিযোগ : খতিয়ে দেখা হচ্ছে অর্থ পাচারও

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঙলার কাগজ ও ডন; রাহাতুল রাফি : রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক খাতের জনতা ব্যাংকের সদ্য সাবেক হওয়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুছ ছালাম আজাদের বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ জমা পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। কয়েক সময় আগে তিনি ব্যাংকটি থেকে অবসরে যান। আর মূলত অবসরে যাওয়ার পরই এসব অভিযোগ জমা পড়েছে। আর অভিযোগগুলো আমলেও নিয়েছে দুদক। অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে ঋণ প্রদানে কমিশন গ্রহণের মাধ্যমে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়া, পদোন্নতিতে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়া, বিভিন্ন রকম জালিয়াতিতে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়া এবং বিপুল পরিমাণে অর্থ পাচার। আব্দুছ ছালাম আজাদের ব্যবস্থাপক থাকার সময় থেকেই অনিয়মগুলোর অভিযোগ জমা পড়েছে। তবে দুদক সিদ্ধান্ত নিয়েছে ছালাম মহাব্যবস্থাপক (জিএম) থাকার সময় থেকেই যেসব অভিযোগ রয়েছে, সেগুলো আগে তদন্ত করা হবে।

অভিযোগের ব্যাপারে জানার জন্য বুধবার (২ আগস্ট) আব্দুছ ছালাম আজাদকে ফোন দেওয়া হয়। তিনি ফোন ধরেন নি। পরে খুদেবার্তাও পাঠানো হয়। এরপরও নিরুত্তর ছিলেন আব্দুছ ছালাম আজাদ।

জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, আমাদের কাছে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তার অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে। সেগুলোর মধ্যে যেগুলো আমাদের প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে আমরা সম্পূর্ণ তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

দুদকের সূত্র জানিয়েছে, এসব অভিযোগের মধ্যে আব্দুছ ছালাম আজাদের অভিযোগও রয়েছে।

জানা গেছে, আব্দুছ ছালাম আজাদের আমলের যেসব ঋণ জালিয়াতির ব্যাপারে দুদকে অভিযোগ জমা পড়েছে, সেগুলোর অধিকাংশই এলএটিআর (বিশ্বাসের ভিত্তিতে ঋণ), করপোরেট গ্যারান্টি এবং আইবিপির (অভ্যন্তরীণ বিল ক্রয়) ঋণ। 

জনতা ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের অক্টোবরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন আব্দুছ ছালাম আজাদ। ওই সময়ে ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিলো ৪৫ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ছিলো ৭ হাজার ৬ শ কোটি টাকা। এখন ব্যাংকটির ঋণ বেড়ে হয়েছে ৮৫ হাজার ২০৬ কোটি টাকা, আর খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ১৪ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ, গত সাড়ে পাঁচ বছরে ঋণ বিতরণ ও খেলাপি ঋণ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ঋণ জালিয়াতি হওয়ার কারণেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ এমন বেড়েছে বলে জানা গেছে। আবার বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, জনতা ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও অনেক বেশি। তবে সেগুলোকে খেলাপি দেখাচ্ছে না রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এ ব্যাংক। আর এটি হয়েছে আব্দুছ ছালাম আজাদের আমলে। আর এসব বিষয়ই আমলে নিয়েছে দুদক।

জানা গেছে, বর্তমানে দেশের অন্যতম শীর্ষ ঋণখেলাপি অ্যাননটেক্স ও ক্রিসেন্ট গ্রুপ এবং প্রভাবশালী বেশ কিছু ব্যবসায়ী জনতা ব্যাংকের বড় গ্রাহক। আর এসব গ্রাহককেই ব্যাংকটি থেকে অনিয়ম এবং জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ দিয়েছেন আব্দুছ ছালাম আজাদ।