৫জি’র উপযোগি ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করতে ১০৫৯ কোটি টাকার প্রকল্প।

৫জি’র উপযোগি ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করতে ১০৫৯ কোটি টাকার প্রকল্প।
বাসস : ৫জি’র উপযোগি অবকাঠামো তৈরির লক্ষ্যে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণে ১ হাজার ৫৯ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর শেরেবাংলানগর এনইসি সভাকক্ষে একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এই প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সভায় যোগদান করেন। একনেক সভাশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান অনুমোদিত প্রকল্পের বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি জানান, সভায় মোট দশটি প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এই দশ প্রকল্পের বাস্তবায়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৮০৪ কোটি ১০ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৮ হাজার ৫১৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। বৈদেশিক অর্থায়ন ১৬৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থাকবে ১২০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ব্রিফিংয়ের সময় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম উপস্থিত ছিলেন। এম এ মান্নান ‘৫জি’র উপযোগীকরণে বিটিসিএলের অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক’ প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে বলেন, দেশের সর্বত্র নিরবচ্ছিন্ন সর্বাধুনিক টেলিযোগাযোগ ও আধুনিক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দেওয়া এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। এ ছাড়া ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বিটিসিএলের অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নত ও সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে। বিটিসিএল জানুয়ারি ২০২২ হতে ডিসেম্বর ২০২৪ মেয়াদে সমগ্র দেশে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে উপজেলা পর্যায়ে ডেটা ট্রান্সমিশন গতি প্রতি সেকেন্ডে ১শ গিগাবাইটে (জিবিপিএস) উন্নীত করা হবে। সুপারফাস্ট মোবাইল পরিষেবা ২০ জিবিপিএস পর্যন্ত সর্বোচ্চ ডেটা রেট সরবরাহ করবে, যার মাধ্যমে সব ধরনের ডিভাইসকে সংযুক্ত করা যাবে। তিনি জানান, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ৫জি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং ৪জি নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ প্রদান করেছেন। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কাজ ত্বরান্বিত করার উপরও গুরুত্বারোপ করেছেন। এ ছাড়া সরকারপ্রধান ভর্তুুকি ব্যবস্থা থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসার উপর জোরারোপ করেন। এম এ মান্নান বলেন, ‘ভর্তুকি একটি গুরুতর বিষয় এবং আমাদের অবশ্যই এই ভর্তুকি ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রক্রিয়াটি শুরু হবে এবং এটি ধীরে ধীরে করতে হবে।’ তিনি বলেন, সরকার অনেক খাতে ভর্তুকি দিচ্ছে এবং প্রধানমন্ত্রী ভর্তুকি প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছেন যা আর্থিকভাবে উপযুক্ত ও গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত। পরিকল্পনামন্ত্রীরসঙ্গে একমত পোষণ করে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি ব্যয়বহুল এবং যেখানে শিল্প উৎপাদন হয় সেখানে এ ধরনের ভর্তুকি কমানো দরকার। তবে তিনি বলেন, কৃষিখাতে ভর্তুকি যথারীতি অব্যাহত থাকবে। একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া কিছু অনুশাসনের কথা তুলে ধরে মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালগুলোতে আধুনিক মেশিন ও যন্ত্রপাতি ভালোভাবে পরিচালনার স্বার্থে প্রয়োজনীয় জনবল প্রস্তুত রাখতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ প্রদান করেছেন। যেসব জেলায় এই মুহূর্তে নভোথিয়েটার নেই, সেসব জেলায় একটি বড় প্রকল্পের আওতায় নভোথিয়েটার স্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করেন। তিনি নভোথিয়েটারের কার্যক্রম তত্ত্বাবধানের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি পৃথক সংস্থা গঠনেরও পরামর্শ দেন। প্রধানমন্ত্রী সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার লক্ষ্যে তাঁদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে তিনি বরগুনা জেলায় ম্যানগ্রোভ বন সম্প্রসারণের পদক্ষেপ গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করেন। ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে ৩ দশমিক ২১ শতাংশ, যা এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিলো ২৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। তিনি বলেন, এটা সম্ভব হয়েছে দেশবাসী সকলের কঠোর পরিশ্রম এবং প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণে। একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হলো : সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ২টি প্রকল্প যথাক্রমে ‘সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প : জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা সড়ক (এন-৪) ৪-লেন মহাসড়কে উন্নতীকরণ (৩য় সংশোধিত) প্রকল্প এবং ‘ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলিটি স্থানান্তর প্রকল্প : সাপোর্ট টু ঢাকা (কাঁচপুর)-সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ এবং উভয় পাশে পৃথক সার্ভিস লেন নির্মাণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘১৫টি সরকারি হাসপাতালে হাসপাতালভিত্তিক চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’ প্রকল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার, খুলনা স্থাপন’ প্রকল্প, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘ইন্টিগ্রেডেট কমিউনিটি বেসড সেন্টার ফর চাইল্ড কেয়ার, প্রোটেকশন অ্যান্ড সুইম-সেফ ফ্যাসিলিটিজ’ প্রকল্প, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ২টি প্রকল্প যথাক্রমে ‘বরগুনা জেলাধীন পোল্ডার ৪১/৬ এ, ৪১/৬ বি ও ৪১/৭ এ পুনর্বাসন এবং বেতাগী শহরসহ অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ অংশ বিষখালী ও পায়রা নদীর ভাঙ্গন হতে প্রতিরক্ষা’ প্রকল্প এবং ‘ভোলা জেলার মুজিব নগর ও মনপুরায় উপকূলীয় বাঁধ পুনর্বাসন, নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও তীর সংরক্ষণ (১ম পর্যায়)’ প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর-এ ২টি মর্ডান ফায়ার স্টেশন স্থাপন’ প্রকল্প এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটিং প্রোজেক্ট ইন ডিস্ট্রিবিউশন জোনস অব বিপিডিপি’ প্রকল্প।