কলেজ অধ্যক্ষকে ১৫ মিনিট ধরে পেটালেন এমপি!

কলেজ অধ্যক্ষকে ১৫ মিনিট ধরে পেটালেন এমপি!

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঙলা কাগজ; রাজশাহী : রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে এক কলেজ অধ্যক্ষকে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মারধরের শিকার ওই শিক্ষকের নাম সেলিম রেজা। তিনি গোদাগাড়ীর রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ। এমপি ফারুক চৌধুরীর বেপরোয়া লাথি, কিল-ঘুষি ও হকিস্টিকের আঘাতে অধ্যক্ষ সেলিম রেজার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়েছে।

প্রায় ১৫ মিনিট সময় ধরে সবার সামনে অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে পেটানো হয় বলে জানা গেছে। তবে সংসদ সদস্য অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন।

চলতি মাসের ৭ তারিখ রাতে নগরীর নিউমার্কেট সংলগ্ন এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর মালিকানাধীন থিম ওমর প্লাজার চেম্বারে ওই ঘটনা ঘটে।

ঘটনার আকস্মিকতায় হতবিহ্বল ও আতঙ্কিত ওই শিক্ষক এখনো ভীতসন্ত্রস্ত্র। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে নগরীর রায়পাড়ার বাসায় পরিবারের সঙ্গে অবস্থান করছেন তিনি।

অধ্যক্ষ সেলিম রেজা, এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর হাতে নির্দয় পিটুনির শিকার হলেও লজ্জা ও আতঙ্কে এখনও কোথাও অভিযোগ করেন নি।

জানা গেছে, গোদাগাড়ীর মাটিকাটা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল রাজু ফোন করে বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষদের ৭ জুলাই রাত ৯টায় থিম ওমর প্লাজায় এমপির চেম্বারে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেন।

ফোন পেয়ে রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাসহ ৮ অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ এমপি ফারুকের চেম্বারে হাজির হন। তাঁদের সামনেই একটি বিষয় নিয়ে অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে বেধড়ক মার মারেন এমপি। কিন্তু ভয়ে কেউ তাঁকে বাধা দেন নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এমপি ফারুক প্রথমেই অধ্যক্ষ সেলিম রেজার কাছে জানতে চান, তাঁর কলেজের কতিপয় শিক্ষক একজন অধ্যক্ষ ও দলীয় নেতার স্ত্রীকে নিয়ে অশ্লীল কথাবার্তা বলেছেন। অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন। জবাবে অধ্যক্ষ সেলিম বলেন, যদি আপনার কাছে প্রমাণ থাকে, আমি তাঁদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। এ কথা বলার পরই এমপি তাঁর ফোনের রেকর্ড অন করে বিষয়টি অধ্যক্ষ সেলিমকে শুনতে বলেন।

এরই মধ্যে এমপি ভীষণ উত্তেজিত হয়ে পড়েন। সেলিম রেজাকে জাপটে ধরে প্রথমেই তার বাঁ চোখের নিচে সজোরে ঘুষি মারেন। তারপর উপর্যুপরি কিল, ঘুষি ও লাথি চলতে থাকে।

একপর্যায়ে অধ্যক্ষ সেলিম প্রায় অচেতন হয়ে পড়লে চেম্বারে আগে থেকে রাখা হকিস্টিক বের করে বেশ কয়েকটি আঘাত করেন সেলিমের বাঁ হাত, কোমর ও শরীরের নিম্নাঙ্গে। হতবাক হয়ে অন্য অধ্যক্ষদের একজন দৌঁড়ে এসে সেলিমকে এমপির কবজা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চেম্বার থেকে বের করে আনেন।

পরে আহত সেলিম রেজাকে অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সাঈদ আহমেদের চেম্বারে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর কয়েকজন স্বজন ও সহকর্মীর সহায়তায় তিনি বাসায় ফেরেন। এ ঘটনার পর অধ্যক্ষ সেলিম লজ্জায় বাসা থেকে বের হচ্ছেন না।

অধ্যক্ষ সেলিম সাংবাদিকদের জানান, ৭ জুলাই রাতের ঘটনার পর থেকে তিনি বাড়িতেই থাকছেন। তবে সোমবার (১১ জুলাই) বিকেলে এমপির ঘনিষ্ঠ গোদাগাড়ীর দেওপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উপজেলা যুবলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক বেলাল উদ্দিন সোহেল তাঁর বাসায় আসেন। এ সময় সোহেল হোয়াটসঅ্যাপে এমপির সঙ্গে কথা বলেন। পরে অধ্যক্ষ সেলিমকে ফোন ধরিয়ে দেন। এ সময় এমপি ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি এমপি সময় করে অধ্যক্ষ সোহেলকে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বলেন।

এদিকে, অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনি বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে আমার চেম্বারে তারা অনেকেই এসেছিলো। নিজেরা মারামারি শুরু করলে আমি গিয়ে তাদের থামাই।’

‘অধ্যক্ষ সেলিম রেজার শরীরে মারধরের চিহ্ন কীভাবে এলো?’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করে বলেন, ‘আমি জানি না।’