জনগণের সেবাই আওয়ামী লীগের একমাত্র মূলমন্ত্র : প্রধানমন্ত্রী

জনগণের সেবাই আওয়ামী লীগের একমাত্র মূলমন্ত্র : প্রধানমন্ত্রী

বাসস : প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, তাঁর দল ও সরকার সর্বদা জনগণের দুঃখ-কষ্টে পাশে থাকবে। তিনি বলেন, জনগণের সেবাই আওয়ামী লীগের একমাত্র মূলমন্ত্র।

তিনি বলেন, ‘আমরা সর্বদা জনগণের পাশে আছি এবং জনগণের সেবা করাই আমাদের মূলমন্ত্র। দেশবাসীকে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে যা যা প্রয়োজন, আওয়ামী লীগ সরকার সবই করে যাচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা শনিবার (৭ জানুয়ারি) অপরাহ্নে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম যৌথসভায় সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সভার কার্যক্রম শুরুর আগে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী গোপালগঞ্জের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং একটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু আওয়ামী লীগ সরকারই নয়, এর নেতাকর্মীরাও জনগণের প্রয়োজনে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, করোনা ও যে কোনও দুর্যোগে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের জনগণের পাশে দাঁড়ানো থেকে প্রমাণিত হয় যে, দল সর্বদা জনগণের প্রতিটি দুঃখ-কষ্টে পাশে থাকে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নবগঠিত কমিটির সকল সদস্য দেশবাসীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট দেশে রূপান্তরের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তিনি বলেন, আমাদের (আওয়ামী লীগের) নীতি হচ্ছে জনগণের দুঃখ-কষ্টে তাঁদের পাশে দাঁড়ানো। কারণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশবাসীকে একটি সুন্দর জীবন দিতে চেয়েছিলেন এবং আমরা সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠন মানুষের পাশে দাঁড়ায়, এটাই হচ্ছে আমাদের নীতি। জাতির পিতা এদেশ স্বাধীন করে গেছেন, কাজেই এ দেশের  মানুষকে একটা উন্নত জীবন দেওয়াটাই আমাদের লক্ষ্য। শুধু আওয়ামী লীগ সরকার নয়, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও সব সময় মানুষের পাশে আছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, আমাদের যে নতুন কমিটি হয়েছে, আমাদের কমিটির সদস্যরা প্রত্যেকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বাংলার মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আমাদের যা যা করণীয়, তা আমরা করে যাবো, তাঁদের পাশে আমরা চিরদিন থাকবো, চিরদিন আছি এবং মানুষের সেবা করাটাই আমাদের সব থেকে বড় লক্ষ্য।

২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপনকালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের যে মর্যাদা পেয়েছে, তা ধরে রেখে এগিয়ে যাওয়াই তাঁর সরকারের লক্ষ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে কী কী করণীয়, সে বিষয়েও তাঁর  সরকার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। যেমন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে উপকমিটি করে দেওয়া হয়েছে, সেখানে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে কোথায় কি সুবিধা পেতে পারি, কোথায় সমস্যা হতে পারে- সেগুলো সমাধানেও কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত তিন মেয়াদে সরকার পরিচালনা করতে এসে প্রতি নির্বাচনেই তাঁর দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে মানুষের সেবা করার সুযোগ পেয়েছে। আর সেজন্য আজকে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধে চেতনায় এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছে।

তিনি বলেন, জাতির পিতার ৭ মার্চের যে ভাষণ ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর এ দেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো, সেই ৭ মার্চের ভাষণ আজ আন্তর্জাতিক মর্যাদা পেয়েছে। যে ‘জয়বাংলা’ স্লোগান নিষিদ্ধ ছিলো, তাকে আমরা আজকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ফিরে পেয়েছি এবং বাংলাদেশ আজকে আর্থ-সামাজিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, পাশাপাশি মানুষের আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন হচ্ছে। প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত আমরা পারি মানুষের জন্য দু বেলা দু মুঠো খাবারের ব্যবস্থা আমরা করতে পেরেছি। আর জাতির পিতা শেখ মুজিবের বাংলায় কোনও মানুষ আর ভূমিহীন-ঘরহীন-ঠিকানাবিহীন থাকবে না, আমরা ঘর করে দিচ্ছি। যাঁরা বাকি আছে, তাঁদেরকেও ঘর করে দেবো।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেওয়ার সাফল্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রতিটি ঘরে আলো জ্বেলে প্রতি ঘরকে আমরা আলোকিত করেছি। পাশাপাশি স্বাক্ষরতার হার ৪৫ ভাগ থেকে ৭৫ দশমিক ২ ভাগে উন্নীত করা, মানুষের আয়ুষ্কাল ৬৪ বছর থেকে ৭৩ বছরে উন্নীত করা, খাদ্যের সঙ্গে পুষ্টি নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা, মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীতকরণ, ১৮ হাজার ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও ৩০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে প্রদানসহ চিকিৎসাসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া এবং করোনা ভ্যাকসিন বিনা পয়সায় বিতরণেও তাঁর সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

করোনার সময় একদম তৃণমূল মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশাজীবীদের যেনো কোনও সমস্যা না হয়, সেজন্য নগদ অর্থসহ বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি ও শিল্পসহ অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখার তথ্যও দেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে আরও ব্যাপকভাবে অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়েছে। আজকে উন্নত দেশও হিমশিম খাচ্ছে এবং নিজেদেরকে তাঁরা অর্থনৈতিক মন্দার দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে, কিন্তু আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশ এখনও সে পর্যায়ে যায় নি এবং তাঁর সরকার এখনও বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে। পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের কর্মসূচির কলেবর বৃদ্ধি করে দিয়েছে। অতি উচ্চমূল্যে বিদেশ থেকে ক্রয় করতে হলেও ভর্তুকি প্রদান করে নিত্যপণ্য মানুষের মাঝে সরবরাহ করছে।

এর মধ্যে মাত্র ১৫ টাকায় চাল, মধ্যবিত্তের জন্য টিসিবি’র বিশেষ কার্ডের মাধ্যমে চাল ক্রয়ের সুবিধা, ভিজিডি-ভিজিএফের মাধ্যমে একেবারে হত-দরিদ্রদের খাদ্য সাহায্য প্রদান, বয়স্ক ভাতা, বিধবা বা স্বামী পরিত্যাক্তা ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতাসহ নানা ধরনের ভাতা বর্ধিত হারে প্রদান করছে, যাতে মানুষের কোনও কষ্ট না হয়।

তিনি এ সময় দেশের সকল অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানোয় তাঁর আহ্বান পুণর্ব্যক্ত করে বলেন, অনেক দেশে আজকে খাদ্যের জন্য হাহাকার। কিন্তু আমরা এই মাটিকে যথাযথ ব্যবহার করতে পারলে, নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে অন্যকেও সাহায্য করতে পারবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালে জাতির পিতা বলেছিলেন, আমাদের মাটি আছে, মানুষ আছে; এই মাটি ও মানুষ দিয়েই আমি এ দেশকে গড়ে তুলবো। তিনি আরও একটি কথা বলতেন, যে দেশের মাটি এতো উর্বর, যেখানে বীজ ফেললেই ফসল হয়, সে দেশের মানুষ না খেয়ে কষ্ট পাবে কেনো? আমরা তারই নীতি অনুসরণ করি। সেজন্য আমার এটাই আহ্বান যে, আমাদের দেশে যে যেভাবে পারেন, ফসল ফলাতে হবে। নিজেকেই নিজের খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে।

তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে যা করণীয়, সেটা আওয়ামী লীগ যতোদিন সরকারে আছে, মানুষের কষ্ট দূর করার জন্য যা যা করণীয় তা করে যাবে। সেটা আমরা করে যাচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষকে স্বাধীনতা যেমন এনে দিয়েছে, তেমনি আর্থ-সামাজিক উন্নতিও এনে দিয়েছে। মাত্র ১৪ বছরে বাংলাদেশ আজকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বে একটা মর্যাদা পেয়েছে। এই জাতিকে একটি আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন জাতি হিসেবে আমরা গড়ে তুলতে চাচ্ছি এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলেছি। সেইসঙ্গে আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও নিয়েছি। সারা বাংলাদেশে আমরা যেমন হাইটেক পার্ক করছি, স্কুলগুলোতে কম্পিউটার ল্যাব করছি, প্রযুক্তি শিক্ষা এবং বহুমুখী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।

আমাদের তরুণ প্রজন্ম যেনো নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, সেজন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে বিনা জমানতে ঋণ প্রদান, বর্গাচাষীদের বিনা জমানতে ঋণ দেওয়া হচ্ছে, কৃষকদের জন্য ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে ভতুর্কির টাকা সরাসরি দেবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রায় ২ কোটি কৃষককে কৃষি উপকরণ ক্রয় করার জন্য কার্ড দেওয়া হয়েছে, ২ কোটি ৫০ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি-উপবৃত্তি দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ, শীতে কম্বল ও গরম কাপড় বিতরণ করার মাধ্যমে তাঁর সরকারের যতোটুকু সাধ্য, তা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে এবং বিত্তবানদেরকেও জনগণের দুঃখ-কষ্টে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি, বলেন তিনি।