অর্থ কেলেঙ্কারিতেই চাকরি গেছে সচিব মকবুলের

অর্থ কেলেঙ্কারিতেই চাকরি গেছে সচিব মকবুলের

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ ও ডন : তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেনকে জনস্বার্থে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। রোববার (১৬ অক্টোবর) এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সীমাহীন ‘দুর্নীতি ও আর্থিক কেলেঙ্কারির’ দায়ে তাঁকে অবসরে পাঠানো হয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, সচিব পদে যোগদানের পর থেকেই তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সব দপ্তর ও সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতির ফাইল আটকে ঘুষ নিতেন সচিব মকবুল। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফাইল মন্ত্রীর দপ্তরকে অবহিত না করেই তিনি অনুমোদন দিয়ে দিতেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ মন্ত্রণালয়ের অধীন অন্যান্য দপ্তর ও সংস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে কোটি কোটি টাকার দরপত্র বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। বিভিন্ন সময়ে সচিব মকবুল হোসেনের দুর্নীতির নানা বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করে।

জানা গেছে, এর আগে চট্টগ্রামে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক এবং রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজের (আরজেএসসি) রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালনকালেও তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ছিলো। তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে বদলি হয়ে উন্নয়নমূলক কাজে বেশি সম্পৃক্ত কোনও মন্ত্রণালয়ে সচিবের দায়িত্ব পেতে কয়েক মাস ধরে তিনি ব্যাপক তদবির করছিলেন।

সর্বশেষ একটি বড় আর্থিক কেলেঙ্কারিতে তথ্য সচিবের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। এ ঘটনায় প্রশাসনের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি ও একজন শীর্ষ ক্রীড়া সংগঠকের যোগসাজশ রয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মকবুল হোসেনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর নির্দেশনা দেন তিনি। এরপরই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। 

বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর বিষয়ে সচিব মকবুল হোসেন বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, এ ব্যাপারে আমি কোনও আবেদন করি নি।

মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কে এম আলী আজম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘মো. মকবুল হোসেনকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ধারা ৪৫ অনুযায়ী জনস্বার্থে সরকারি চাকরি থেকে অবসর প্রদান করা হলো। জনস্বার্থে জারি করা এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।’

সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ধারা ৪৫-এ বলা হয়েছে, ‘কোনও সরকারি কর্মচারীর চাকরির মেয়াদ ২৫ (পঁচিশ) বৎসর পূর্ণ হইবার পর যে কোনও সময় সরকার জনস্বার্থে প্রয়োজন মনে করিলে কোনোরূপ কারণ না দর্শাইয়া তাঁহাকে চাকরি হইতে অবসর প্রদান করিতে পারিবে। তবে শর্ত থাকে যে, যেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ, সেইক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন গ্রহণ করিতে হইবে।’

মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কেনো সচিবকে অবসরে পাঠানো হলো- জানতে চাইলে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহ্‌মুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘মকবুল হোসেনকে অবসর দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এটা জেনেছি; কিন্তু কেনো অবসর দেওয়া হলো- সে বিষয়ে আমি অবহিত নই।’

কর্মকর্তারা জানান, দশম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা মকবুল হোসেনের আগামী বছরের ২৫ অক্টোবর অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়ার কথা ছিলো।