গাছের সঙ্গে গৃহবূধকে বেঁধে অমানবিক নির্যাতন!

গাছের সঙ্গে গৃহবূধকে বেঁধে অমানবিক নির্যাতন!

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঙলার কাগজ ও ডন; দেবিদ্বার (কুমিল্লা) : খালের পানি থেকে মাছ ধরার বেড় জালের বাঁশ না তোলায় এক গৃহবধূকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ধামতী ইউনিয়নের (উত্তরপাড়া) কোরেরপাড় এলাকায় দুলাল মিয়ার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

এ ঘটনায় পুলিশ ওই গৃহবধূর শাশুড়ি জুলেখা বেগমকে আটক করলেও তাঁর শ্বশুর দুলাল মিয়া ও ননদ মৌসুমীকে আটক করতে পারে নি।

আজ বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) বিকেলে নির্যাতনের শিকার জোৎসনা বেগম স্বামীর বাড়ির চারজনের নাম উল্লেখ করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

প্রতিবেশী ও প্রত্যক্ষদর্শী আমির হোসেন, শরীফ ও সোহেল মিয়া বলেন, ১৮ বছর আগে উপজেলার গুনাইঘর গ্রামের সুজাত আলীর মেয়ের সঙ্গে ধামতি গ্রামের (উত্তরপাড়া) কোরের পাড় দুলাল মিয়ার ছেলে হেলাল মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের সংসারে ২ ছেলে ও ২ মেয়ের জন্ম হয়। বিয়ের পর থেকে স্বামী হেলাল ও তার মা-বাবা ও বোনেরা যৌতুকের জন্য পাশবিক নির্যাতন করতেন। কয়েক দফায় দেড় লাখ টাকা যৌতুক দিয়েছে তারা আরও টাকা দাবি করেন। পরে জোৎসনার বাবা সুজাত আলী মারা গেলে তার ভাইদের পক্ষে আর যৌতুক দেওয়া সম্ভব না বলায় বিভিন্ন সময়ে তাকে মারধর করেছে। গত ৩ বছর আগে হেলাল ওমানে চলে যান। সেখান থেকেও হেলাল তার মা বাবাকে নির্দেশ দিত জোৎসানাকে মেরে গুম করে ফেলতে।

স্থানীয় চৌকিদার আবুল হাশেম বলেন, নির্যাতনের সময় গৃহবধূ জোৎসনা বাঁচাও বাঁচাও বলে আর্তনাদ করেছে, কিন্তু সামনে কেউ এগিয়ে আসেনি ভয়ে। এ সময় তাঁদের বাড়ির গেট ও দরজা সব বন্ধ ছিল, কেউ ভিতরে প্রবেশ করতে পারেনি।

নির্যাতিতা গৃহবধূর মা ফরিদা বেগম ও ছোট ভাই মো. জামাল হোসেন বলেন, ‘শ্বশুর দুলাল মিয়া, শাশুড়ি জুলেখা বেগম, ননদ মৌসুমী ও পাখি যৌতুকের জন্য প্রায়ই জোৎসনাকে মারধর ও নির্যাতন করতেন। তবুও এতো বছর সংসার করেছে। ঘটনার দিন গলা সমান খালের পানি থেকে বেড়জালের বাঁশ না তোলায় আমার বোনকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করেছে। আমরা থানায় এসেছি এ ঘটনায় মামলা দায়ের করব।’

এ ব্যাপারে ওমানী থেকে জোৎসনার স্বামী হেলাল মিয়া বলেন, ‘জোৎসনা ফাঁসি ও বৈদ্যুতিক তারে শর্ট খেতে ছুটাছুটি করায় তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলতে বলেছি।’

অভিযুক্ত জুলেখা বেগম ও ননদ মৌসুমী বেগম বলেন, ‘খাল থেকে বেড় জালের বাঁশ তুলতে বলায় জোৎসনা পারবে না বলায় একটি চড় দেওয়া হয়। পরে সে রাগে ফাঁসি দিতে গেলে তাকে আটকে গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলা হয়। আমরা কেউ তাকে মারধর করেনি।’

ধামতি ইউপি চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন মিঠু বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই বর্বর। এলাকার লোকজন আমার কাছে নির্যাতনের ছবিও ভিডিও পাঠিছে। নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূর আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে যা প্রয়োজন আমি সহযোগিতা করবো। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’

এ ব্যাপারে দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কমল কৃষ্ণ ধর বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘এ ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। নির্যাতনের শিকার ওই নারী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন দ্রুত বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।’