ডন প্রতিবেদন : গোয়েন্দা সংস্থা বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অনেক সময় নিজের জীবন বাজি রেখে কাজ করে থাকেন। তাঁদের এ কাজের জন্যই নানা রহস্য উদ্ঘাটিত হয়। শান্তিতে ঘুমাতে পারেন দেশবাসী। এমনই একটি বিষয় হিসেবে একটি খুনের রহস্য উদ্ঘাটন করেছেন যাত্রাবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই বিলাল আল আজাদ। তাঁর ঘটনা এখন ফেসবুকে ভাইরাল।
এ বিষয়ক একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস তুলে ধরা হলো : ২২ জানুয়ারি ভোরে হানিফ ফ্লাইওভারে এক ব্যক্তির লাশ পাওয়া যায়। সেদিনই সন্ধ্যায় তাঁর ছেলে মর্গে গিয়ে বাবার লাশ শনাক্ত করে জানায়, ৫০ বছর বয়সি মহির উদ্দিন এক মাছ বিক্রেতা। কিন্তু মারলো কে?
এই মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনের দায়িত্ব পান যাত্রাবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই বিলাল আল আজাদ। টানা পাঁচদিন লেগুনা চালকের হেলপার (সহযোগী) সেজে তদন্ত চালিয়ে সেই খুনের রহস্য উদ্ঘাটন করেন তিনি। ধরা পড়ে হত্যায় জড়িত ৪ ছিনতাইকারী। মনে হলো যেনো কোনও মুভির কাহিনী।
ফ্লাইওভারে সিসি ক্যামেরার ভিডিও সংগ্রহ করে দেখা যায়, চলন্ত এক লেগুনা থেকে মহিরউদ্দিনকে ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু লেগুনার কোনও নম্বর না থাকলেও পাদানির লাল রঙ নজর কাড়ে। লাল পাদানির ওই লেগুনা খোঁজা শুরু করেন এসআই আজাদ। খোঁজ না পেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়ে পরিচয় গোপন করে এক দালালের মাধ্যমে নিজের যাত্রাবাড়ী, সাইনবোর্ড, চিটাগাং রোড নারায়ণগঞ্জের জালকুড়ি রুটে একটি লেগুনায় চালকের সহকারীর কাজ নেন। শুরু হয় আজাদের গোয়েন্দাগিরি!
এক পর্যায়ে লাল পাদানির কোনও লেগুনার খোঁজ না পেয়ে হতাশও হয়ে পড়েন। এরপরে নিজেই চালক হিসেবে কাজ করার জন্য লেগুনা আছে কি-না, সেই খোঁজ করতে শুরু করেন। জানেন ৭২৮ নম্বরের এক লেগুনা রুটের সিরিয়ালে থাকলেও দুদিন ধরে সেটি দেখা যাচ্ছে না। সেটার খোঁজ নিয়ে দেখা যেতে পারে। অনুসন্ধান করে জানেন, লেগুনাটি কদমতলীর একটি গ্যারেজে আছে। সেখানে গিয়ে দেখেন লাল পাদানির লেগুনা বিকল অবস্থায় গ্যারেজে পড়ে আছে।
জানতে পারেন লেগুনার চালক ফরহাদ মাদারীপুর! সেখানে গেলে ফরহাদ জানায় ২১ জানুয়ারি দুপুরে তিনি লেগুনা বুঝিয়ে দিয়ে মাদারীপুরে যান। খোঁজ নিয়ে দেখেন তাঁর দাবি সঠিক।
আজাদ খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ফরহাদের পরে লাল পাদানির ওই লেগুনা চালিয়েছিলেন মঞ্জু নামের এক চালক, তাঁর হেলাপারের নাম আব্দুর রহমান।
কিন্তু তাঁদের কোনও ফোন নম্বর না থাকায় সমস্যা হয়। পরে রহমানের বাবার ফোনে লেগুনার চালক মালিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলে তাঁর ছেলে লেগুনার চাকা আর তেল বিক্রি করে দিয়েছে। তিনি ছেলেকে ডেকে আনেন। বুঝতে না দিয়ে রহমানকে ধরে ফেলে চালক মঞ্জুর খবর জানতে চান।
রহমান জানায়, শান্ত নামের একজনের মাধ্যমে তাঁকে পাওয়া যাবে। পরে শান্তকে নিয়েই অভিযানে যায় পুলিশ এবং মঞ্জুকে ধরে ফেলে। দুজনকে থানায় নিয়ে গেলে মঞ্জু আর রহমান জানায়, সেই রাতে তাদেরসঙ্গে রুবেল ও রিপন নামে দুজন ছিলো। কদমতলী থেকে তাদেরও গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এসআই আজাদ বলেন, ২১ জানুয়ারি রাতে লেগুনা নিয়ে ছিনতাইয়ের উদ্দেশে বের হয়েছিলো চারজন। মধ্যরাতে একজন যাত্রী তাদের লেগুনায় উঠলে পরে বিপদ বুঝে চলন্ত লেগুনা থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যায়। পরে ভোরবেলা মহিরউদ্দিন ওঠেন ওই লেগুনায়।
তার কাছ থেকে ৫ হাজার ৯শ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে তাকে গাড়ি থেকে ফেলে দেয় ওরা। পরে সেই টাকার মধ্যে ৭শ টাকার তেল কেনে। দুই হাজার টাকার ইয়াবা কিনে চারজনে মিলে সেবন করে। আর সকালে এক হাজার টাকার নাশতা করে বলে জানিয়েছে মঞ্জু।
আজাদ জানান, পাঁচদিনে দৈনিক ৩শ টাকা করে ইনকাম হয়েছে তাঁর। কষ্ট হয়েছে কিন্তু পুরো চক্রকে ধরতে পেরে খুশি। তবে এমন অভিজ্ঞতা তাঁর এবারই প্রথম নয়! এর আগে ২০১৭ সালে ফেরিওয়ালা সেজে তিনি এক হত্যা মামলার আসামিকে গ্রেপ্তার করেন!
ব্র্যাভো!
দমবন্ধ করা এটি যেনো কোনও মুভির কাহিনী। না, এটি বাস্তব ঘটনা! সকালে এটি পড়েই ভাল লাগলো খুব।
স্যালুট এসআই বিলাল আল আজাদ!
স্যালুট বাংলাদেশ পুলিশ।