কাবুল বিমানবন্দরে তল্লাশির ঠিক আগেই বিস্ফোরণ ঘটান হামলাকারি

কাবুল বিমানবন্দরে তল্লাশির ঠিক আগেই বিস্ফোরণ ঘটান হামলাকারি
ডন প্রতিবেদন : আফগানিস্তানের রাজধানি কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাইরে গত বৃহস্পতিবারের (২৬ আগস্ট) হামলার ঘটনার বিবরণ দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নিউইয়র্ক টাইমস। আত্মঘাতি হামলাকারি কীভাবে বিমানবন্দরের আবে গেটের কাছে গিয়েছিলেন, ঠিক কোন সময়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিলেন, মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। নিউইয়র্ক টাইমসের ওই খবরে জানা গেছে, বিমানবন্দরের আবে গেটে ঢোকার জন্য তখন হুড়োহুড়ি চলছিলো। তালেবানের হাত থেকে বাঁচতে আফগানিস্তান ছাড়তে মরিয়া লোকজনের ভিড় ছিলো সেখানে। মার্কিন সেনাবাহিনী ও অন্য নিরাপত্তাকর্মিরা সেই ভিড় সামলানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বৃহস্পতিবারের (২৬ আগস্ট) এমন দৃশ্য অবশ্য নতুন ছিলো না। বিমানবন্দরের তিনটি গেটে দুই সপ্তাহ ধরে এক লাখের বেশি আফগান ভিড় করেছিলো। তারা সবাই দেশ ছেড়ে পালাতে বিমানবন্দরে ঢোকার জন্য হুড়োহুড়ি করছিলো। সেই ভিড় সামলাতে চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন ৫ হাজারেরও বেশি মার্কিন সেনা। মার্কিন কর্মকর্তাদের তথ্য অনুসারে, বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মিরা পরিস্থিতি সামলাতে দুটি গেট বন্ধ করে দেয়। তবে আবে গেটটি খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) ওই হামলার একদিন আগেই সতর্ক করেছিলো যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিমানবন্দরের তিনটি গেটে হামলার আশঙ্কার কথা জানায় তারা। আবে গেটও সম্ভাব্য হামলার ওই তালিকায় ছিলো। যেভাবে বিস্ফোরণ ঘটায় হামলাকারি : তখন পড়ন্ত বিকেল। ঘড়িতে ৫টা বেজে ৪৮ মিনিট। হামলাকারি পোশাকের নিচে ২৫ পাউন্ড ওজনের বিস্ফোরক লুকিয়ে রেখেছিলো। হামলাকারি হেঁটে যাচ্ছিলো আবে গেটে থাকা মার্কিন সেনাদের দিকে। মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, তল্লাশি করার আগপর্যন্ত হামলাকারি অপেক্ষা করছিলো। মার্কিন সেনারা তল্লাশি শুরুর ঠিক আগমুহূর্তে বোমাটির বিস্ফোরণ ঘটায় ওই হামলাকারি। আত্মঘাতি হামলায় সাধারণত যে ধরনের বোমা ব্যবহৃত হয়, এটি ছিলো তার চেয়েও অনেক বড়। বিস্ফোরণ ঘটানোর সঙ্গেসঙ্গেই হামলাকারি মারা যান। ওই বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত ১৭০ জন মারা গেছেন। হামলায় নিহত ব্যক্তিদেরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ জন সেনাও রয়েছেন। বিমানবন্দরের গেটে মার্কিন বাহিনী ও আফগানদের মুখোমুখি অবস্থানের কথা উল্লেখ করে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের জেনারেল কেনেথ ম্যাকেনজি বলেন, পরিস্থিতি যুদ্ধের মুখে পড়ার মতো। বিমানবন্দরে ঢোকার অনুমতি দেওয়ার আগে আফগানদের অবশ্যই তল্লাশি করতে হবে। আর তা করতে গিয়ে যে কোনও সময় মার্কিন বাহিনী হামলাকারির সম্মুখীন হতে পারে। তিন প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পেন্টাগন : পেন্টাগনের কর্মকর্তারা বলছেন, বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) আবে গেটে যে হামলার ঘটনা ঘটে, তা নিয়ে এখনো তদন্ত চলছে। তাঁরা ঘটনাগুলো একের পর এক সাজিয়ে তথ্য তুলে আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন। বোঝার চেষ্টা করছেন, সে সময় আসলে ঠিক কী ঘটেছিলো। তিনটি প্রশ্ন ভাবাচ্ছে পেন্টাগনের কর্মকর্তাদের। প্রথমত, নিরাপত্তাকর্মিরা এতো কাছাকাছি ছিলো কেনো? দ্বিতীয়তো, বিমানবন্দরের বাইরে থাকা তালেবানের তল্লাশিচৌকিতে বোমা হামলাকারি ধরা পড়লো না কেনো। আর তৃতীয়ত, তালেবানের তল্লাশিচৌকির কেউ হামলাকারিকে কৌশলে ছেড়ে দিয়েছিলেন কি না? কাবুলের চিকিৎসা কর্মকর্তারা বলছেন, হামলায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। বিমানবন্দরের বাইরে হামলায় এ পর্যন্ত ১৭০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবারের (২৭ আগস্ট) হামলার ঘটনার পর শুক্রবার (২৭ আগস্ট) বিমানবন্দরের বাইরে আফগানদের ভিড় তুলনামূলক কম দেখা গেছে। হামলার পর বিমানবন্দর এলাকা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। তবে আফগানিস্তান থেকে মানুষকে সরিয়ে নিতে ফ্লাইট চালু রয়েছে। স্থানীয় সময় বেলা দুইটার পর মার্কিন উড়োজাহাজে ১৩ মার্কিন সেনার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনার পর ইনস্টাগ্রামে শোক জানান নিহত মার্কিন সেনার স্বজনেরা। ২৫ পাউন্ডের বিস্ফোরক বহন ছিলো অবাক করার মতো : মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বোমা হামলার পরই বিমানবন্দরের কাছে তালেবান গুলি ছোড়ে। তাঁরা আরও বলছেন, আবে গেটে গুলিতে আহত হতে পারে কয়েক মার্কিন ও আফগান। গেটের কাছে হামলার পর ব্যারন হোটেলে দ্বিতীয় আত্মঘাতি বোমা হামলার কথা জানায় মার্কিন সেনাবাহিনী। তবে প্রাথমিকভাবে দেওয়া ওই তথ্যে অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। আঞ্চলিক অপারেশনের জয়েন্ট স্টাফ ডেপুটি ডিরেক্টর মেজর জেনারেল হ্যাঙ্ক টেলর বলেন, দ্বিতীয় আত্মঘাতি বোমা হামলার তথ্য ভুল ছিলো। সেনা কর্মকর্তারা বলছেন, আত্মঘাতি বোমা হামলাকারির ২৫ পাউন্ডের বিস্ফোরক বহনের ঘটনা ছিলো অবাক করার মতো। আত্মঘাতি হামলাকারিরা সাধারণত ১০ থেকে ২০ পাউন্ড বিস্ফোরক বহন করে। ২৫ পাউন্ডের বোমা বিস্ফোরণের পর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) আবে গেটে যে সেনারা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা মাত্র এক সপ্তাহ আগে কাবুলে আসেন। মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের জেনারেল কেনেথ ম্যাকেনজি বলেছেন, হামলার পর তাঁরা দমে যান নি। যাঁরা মার্কিন বাহিনীকে সহায়তা করেছেন এবং যাঁরা দেশ ছাড়তে চান, এমন আফগানদের তাঁরা সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাবেন। কারণ, আফগানদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব পালনের জন্যই তাঁরা বিমানবন্দরে রয়েছেন। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের আফগানিস্তান শাখা (আইএসকেপি) এ হামলার দায় স্বিকার করেছে। তারা বলেছে, তাদের আত্মঘাতি বোমা হামলাকারি আমেরিকান সেনাবাহিনীর অনুবাদক ও দোসরদের ওপর এ হামলা চালিয়েছে। হামলার নিন্দা জানিয়ে এর প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গিকার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। এক যৌথ বিবৃতিতে ১৫ সদস্যের এ পরিষদ এ কাজে সহযোগিতার জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানায়।