কালাম আঝাদ’র কলাম : বাঙলা কাগজের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে সব্বাইকে শুভেচ্ছা।

কালাম আঝাদ’র কলাম : বাঙলা কাগজের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে সব্বাইকে শুভেচ্ছা।

সম্পাদকীয় মত, বাঙলা কাগজ : নাঈম ভাইয়ের (নাঈমুল ইসলাম খান) বেতন না দেওয়া, ড. কাজী এরতেজা হাসানের পিস্তল ঠেকানো এবং উলঙ্গ করে ছবি তুলে রাখা, দুলাল আহমদ চৌধুরীর বিনা নোটিশে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া- এর কোনও কিছুই ঘটতো না, যদি আমার জীবনে আবিদ (আবিদ রহমান) ভাই থাকতেন। আর আব্বা থাকলে তো হয়তো সাংবাদিকতায় আসা হতো না। থাক, সে প্রসঙ্গ।

ক্লাস ফোরে আমার প্রথম কবিতা লেখা। ক্লাস নাইনে নোভেল লেখা। আর ইন্টারমেডিয়েটে আমার লেখা গান অ্যালবামে যাওয়া- এর সবই ছিলো আমার লেখালেখিতে যাওয়ার ইচ্ছে। তবে ভার্সিটিতে মেধা অনুসারে ভর্তি হই গণিতে। রেজিস্ট্রেশন নম্বর হয় ...০০৯। তখন দেড় বছরের মতো ছাত্রলীগের রাজনীতি করি। আর দেড় বছর পর থেকেই শুরু করি সাংবাদিকতা। তবে আমরা ২০০৫ ব্যাচ হলেও আমাদের কিন্তু ক্লাস শুরু করতে হয়েছে ২০০৬ সালের ১৩ নভেম্বর। কারণ তখন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মার্ডারের ঘটনা ঘটেছিলো।

তো, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমে কাজ শুরু করি দৈনিক ভোরের ডাকে। এরপর ডেইলি সান ও সকালের খবরে কাজ করা হয়েছে। পরে ঢাকায় আসি ২০১২ সালের পহেলা মে। আর তার ১৫ দিনের মাথায়ই নাঈম ভাইয়ের হাউসে কাজ শুরু করি।

তখন নূর আলী সাহেবের সঙ্গে উনি (নাঈম ভাই) আইনি লড়াইয়ে ‘আমাদের সময়’ ফিরে পেয়েছেন, তবে তা ছাপা হতো কম। আর দৈনিক আমাদের অর্থনীতিটা ছাপা হতো ‘আমাদের সময় ডটকম + আমাদের অর্থনীতি’- এই নামে। তো, উনার হাউসে কাজ শুরু করার পরপরই আবিদ রহমান (অস্ট্রেলিয়া ফেরত বিখ্যাত সাংবাদিক ও কলামিস্ট) ভাই আমাকে উনার কক্ষে ডেকে নিয়ে বললেন, কালাম তুমি ব্যাংক বিট করতে পারবা? কারণ তখন শাহরিয়ার জামান দীপ আর ইসমাঈল হোসেন ইমু নামে দুই সাংবাদিক হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় শেরাটন ব্রাঞ্চের ডিজিএমের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়েছেন। এ কারণে দীপ এবং ইমু ভাইকে ‘আপাতত’ চাকরিতে আসতে নিষেধ করে দিয়েছেন নাঈম ভাই। ‘আপাতত’ আমি এ কারণে বললাম, কারণ তখন এমন বিষয় প্রচলিত ছিলো যে, কোথাও থেকে ঘুষ নিয়ে সেটি নাঈম ভাইকে একটি পার্সেন্টেজ দিলেই তা ‘হালাল’ হয়ে যেতো। আর এ কারণেই নাকি উনার হাউসে বেতন কম ছিলো। তবে উনার এক্ষেত্রে একটি কথা ছিলো যে, উনি একেবারেই শিক্ষানবিশদের চাকরি দেন এবং শেখান। এ কারণে বেতন দেন না। আর আমিও নাঈম ভাইয়ের হাউসে কাজ শুরু করেছি মাত্র ৩ হাজার টাকা বেতনে। এক্ষেত্রে ‘ঘুষের’ ব্যাপারে আমার সঙ্গেও একটি ঘটনা ঘটেছিলো। যদিও আইএফআইসি ব্যাংক থেকে শুরু করে কয়েক শ উদাহারণ আছে, যেখান থেকে কখনোই কোনও টাকা নিই নি, বরং যতোদূর প্রয়োজন নিউজ করেছি। এরপর অবশ্য বিজ্ঞাপন পেয়েছেন নাঈম ভাই। 

আর ঘুষের ব্যাপারে আমাকে সোনালী ব্যাংকের এক ডিএমডির কাছ থেকে ১ লাখ টাকা আনার অনুমতি দেওয়া হয়েছিলো এই অর্থে যে, নাঈম ভাইকে ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। এবং আমি এই ৫০ হাজার টাকা অফিসে জমাও দিয়েছিলাম। আর হলমার্কের তানভীরকে নিয়ে নাঈম ভাইয়ের ব্যাপারে নানান মুখরোচক কথা প্রচলিত রয়েছে। এমনকি নাঈম ভাই মিটিংয়ে আমাদের এমন কথাও বলেছেন, তানভীর যখন অ্যারেস্ট হবেন, ঠিক এর পূর্ব মুহূর্তেও নাঈম ভাইকে কল করেছিলেন।

তো যাক, কাজের কথায় ফিরে আসি। নাঈম ভাইয়ের হাউসে আমরা (আমার সঙ্গে রিকু আমিরসহ আরও অনেকেই ছিলো) আমাদের সময় ডটকমে মূলত কাজ করলেও আবিদ ভাই আমাকে ব্যাংক বিটে পাঠান। তো আমি বাংলাদেশ ব্যাংকে যাই। প্রথমদিন তেমন কিছুই পাই না। দ্বিতীয়দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তার কাছ থেকে রেমিট্যান্সের একটি কাগজ এনে নিউজ করলাম ‘রেমিট্যান্সে রেকর্ড’। তো সেই নিউজটাই ১৭ না ১৮ তারিখে লিড হলো। আর এই যে লিড দিয়ে ঢাকায় আমার যাত্রা শুরু, এরপর আমাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। নাঈম ভাইয়ের হাউসেই দৈনিক আমাদের অর্থনীতিতে ২০১২ সালের মাঝামাঝি থেকে যতোদিন ছিলাম (দেড় বছর) সপ্তাহে ২ থেকে ৩টি আবার কোনও কোনও সপ্তাহে ৪টি লিডও থাকতো আমার। তখন আমাদের হেড অব নিউজ ছিলেন বর্তমানে মানবকণ্ঠের সম্পাদক দুলাল আহমদ চৌধুরী। আর আবিদ ভাই ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এবং নাঈম ভাই তো সম্পাদকই। আর আবিদ ভাইই আমার নামটি আবুল কালাম আজাদ থেকে ‘কালাম আজাদ’ করে দিয়েছিলেন, পরে যদিও আরও ইউনিক করার জন্য জাগরণে কাজ করার সময় ‘কালাম আঝাদ’ করে নিই। এক্ষেত্রে আমির হোসেন রিকুর নামটিও আবিদ ভাই রিকু আমির করে দিয়েছিলেন। আর আমার নামটি মূলত সংক্ষেপ করার মূল কারণ ছিলো, তখন আজকালের খবরে আবুল কালাম আজাদ নামে একজন ব্যাংক বিটেরই রিপোর্টার ছিলেন।

তো, আমার কাজে আবিদ ভাই যারপরনাই খুশি ছিলেন। মূলত উনার কথা স্মরণ করতে গিয়েই এ লেখাটা লিখলাম। কারণ আমি সাংবাদিকতায় যে স্টাইল ব্যবহার করেছি, সে স্টাইল সম্পূর্ণ আবিদ ভাইয়ের কাছ থেকেই শেখা। এখন যদিও ওই স্টাইলে সম্পূর্ণরূপেই লিখি না। তবে আগের পত্রিকা দেখলে লেখাগুলো মিস করি। এক্ষেত্রে আমার উপন্যাস বা ছোট গল্পে বা আগামীর কলামগুলোতে এ ধরনের স্টাইলে ধীরে ধীরে ফিরে যাবো বলে আশা রাখছি।

যাক সে কথা। তো, আবিদ ভাই একদিন আমাকে বিজেমের মির্জা তারেক ভাইয়ের কাছে নিয়ে যান। বলেন, এখানে কোর্স করিয়ে আমাদের একটা টিমকে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে জয়েন করাবেন। তখনও কিন্তু আবিদ ভাই বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কন্ট্রিবিউটিং এডিটর।

তো চ্যানেলে কাজ করাটা কতোটুকু এনজয়েবল, তা আমার জানা নেই। তবে এটুকু জানি, পত্রিকায় আমি সাংবাদিকতা উপভোগ করেছি; আর সেটা করেছি আবিদ ভাইয়ের কারণেই। কারণ প্রতিদিন সকাল ৯টায় মিটিং এবং সেখান থেকে প্রতিদিন বাংলাদেশ ব্যাংকে যাওয়া- এবং সেখান থেকে নিউজ সংগ্রহ করে বিকেলে এসে নিউজ করা- এটা ছিলো একটা অন্য রকম বিষয়। আর তখন সাংবাদিকতা এনজয় করার আরও একটি বড় কারণ হলো একদিনেই আমার ৩ থেকে ৪ এমনকি ৫টি রিপোর্টও ছাপা হতো। কখনো বা তার চেয়েও বেশি রিপোর্ট যেতো আমার। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, তখন প্রতিটা রিপোর্টই বাই নেমে যেতো। আর আমার যে রিপোর্টটি ভালো হতো, সেটি বেশ কয়েকবার পড়তাম। এটি একটি ভালো লক্ষণ বলেই অবশ্য বলেছিলেন নাঈম ভাই। তবে নাঈম ভাইয়ের সেই মিটিংগুলোতে সাংবাদিকতা শিখেছি। কারণ উনি সাংবাদিকতার ছাত্র ছিলেন। এ কারণে 5W, 1H থেকে শুরু করে অন্যান্য খুটিনাটি বিষয়গুলো উনার কাছ থেকেই শেখা।

তো বলতে দ্বিধা নেই, মাঝখানে এক কলিগের পাল্লায় পড়ে বেশ কিছুদিন মাদক গ্রহণের (ইয়াবা) সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলাম। যদিও সাংবাদিকতায় বিষয়টি আমার তেমন প্রভাব ফেলতে পারে নি। এরপরও অনেক অর্থ খরচ হয়েছে তখন। অথচ ওই কলিগের কাছে আমি মদ বা বিয়ারের সন্ধান চাওয়ার পরপরই তিনি আমাকে মিরপুরে নিয়ে গিয়ে এটি খাইয়েছিলেন। এবং এরপর থেকে নিয়মিত উনার সঙ্গে খাওয়া হতো। এখন অবশ্য ঢাকার বাইরে অর্থাৎ গ্রামের বাড়িতে থাকলে একটি সিগারেটও খাই না। তবে ঢাকায় গেলে মদ খাওয়া হয়।

যাক, আবিদ ভাইয়ের কথায় ছিলাম। একদিন আবিদ ভাই কী যেনো আমাকে প্রিন্টার থেকে প্রিন্ট করে এনে দিতে বললেন। মানে উনার রুমে পিসি ছিলো ঠিক, কিন্তু প্রিন্টার ছিলো নিউজরুমে (মূলত ম্যাকআপ ম্যানদের কাছাকাছি জায়গায়)। তো, আমি ওখান থেকে (মে বি) ২ পাতার প্রিন্ট এনে দিলাম আবিদ ভাইয়ের কাছে। আবিদ ভাই লেখাগুলো পড়ে যেনো আকাশ থেকে পড়লেন। কারণ আমরা যতোদূর জেনেছি, আবিদ ভাই অস্ট্রেলিয়া থেকে আসার সময় নাঈম ভাইকে ৩ বা ৫ কোটি টাকা দিয়ে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। অবশ্য নাঈম ভাই পত্রিকাকে এক ধরনের পণ্য বানিয়ে ফেলেন, সেটা তার স্বভাব। কারণ উনি আজকের কাগজ, ভোরের কাগজের পর আমাদের সময় এবং আমাদের অর্থনীতি বিক্রি করেছেন। এক্ষেত্রে নাঈম ভাইয়ের ভাষ্য অনুযায়ী, আমাদের সময় তিনি নূর আলী সাহেবের কাছে ৩০ কোটি টাকায় বিক্রি করেছেন, কিন্তু নূর আলী সাহেব নাঈম ভাইকে ১৪ বা ১৫ কোটি টাকা দিয়েছে, এ কারণে বিষয়টি নিয়ে উনার সঙ্গে নূর আলী সাহেবের মামলা হয়। এরপর আমাদের অর্থনীতি আসলাম ভাইয়ের (প্রয়াত সাংসদ আসলামুল হক) কাছে বিক্রি করেন নাঈম ভাই। পরে আবার কীভাবে যেনো আমাদের অর্থনীতির সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ হয় নি এবং এতো পার্সেন্ট শেয়ার কাগজে-কলমে উনার (মনে হয় ৫১ শতাংশ) বলে পত্রিকাটি নিজের কাছেই রেখে দেন নাঈম ভাই। এক্ষেত্রে তিনি পত্রিকার ছাপা খরচ এবং কর্মচারীদের বেতনের কথাই বলেছিলেন যতোদূর মনে পড়ে। অর্থাৎ আসলাম ভাই ৫ কোটি টাকা দিয়ে পত্রিকা কেনার ক্ষেত্রে উনি যদিও ৫ কোটি টাকাই দিয়ে থাকেন, তবুও নাঈম ভাই বললেন, ২ বা ৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে পত্রিকা ছাপাতে এবং বেতন দিতে। এ কারণে পত্রিকার পুরো টাকা পরিশোধ হয় নি। আর পুরো টাকা পরিশোধ না হলে পত্রিকা দেওয়া যাবে না।

যাক, ছিলাম আবিদ ভাইয়ের কথায়। তো, আবিদ ভাই আমাকে প্রিন্ট দিতে বলার পর, আমি প্রিন্ট দিয়ে আনলাম। তো, আবিদ ভাই লেখাটি পড়ে যেনো আকাশ থেকে পড়লেন। পরে যতোদূর শুনেছি, (কারণ আবিদ ভাই লেখাটি পড়তে দেন নি) নাঈম ভাই আবিদ ভাইকে আমাদের অর্থনীতির দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে গিয়ে বিশ্রাম নিতে বলেছিলেন। আর নাঈম ভাইয়ের এমন ‘ফিরিস্তিমূলক’ কথাবার্তা আবিদ ভাই পড়ে উনার ছোট ছোট হার্ট অ্যাটাক হয়। পরে উনি অস্ট্রেলিয়া চলে যান। এবং কিছুদিন পরেই হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক করে মারা যান। তো আবিদ ভাই আমাদের ছেড়ে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পরও উনার সঙ্গে আমার ই-মেইলে কথা হতো। উনি ফিরে এসে আবারও দায়িত্ব নেবেন জানিয়েছিলেন এবং অন্যান্য বিষয়েও উনার সঙ্গে কথা হতো। তো, আমি পুরোপুরি বলতে পারি, আবিদ রহমানের মৃত্যুর জন্য সম্পূর্ণরূপে একমাত্র দায়ী এই নাঈমুল ইসলাম খান।

যাক, সংবাদপত্র জগতে আর কিছুই বলতে চাই না। 

ঢাকায় ২০১২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কাজ করার আগে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে আরও সাড়ে ৩ বছর আমি মানুষের আন্ডারে কাজ করেছি। কিন্তু সবমিলিয়ে এই সাড়ে ১১ বছরে হাপিয়ে উঠেছিলাম। আর মনে হচ্ছিলো, নিজে কিছু একটা করি।

আর এরপরই ২০২০ সালের ২০ মে যাত্রা শুরু করি আমাদের বাঙলা কাগজের। যদিও মাঝখানে বাঙলা কাগজের ডাটাবেজে সমস্যা হয়েছে, আর এ কারণে হয়তো এক বছরের নিউজ এখন নেই। তবে, আমাদের সাইটের প্রথম নাম ছিলো মেঘনা নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এবং আমার মনে আছে, প্রথম নিউজ ছিলো, ‘আসছে আম্পান, বইছে ঝড়’। যদিও নামটি ১/২ দিনের মধ্যেই বাঙলা কাগজ করা হয়েছিলো। আর সেটি মেঘনা নিউজের জায়গায়ই রিপ্লেস করা হয়েছে। তো, আজকে রাতেও বৃষ্টি হচ্ছিলো, তবে এখন নেই বললেই চলে। যদিও আকাশে মাঝেমধ্যে বিজলি চমকাচ্ছিলো (লেখাটি ছিলো চমকাচ্ছে, এডিট করার এই সময়টা পর এখন আর বিজলি চমকাচ্ছে না)।

শুভ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।