আটকদের ছাড়িয়ে আনতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে বিহারিদের সংঘর্ষে নারায়ণগঞ্জ রণক্ষেত্র।

আটকদের ছাড়িয়ে আনতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে বিহারিদের সংঘর্ষে নারায়ণগঞ্জ রণক্ষেত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঙলা কাগজ; নারায়ণগঞ্জ : উসকানিমূলক বক্তব্য না দিতে অনুরোধ জানানোর পর পুলিশের এক উপ-পরিদর্শককে (এসআই) মারধরের পরও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দারা। ফলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।

জানা গেছে, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় সুমিলপাড়া বিহারি কলোনি থেকে গ্রেপ্তার ৩২ জনকে ছাড়িয়ে নিতে গিয়ে সকালে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সামনে অবস্থান নেয় বিহারিরা। একপর্যায়ে তারা সকাল ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-ডেমড়া সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে।

এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তারা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শটগানের গুলি ও কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। সেই সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আদমজী-চাষাড়া সড়ক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিক্ষোভকারীরা এ সময় সড়কে চৌকি, কাঠের গুড়িসহ বিভিন্ন মালামাল দিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। এতে ওই পথে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আদমজী বিহারি কলোনির সড়কেও লোকজন জড়ো হয়।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর সিদ্ধিরগঞ্জে আদমজী বিহারী ক্যাম্প এলাকায় আদমজী শাহী জামে মসজিদের ভেতরে এক পুলিশ সদস্যকে মারধরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৫০ জনের নাম উল্লেখসহ ১২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করা হয়।

তিনি জানান, পুলিশ অভিযান চালিয়ে সোমবার (১৩ জুন) ভোর পর্যন্ত ওই মামলার আসামি, মাদক ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন অপরাধের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের মুক্তির দাবিতে সকালে বিহারি কলোনির লোকজন সড়ক অবরোধ করে বিশৃঙ্খলা করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়।

ওসি জানান, এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে তারা ইট ছুড়ে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শতাধিক কাঁদুনে গ্যাস ও শতাধিক রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি শান্ত করে। এ ঘটনায় ৪ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। তাদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

তবে সুমিলপাড়া বিহারি ক্যাম্পের চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, রোববার রাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত বিপুল সংখ্যক পুলিশ ক্যাম্পের ভেতর অভিযান চালিয়ে ৩২ জনকে আটক করে। শুক্রবার পুলিশের এসআইয়ের ওপর হামলার ঘটনায় যারা ওই মসজিদে যান নি, যারা জড়িত নন, তাদেরকেও আটক করা হয়েছে। অভিযানকালে অনেক নারী-পুরুষকে মারধর করা হয়েছে। এই কারণে ক্যাম্পের বাসিন্দারা ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে।

লিয়াকত বলেন, তারা থানার সামনে গেলে পুলিশের তাদের লাঠিপেটা, কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে। অবিলম্বে আটককৃতদের মুক্তির দাবি করেন তিনি।

উল্লেখ করা যেতে পারে, গত শুক্রবার জুমার নামাজের সময় মসজিদের ইমাম ভারতে মহানবী (সা.) কে নিয়ে কটূক্তির নিন্দা জানিয়ে বক্তব্য দিচ্ছিলেন এবং উসকানিমূলক কথা বলছিলেন। তখন এসআই আজিজুল হক অনুরোধ করেন যে, ভারতের ঘটনা সেখানেই থাকুক। এখানে যেনো কেউ বিশৃঙ্খলা না করে। তখনি তাঁর ওপর হামলা হয় এবং তাঁকে মারধর করা হয়।