চীনা হুমকির মুখে তাইওয়ান সফর শুরু করেছেন ন্যান্সি পেলোসি।
নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংসদের নিম্নকক্ষ হাউস অব রেপ্রেজেনটেটিভের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিকে বহনকারী একটি বিমান তাইওয়ানে অবতরণ করেছে; যা গত ২৫ বছরের মধ্যে এই স্বশাসিত দ্বীপে সর্বোচ্চ কোনও মার্কিন কর্মকর্তার সফর।
মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে বৃত্তাকার পথে উড়ে যাওয়ার পর মার্কিন সরকারের বিমানটি তাইপের সং শান বিমানবন্দরে নেমে আসে।
তাইওয়ানের পূর্ব উপকূল বরাবর উত্তরে যাওয়ার আগে বিমানটি বোর্নিও এবং ফিলিপিন্স অতিক্রম করে।
চীনা রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতি প্রচার করেছে, যাতে বলা হয়েছে, এই সফর চীন-মার্কিন সম্পর্কের রাজনৈতিক ভিত্তির ওপর গুরুতর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে, এবং এটি চীনের সার্বভৌমত্ব এবং ভৌগলিক অখণ্ডতার গুরুতর লঙ্ঘন।
তাইপের বিমানবন্দর থেকে পেলোসি সরাসরি তাইপেতে তাঁর হোটেলে যান এবং বুধবার (৩ জুলাই) সকালে তাইওয়ানের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি সাই ইং-ওয়েনসহ তাইওয়ানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
তাইওয়ানে অবতরণের পর পরই টুইটারে এক পোস্টে ন্যান্সি পেলোসি লিখেছেন, তাঁর প্রতিনিধিদলের সফর ‘তাইওয়ানের প্রাণবন্ত গণতন্ত্রকে সমর্থন করার জন্য আমেরিকার অটুট প্রতিশ্রুতিকে সম্মানিত করেছে’।
তিনি বলেন, ‘তাইওয়ানের ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষের সঙ্গে আমেরিকার সংহতি আজ আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং তাঁর সফর কোনোভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘস্থায়ী নীতির বিরোধিতা করে না।’
ওই অঞ্চলে ‘স্থিতাবস্থা পরিবর্তনের জন্য (চীনের) এক তরফা প্রচেষ্টার বিরোধিতা যুক্তরাষ্ট্র করে চলেছে,’ টুইটে তিনি মন্তব্য করেন।
চীন বারবার করে পেলোসির এই সফরের বিরুদ্ধে সতর্ক করে আসছে এবং মঙ্গলবার (২ আগস্ট) বলেছে যে, এই সফরের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘মূল্য দিতে হবে’।
ফলে মার্কিন স্পিকারের এই সফর ওই এলাকায় দুর্ঘটনাজনিত সামরিক সংঘর্ষের উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলছে।
এই সফরের ঠিক আগে মঙ্গলবার রাতে তাইওয়ান থেকে চীনা মূল ভূখণ্ডকে বিভক্তকারী সীমারেখায় চীন যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে।
চীনা বাহিনী ওই এলাকায় তাজা গোলাবারুদ ব্যবহার করে সামরিক মহড়াও চালিয়েছে।
চীনা সামরিক বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড অনলাইনে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলেছে, তাঁরা ‘যে কোনও ঘটনার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত’।
মার্কিন ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কারবি চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে বলেছিলেন যে সামরিক উস্কানি দিয়ে চীন এই সফরের প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে তাইওয়ানের কাছাকাছি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা এবং বড় আকারের বিমান বা নৌ মহড়া শুরু করা, কিংবা তাইওয়ান প্রণালীতে নৌ অবরোধের ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য ‘ভুয়া আইনি দাবি’ করা।
কংগ্রেসের স্পিকার মার্কিন সরকারের তৃতীয় সর্বোচ্চ পদ এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের পরই পেলোসির অবস্থান।
তিনি বেইজিং সরকারের দীর্ঘদিনের এক সমালোচক।
তাইওয়ান একটি স্বশাসিত দ্বীপ, তবে চীন একে নিজস্ব ভূখণ্ড হিসেবে দাবি করে।
সফরসূচিতে তাইওয়ানের নাম উল্লেখ না করে মার্কিন স্পিকার রোববার তাঁর এশিয়া সফর শুরু করেন।
এখন পর্যন্ত তিনি সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়া সফর করেছেন এবং এরপর দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে যাবেন বলে কথা রয়েছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং চীনা মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে তাইওয়ানের একত্রীকরণকে তাঁর রাজনৈতিক এজেন্ডার মূল অংশে পরিণত করেছেন। এবং গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সতর্ক করেছেন যে, আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার জন্য তাইওয়ানের কোনও উদ্যোগকে সমর্থন করে ‘আগুন নিয়ে খেলা’ করবেন না।