ঢাকায় স্কুলশিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথম টিকা পেলো তাহসান ও তমা

ঢাকায় স্কুলশিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথম টিকা পেলো তাহসান ও তমা
ডন প্রতিবেদন : স্কুল ও কলেজের ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি আজ সোমবার (১ নভেম্বর) শুরু হয়েছে। রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে আজ সোমবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। কেন্দ্রটিতে করোনার প্রথম টিকা পেয়েছে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী তাহসান হোসেন ও মাহজাবিন তমা। তাঁরা দুজনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাদের ফাইজারের টিকা দেওয়া হয়েছে। টিকা নেওয়া শেষে নির্ধারিত বিশ্রামকক্ষে বিশ্রাম নিচ্ছিল তাহসান। সে বলে, ‘টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমে একটু দ্বিধা লাগছিল। পরে দ্বিধা কেটে যায়। আমি অনেক ভাগ্যবান। করোনার ভয়টা আমার মধ্যে আর থাকবে না। আমার বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আমিই প্রথম টিকা নিলাম। আমি সহপাঠী শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানাচ্ছি, তারাও যাতে এ টিকা নেয়।’ তাহসানের বাবা মোহাম্মদ মোফাজ্জেল হোসেন আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক। তিনি বলেন, এই টিকা কর্মসূচি সফল করতে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সহায়তা দরকার। শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে করোনার টিকা নিলে তারা নিরাপদ থাকবে। একই সময় টিকা নেয় আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহজাবিন তমা। তার বাসা শাজাহানপুরে। তমা বলেন, ‘প্রথমে একটু ভয় ভয় লাগছিল। তবে এখন আর ভয় লাগছে না। বরং আমি টিকা নিতে পেরে আনন্দিত।’ ‘সব শিশু টিকা নিবে, স্বাস্থ্যঝুঁকি কমে যাবে’ প্রতিপাদ্যে আজ শুরু হয়েছে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের কোভিড-১৯ টিকাদান কার্যক্রম। সকালে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে রাজধানীর আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ শুধু আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে টিকা দেওয়া হচ্ছে। আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে টিকা দেওয়া হবে হার্ডকো ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, সাউথ পয়েন্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, চিটাগাং গ্রামার স্কুল, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কাকলী স্কুল, মিরপুর কমার্স কলেজ, স্কলাস্টিকা (মিরপুর) ও সাউথ ব্রিজ স্কুলে। প্রাথমিকভাবে নির্ধারিত আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরও টিকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে ২২টি জেলায় স্কুলশিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। শিগগিরই এসব জেলায় টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব জেলায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হবে। গতকাল রোববার (৩১ অক্টোবর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ও ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্যসচিব শামসুল হক এক অনলাইন বুলেটিনে বলেন, শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে ফাইজারের টিকা। এই টিকা শীততাপনিয়ন্ত্রিত বুথে দিতে হয়। প্রতি স্কুলে ২৫টি করে বুথ থাকবে। এসব বুথে দিনে চার থেকে পাঁচ হাজার শিশুকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। শামসুল হক বলেন, নিবন্ধন ছাড়া কোনো শিক্ষার্থী টিকা নিতে পারবে না। টিকা নেওয়ার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের নামের তালিকা ও জন্মনিবন্ধন নম্বর আইসিটি বিভাগে পাঠাবে। আইসিটি বিভাগ সেটি যাচাই করে সুরক্ষা অ্যাপে দেবে। সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে স্কুল কর্তৃপক্ষ বা শিক্ষার্থীর অভিভাবকেরা টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন। টিকা নেওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের টিকা কার্ড ও জন্মনিবন্ধন সনদের ফটোকপিসঙ্গে আনতে হবে। স্কুলে টিকা কার্যক্রম চলাকালে সেখানে চিকিৎসক থাকবেন। যেসব স্কুল ও কলেজে টিকা দেওয়া হবে, সেখানে অভিভাবকদের ভিড় না করার অনুরোধ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এর আগে গত ১৪ অক্টোবর মানিকগঞ্জে পরীক্ষামূলকভাবে ১২০ শিক্ষার্থীকে ফাইজারের টিকা দেওয়া হয়। টিকা নেওয়া শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা হয়নি। পরবর্তী সময়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তে সারা দেশের শিক্ষার্থীদের (১২-১৭ বছর) টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।