চবিতে মানববন্ধন : শিক্ষক উৎপলের মৃত্যু ১৭ কোটি মানুষের জন্য লজ্জার-অপমানের।

চবিতে মানববন্ধন : শিক্ষক উৎপলের মৃত্যু ১৭ কোটি মানুষের জন্য লজ্জার-অপমানের।

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঙলা কাগজ; চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় : ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ার হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তাঁরা এই হত্যার বিচার দাবি করেছেন। একইসঙ্গে বলেছেন, শিক্ষক উৎপলের মৃত্যু বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের জন্য লজ্জার, অপমানের।

আজ মঙ্গলবার (২৮ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের শহিদ মিনারের সামনে ওই মানববন্ধন হয়। কর্মসূচির আয়োজক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১তম ব্যাচ (২০০৫-২০০৬ শিক্ষাবর্ষ)।

উৎপল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ২০০৫-২০০৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। পাস করার পর তিনি আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতা করেছিলেন। এই কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ছিলেন তিনি।

মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ফণী ভূষণ বিশ্বাস বলেন, তিনি আর উৎপল একই ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। উৎপল হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ছিলেন। গত শনিবার দুপুরে দশম শ্রেণির ছাত্র জিতু ক্রিকেট খেলার স্টাম্প দিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় শিক্ষক উৎপলের ওপর। গতকাল সোমবার ভোরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় উৎপল মারা যান। হামলাকারী ছাত্রের বিরুদ্ধে উত্ত্যক্তের অভিযোগ দিয়েছিলেন এক ছাত্রী। হামলাকারী ছাত্র বিদ্যালয়ের সভাপতির আত্মীয়। এই হত্যায় জড়িত সবাইকেই শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আজকে ২০২২ সালে আমরা সভ্যতার এমন একপর্যায়ে দাঁড়িয়েছি, যেখানে একজন ছাত্র তাঁর শিক্ষককে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। আর আমাদের সেই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে হচ্ছে। এই ঘটনাকে কোনও সাধারণ অপরাধ হিসেবে দেখলে চলবে না। সভ্যতার উন্নয়নের নিচে আমরা যে অন্ধকার লালন করি, এই ঘটনা তারই প্রমাণ। সামগ্রিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে আমরা যে একটি নগ্ন-নোংরা-পিছিয়ে পড়া সভ্যতা বহন করে চলেছি, এ ঘটনা তারই প্রমাণ।’

নাসির উদ্দিন বলেন, ‘যে শিক্ষার্থীকে আমরা ক্লাসে পড়াই, যে শিক্ষার্থীকে আমরা আলোকিত করি, আলোড়িত করি, সেই শিক্ষার্থীর আঘাতে আমাদের মৃত্যুবরণ করতে হবে, এর চেয়ে লজ্জার, দুঃখের, ঘৃণার, অপমানের আর কিছু হতে পারে না। এ অপমান, এ লজ্জা শুধু উৎপলের নয়, শুধু শিক্ষক সমাজের নয়; এ অপমান, এ লজ্জা বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের।’

উৎপলের সহপাঠী মোহাম্মদ সুমনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এনায়েত উল্যা পাটওয়ারি, একই বিভাগের ভূঁইয়া মো. মনোয়ার কবীর, ক্রিমিনোলজি বিভাগের সভাপতি মো. সাখাওয়াত হোসেন, অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রুনা সাহা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ নিয়াজ মোরশেদ প্রমুখ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এ ঘটনা নিছক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কের ব্যাপার নয়। একে দেখতে হবে সমাজব্যবস্থার প্রগতির বাধা হিসেবে। একে দেখতে হবে, সমাজকে পিছিয়ে টেনে নেওয়ার নোংরা লক্ষণ হিসেবে।

বক্তারা বলেন, এই প্রতিবাদ শুধু শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নয়, এই প্রতিবাদ দেশের সব বিবেকবান মানুষের। একজন অপরাধী, একজন খুনিকে ধরে শাস্তি দিলেই এই অপরাধের দায় থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। এ ধরনের ঘটনা থেকে রেহাই পেতে সমাজের সংস্কার করা জরুরি হয়ে পড়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে শ্রদ্ধা-ভালোবাসার যে সংস্কৃতি, তাকে লালন করতে হবে। চর্চা করতে হবে। তা না হলে উৎপলের মতো ঘটনা আবার দেখা যাবে। তবে আগে অবশ্যই উৎপলের হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।