চট্টগ্রাম মেডিক্যালে মরার উপর খাঁড়ার ঘা

চট্টগ্রাম মেডিক্যালে মরার উপর খাঁড়ার ঘা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঙলার কাগজ; চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিসের ফি বাড়ানো হয়েছে। আর তাতে বিপাকে পড়েছেন কয়েক হাজার গরীব রোগী। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন রোগী ও তাঁদের স্বজনরা।

রোববার (৮ জানুয়ারি) বেলা ১১টা থেকে কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার স্যান্ডরের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। এ সময় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্যান্ডরের কর্মচারীরা রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, কোনও কারণ ছাড়াই ডায়ালাইসিসের ফি বাড়ানো হয়েছে। এতে প্রতিমাসে ডায়ালাইসিস করতে তাঁদের প্রায় দ্বিগুণ খরচ বহন করতে হবে। বর্তমানে একজন রোগীকে প্রতিমাসে ৮ বার কিডনি ডায়ালাইসিস করতে হয়।

ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে আগেরদিন শনিবারও (৭ জানুয়ারি) মানববন্ধন করেছেন রোগীরা। এরপর রোববার সকাল পর্যন্ত কোনও সুরাহা না হওয়ায় তাঁরা বিক্ষোভ শুরু করেন।

শনিবার দুপুরে ডায়ালাইসিস সেন্টারের সামনে ও হাসপাতাল পরিচালকের কার্যালয়ে গিয়ে বিক্ষোভ করলেও রোববার হাসপাতালের সামনের দুই পাশের সড়ক বন্ধ করে মূল ফটকের সামনে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। এ সময় তাঁরা ফেস্টুন, ব্যানার করেন। পরে পুলিশ এসে বিক্ষোভকারী রোগী ও তাঁদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে।

এরপর দুপুর ২টার দিকে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান এসে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা তাঁর কাছে কিডনি ডায়ালাইসিসে গত বছরের ফি ও সুবিধা বহাল রাখার দাবি জানান।

সূত্র জানায়, একজন রোগীকে প্রতিমাসে ৮ বার কিডনি ডায়ালাইসিস করতে হয়। এজন্য আগে থেকে মাসের প্রথম দুবার ২ হাজার ৭৯৫ টাকা করে পরিশোধ করতে হতো। পরের ছয়বারই ৫১০ টাকা করে পরিশোধ করতে হতো। কিন্তু নতুন বছরের শুরু থেকে ২ হাজার ৭৯৫ টাকার পরিবর্তে ২ হাজার ৯৩৫ টাকা করা হয়। প্রথম দুইবারের পরিবর্তে এখন চারবার ওই ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। আবার অবশিষ্ট চারবার ৫১০ টাকার স্থলে ৫৩৫ টাকা করা হয়েছে। এতে প্রতি রোগীর ডায়ালাইসিস ফি মাসে প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। আগে যেখানে প্রতিমাসে ৮ হাজার ৬৫০ টাকা খরচ হতো, সেখানে নতুন নিয়মে ১৩ হাজার ৮৮০ টাকা খরচ হচ্ছে।

বিক্ষোভস্থলে এসেও ফি কমানোর এখতিয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নেই জানিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান দাবি করেন, ফি বাড়ানোর বিষয়টি চুক্তিতেই উল্লেখ আছে। আর এ চুক্তি সরকারের সঙ্গে ওই প্রতিষ্ঠানের। চুক্তি অনুযায়ী, এ ফি প্রতি বছরই ৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। শুধু যে এ বছর বাড়লো, তা কিন্তু নয়। প্রতি বছর রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু আমাদের কম ফি’র সেশন নির্ধারিত। যার কারণে আগে কোনও রোগী মাসে ৪-৫টি সেশন কম ফি’র সুবিধা পেতেন, এখন সে সুবিধাও আমাদের কমাতে হচ্ছে। কারণ একজনকে সুবিধা বেশি দিলে আরেকজন বঞ্চিত হচ্ছেন। কিন্তু আমাদের এখানে যাঁরা সেবা নিতে আসেন, তাঁদের প্রায় সবাই কম খরচের সুবিধাটা বেশি চান। এ জায়গায় আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমরা সবাইকে ওভাবে কম ফি’র সুবিধাটা দিতে পারছি না।

তবে মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী সাড়ে ৬ হাজার জন ডায়ালাইসিস সুবিধা পাবেন। সরকারি নিয়মের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই আমাদের। তবে এ সংক্রান্ত বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, এ বিষয়ে শিগগির একটি সমাধান পাবো, যোগ করেন তিনি।