বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে দেশ ধ্বংস করবে : প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে দেশ ধ্বংস করবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার (২৩ জুন) ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে আওয়ামী লীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে কর্মসূচি উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে এ দেশ আরও উন্নত-সমৃদ্ধ হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট অর্থনীতি গড়ে উঠবে এবং দেশ এগিয়ে যাবে। কিন্তু যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে, বিএনপি-জামায়াতসহ যারা স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করে না, তারা এ দেশ ধ্বংস করবে।
এ দেশে একমাত্র আওয়ামী লীগই জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করে জানিয়ে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সারা বিশ্বে বাংলাদেশ আজ মর্যাদা পেয়েছে। যেখানে একটি দুর্ভিক্ষপীড়িত দেশ হিসেবে আমাদেরকে করুণার চোখে দেখা হতো, আজ বাংলাদেশ থেকে প্রবাসে যেই যাক, সেখানে সম্মানের চোখে দেখে। এ সম্মান এনে দিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়, আজ তা প্রমাণিত সত্য।
তিনি বলেন, ২০০৮ এর নির্বাচনে জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিলো, আমরা সরকার গঠন করেছি। ২০১৪ সালে জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে পুনরায় ক্ষমতায় আনে, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ নৌকায় মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের আবার দায়িত্ব দেয়।
টানা তিন মেয়াদের সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৩, বাংলাদেশে দারিদ্রের হার ছিলো ৪১ ভাগ, তা নেমে এসেছে ১৮ ভাগে। অতিদরিদ্র ২৫ ভাগের ওপরে ছিলো, তা ৫ ভাগে নেমে এসেছে। সাক্ষরতার হার বেড়েছে, মাতৃমৃত্যু হার কমেছে, শিশুমৃত্যু হার কমেছে, মানুষের আয়ু বেড়েছে, বাংলাদেশ অবকাঠামোগত উন্নয়নে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে আজ সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আওয়ামী লীগ যদি সরকারে থাকে, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করবে, যোগ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আপনাদের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা দিয়েছে, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছে, শিক্ষার আলো জ্বেলেছে সব ঘরে। স্বাস্থ্যসেবা মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছে, তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত। আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি, সমগ্র বাংলাদেশে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড কানেকশন দিয়েছি। কৃষি, বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য সকল ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার গড়ার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ সারা বিশ্বে মর্যাদা নিয়ে অর্জন করেছে, সেটা ধরে রেখে সারা বিশ্বে আরও উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে, সেটাই আমার প্রতিজ্ঞা।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আসুন আমরা প্রতিজ্ঞা করি, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে জাতির পিতার সোনার বাংলা গড়ে তুলবো।
আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা দলের নেতাকর্মীদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানান।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জন্মলগ্ন থেকে এ দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এ দেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছে, বিজয় অর্জন করেছে মুক্তিযুদ্ধে।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ এর জাতির পিতাকে হত্যার পর স্বাধীনতা বিরোধী চক্র, ঘাতকের দল অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় এসেছিলো। তারা স্বাধীনতার চেতনাকে ধূলিসাৎ করেছিলো, আবার আওয়ামী লীগ যখন সরকারে এসেছে, তখনই এ দেশের মানুষের ভাগ্যে পরিবর্তন এসেছে।
এর আগে সকাল ৭টায় ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা। প্রথমে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দ্বিতীয় বার শ্রদ্ধা জানান। এরপর আওয়ামী লীগ প্রধান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন ও পায়রা অবমুক্ত করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু ভবনের ভেতরে যান এবং সেখানে বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান করেন।
এদিকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে সকাল থেকে বিপুলসংখ্যক আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জড়ো হন।
প্রধানমন্ত্রী ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ছেড়ে গেলে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এ সময় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে নেতাকর্মীদের ঢল নামে।
আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনের কেন্দ্রে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে দলটির সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন।