অনেক কন্টেইনার ডিপো মানে না নিয়ম।

অনেক কন্টেইনার ডিপো মানে না নিয়ম।

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঙলা কাগজ; চট্টগ্রাম : অনেক কন্টেইনার ডিপো কোনও নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করছে না। অথচ দেশের বিদ্যমান আইন মেনেই বেসরকারি এ ডিপোগুলোর অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বিদেশি বায়ারদের চাপে দেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে সব কমপ্লায়েন্স মেনে চলা নিশ্চিত হয়েছে। তা পরিবেশ আইন, স্বাস্থ্যবিধি, বিল্ডিং আইন, ফায়ার আইন, কেমিক্যাল নীতিমালাসহ দেশের বিদ্যমান আইন দ্বারাই নিশ্চিত করা হয়েছে। একইভাবে সরকার ঘোষিত বিভিন্ন নীতিমালা এবং বেসরকারি ডিপো নীতিমালা অনুসরণের মাধ্যমে ডিপোগুলোও ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করা সম্ভব বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের অভিমত। একইসঙ্গে ‘সেফটি সিকিউরিটি আইন’ সঠিকভাবে পালন করা হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কার্যকর ভূমিকা থাকতে হবে। বিশেষ করে বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো নীতিমালা-২০১৬ অনুযায়ী ডিপোগুলোকে আইন মানতে বাধ্য করতে হবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো মালিকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পরিবেশ ছাড়পত্র, ফায়ার ছাড়পত্র, বিদেশি কয়েকটি সার্টিফিকেট, আইএসপিএস কমপ্লায়েন্সসহ সবকিছু থাকার ভিত্তিতে প্রতি বছর তাঁদের ডিপোগুলোর লাইসেন্স নবায়ন হচ্ছে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা হলো- নীতিমালা অনুযায়ী অনেক কিছুই অধিকাংশ ডিপোতে সঠিকভাবে পালিত হয় না। শুধু বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণ- পরবর্তী সময়ে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী নীতিমালার অনেক কিছু উপেক্ষিত ছিলো বলে দেখা যাচ্ছে। সেফটি সিকিউরিটি সঠিকভাবে পালন করা হলে এতো বড় দুর্ঘটনা ঘটতো না বলেই বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

এদিকে বিএম ডিপোতে হতাহতের ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, কেমিক্যাল জাতীয় পদার্থ রাখার ক্ষেত্রে ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ডেনজারাস গুডস (আইএমডিজি) নীতিমালা অনুসরণ করে নি ডিপোটি। যা নীতিমালার লঙ্ঘন। একইসঙ্গে অগ্নি নির্বাপণে পানি, ফোম, কার্বন ডাইঅক্সাইডসহ অন্যান্য কেমিক্যাল, ফায়ার হাইড্রেন্ট, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ফায়ার কর্মী, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে তা নেভানো বা প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্পর্কে বার্ষিক ট্রেনিং দেওয়ার বিষয়গুলো কখনো মানা হয় নি। নীতিমালায় উল্লেখিত বিষয়গুলো মানছে কি না, তা-ও তদারকি সংস্থা সঠিকভাবে মনিটরিং করে নি।

বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো মালিকদের সংগঠন বিকডার সভাপতি নুরুল কাইয়ুম খান বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, যেহেতু একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে, এর মাধ্যমে সকলের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, সমস্যাগুলো কোথায়। 

তিনি বলেন, কেমিক্যাল, অ্যাসিড কিংবা বিস্ফোরক জাতীয় পদার্থ আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে যাঁরা হ্যান্ডলিং করবে, ওই সকল ডিপোর আলাদা ব্যবস্থা থাকতে হবে। ডেনজারাস কার্গো রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট ডিপোতে সংরক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। শুধু যাদের ওই সকল মালামাল রাখা ও হ্যান্ডলিং ব্যবস্থা থাকবে, কেবল তাঁদের ডিপোতে ডিজি কার্গো পাঠাতে হবে। তিনি এর জন্য ডিপোর নীতিমালায়ও পরিবর্তন আনতে হবে বলে উল্লেখ করেন। 

এ ছাড়া ডিপোতে পণ্যের সেফটি সিকিউরিটি পরিপূর্ণ পালনের ক্ষেত্রে তদারকি সংস্থাগুলোর ভূমিকা জোরদার করার আহ্বান জানান তিনি।

বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানগুলোতে যদি কমপ্লায়েন্স মানতে পারে, সেক্ষেত্রে ডিপোগুলো কেনো মানতে পারবে না। তবে সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের জোরালো ভূমিকার ওপর ডিপোগুলোর কমপ্লায়েন্স মানা না মানা নির্ভর করে বলে জানান তিনি।