মানবতার জননী জননেত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন ২৮ সেপ্টেম্বর

মানবতার জননী জননেত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন ২৮ সেপ্টেম্বর
ডন প্রতিবেদন : মানবতার জননী, জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন ২৮ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার)। দিবসটি উপলক্ষে নানান কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, এর অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। দিবসটি উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। এ ছাড়া, একইদিন কেন্দ্রীয়ভাবে বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সকল মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। একইসঙ্গে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে (মেরুল বাড্ডা), ২৮ সেপ্টেম্বর প্রথম প্রহরে (২৭ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে) খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (সিএবি) মিরপুর ব্যাপ্টিস চার্চে (২৯ সেনপাড়া, পর্বতা, মিরপুর-১০), সকাল ৬টায় তেজগাঁও জকমালা রাণীর গীর্জায় এবং বিকেল ৫টায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। কর্মসূচিগুলোতে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। গোপালগঞ্জের মধুমতি নদীবিধৌত টুঙ্গিপাড়ায় ১৯৪৭ সালের এদিনে জন্মগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি দেশরত্ন, জননেত্রী শেখ হাসিনা। স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছার জ্যেষ্ঠ সন্তান তিনি। গেলোবার করোনা মহামারির কারণে তিনি দেশে থাকলেও এর আগের কয়েকবারের মতো এবারও তিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। ফলে তাঁর অনুপস্থিতিতেই দিবসটি উৎসবমুখর পরিবেশে উদ্‌যাপিত হবে। দেশরত্ন শেখ হাসিনা এবারের ন্যায় চতুর্থবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর নেতৃত্বে অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্বের কাছে তাই সোনার বাংলা একটি রোল মডেলে পরিচিত হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ন্যায় দুর্নীতি-সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে তিনি বিশ্বনেতাদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। আবার মিয়ানমারে জাতিগত সহিংসতায় পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে সারা বিশ্বে মাদার অব হিউম্যানিটি হিসেবে পরিচিত হয়েছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্থায়ী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, খাদ্যে স্বনির্ভরতা, নারীর ক্ষমতায়ন, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্রামীণ অবকাঠামো, যোগাযোগ, জ্বালানী ও বিদ্যুৎ, বাণিজ্য, আইসিটি এবং এসএমই খাতে বাংলাদেশে এসেছে ব্যাপক সাফল্য। পাশাপাশি তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচার, পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি সম্পাদন, একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি আদায়সহ জাতীয় জীবনে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যার গতিশীল নেতৃত্বে এ মহামারিকালেও দেশের প্রবৃদ্ধি এশিয়ায় প্রায় সব দেশের ওপরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণেই মহামারিকে নিয়ন্ত্রণেরসঙ্গে দেশের মেগা প্রকল্পগুলোরও কাজ চলছে সমানতালে। এরইঅংশ হিসেবে আগামী বছর জুনেই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়া এমনকি পৃথিবীর বিস্ময় নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় নির্মাণের শেষপ্রান্তের পদ্মা সেতু। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি হিসেবে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা শেখ হাসিনার ঝুলিতে জমেছে অনেকগুলো অর্জন। পেয়েছেন আন্তর্জাতিক অনেক সম্মাননা ও পদক। এ পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে দেওয়া আন্তর্জাতিক পুরস্কারের সংখ্যাও অনেক (৩৯টিরও বেশি)। এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউট শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র সমুন্নত ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে বিভিন্ন পর্যায়ের পদক প্রদান করেছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানে দায়িত্বশীল নীতি ও তাঁর মানবিকতার জন্য প্রধানমন্ত্রী আইপিএস ইন্টারন্যাশনাল এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড এবং ২০১৮ স্পেশাল ডিসটিংশন অ্যাওয়ার্ড ফর লিডারশিপ পেয়েছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রবক্তা স্বপ্নদর্শী এই নেত্রী ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণের পর থেকে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যদিয়ে দলকে সুসংগঠিত করেন এবং ১৯৯৬ সালে প্রথম, ২০০৮ সালে দ্বিতীয় এবং ২০১৪ সালে তৃতীয় এবং ২০১৮ সালে চতুর্থবারের মতো নির্বাচনে জয়লাভ করে দলকে দেশের নেতৃত্বের আসনে বসাতে সক্ষম হন। দাদা শেখ লুৎফর রহমান ও দাদি সাহেরা খাতুনের অতি আদরের নাতনি শেখ হাসিনার শৈশব-কৈশোর কেটেছে টুঙ্গিপাড়ায়। শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা এবং শেখ রাসেলসহ তারা পাঁচ ভাই-বোন। বর্তমানে শেখ হাসিনা ও রেহানা ছাড়া কেউই জীবিত নেই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালোরাতে পিতা বঙ্গবন্ধু এবং মাতা ফজিলাতুন্নেছাসহ সবাই ঘাতকদের নির্মম বুলেটে নিহত হন। শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিলো টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। তখন পুরান ঢাকার রজনী বোস লেনে ভাড়া বাসায় ওঠেন তাঁরা। বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য হলে সপরিবারে ৩নম্বর মিন্টু রোডের বাসায় তাঁরা বসবাস শুরু করেন। শেখ হাসিনাকে ঢাকা শহরে টিকাটুলির নারী শিক্ষা মন্দিরে ভর্তি করা হয়। এখন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি শেরেবাংলা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে খ্যাত। শুরু হয় তাঁর শহরবাসের পালা। তিনি ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ১৯৬৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন। ওই বছরেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সে ভর্তি হন এবং ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। শেখ হাসিনা ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজে পড়ার সময় ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য এবং রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে তিনি আইয়ুববিরোধি আন্দোলন এবং ৬-দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু উত্থাপিত ৬-দফা দাবিতে পূর্ববাংলায় এক অভূতপূর্ব জাতীয় জাগরণ সৃষ্টি হয়। শাসকগোষ্ঠি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। শুরু হয় প্রচণ্ড দমন-নির্যাতন। আটক থাকা অবস্থাতেই বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে। তাঁর জীবন ও পরিবারের ওপর নেমে আসে গভীর বিপদাশঙ্কা ও দুঃসহ দুঃখ-যন্ত্রণা। এই ঝড়ো দিনগুলোতেই বঙ্গবন্ধুর আগ্রহে ১৯৬৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ারসঙ্গে শেখ হাসিনার বিয়ে হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানের করাচিতে নিয়ে যাওয়ার পর গোটা পরিবারকে ঢাকায় ভিন্ন এক বাড়িতে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। অবরুদ্ধ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই শেখ হাসিনা গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় তার প্রথম সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়’র এর মা হন। পরে ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর পুতুলের জন্ম হয়। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালে সপরিবারে নিহত হবার আগে ছোট বোন শেখ রেহানাসহ শেখ হাসিনা ইউরোপ যান। সেখানে শেখ হাসিনার স্বামী ওয়াজেদ মিয়ার চাকুরিস্থলে অবস্থানকালে তিনি সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার খবর পান। তাৎক্ষণিকভাবে দেশে ফেরার কোনও পরিবেশ না থাকায় তিনি ইউরোপ ছেড়ে স্বামী-সন্তানসহ ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। শেখ হাসিনার পরবর্তী ইতিহাস একবিংশ শতকের অভিযাত্রায় তিনি কীভাবে বাঙালি জাতির কাণ্ডারি হয়েছেন তারই ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখতেন, সেই স্বপ্ন রূপায়ণের দায়িত্ব নিয়ে বাঙালি জাতির আলোর দিশারি হওয়ার ইতিহাস। ১৯৮১ সালের ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে তাঁকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। আর ওই বছরেরই ১৭ মে দীর্ঘ ছয় বছর প্রবাস জীবনের অবসান ঘটিয়ে মাতৃভূমি বাংলাদেশে ফিরে আসেন তিনি। শেখ হাসিনা ১৯৯০ সালের ঐতিহাসিক গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর সরকার গঠন করে এবং ওই বছর ২৩ জুন প্রথমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। তাঁকে হত্যার জন্য ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ছাড়াও অন্তত আরও ১৯ বার চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি মা-বাবার দোয়া এবং দেশবাসির দোয়া-আশির্বাদে এখনও প্রাণে বেঁচে আছেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন নিয়ে বিশাল বিজয় অর্জন করে। এই বিজয়েরমধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি তৃতীয়বার এবং ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। শিল্প সংস্কৃতি ও সাহিত্য অন্তপ্রাণ শেখ হাসিনা লেখালেখিও করেন। তাঁর লেখা এবং সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩০টিরও বেশি। তাঁর প্রকাশিত অন্যতম বইগুলো হচ্ছে- শেখ মুজিব আমার পিতা, সাদা কালো, ওরা টোকাই কেনো, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম, দারিদ্র্য দূরীকরণ, আমাদের ছোট রাসেল সোনা, আমার স্বপ্ন আমার সংগ্রাম, সামরিকতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়ন, বিপন্ন গণতন্ত্র, সহেনা মানবতার অবমাননা, আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি, সবুজ মাঠ পেরিয়ে ইত্যাদি।