ডন প্রতিবেদক, রাজশাহী : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রাকচাপায় নিহত শিক্ষার্থী মাহমুদ হাবিব ওরফে হিমেলকে ক্যাম্পাস থেকে বিদায় দিয়েছেন তাঁর সহপাঠী, বন্ধু, শিক্ষক ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। আজ বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) বেলা পৌনে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে তাঁর জানাজা হয়। এরপর বেলা ১১টার দিকে তাঁর মরদেহ নিয়ে নাটোরের উদ্দেশে রওনা হন মা ও মামা। সঙ্গে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, ছাত্র উপদেষ্টাসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ৮টি বাসে করে শিক্ষার্থীরা।
সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মাহমুদের মরদেহ প্রথমে চারুকলা অনুষদে আনা হয়। সেখানে কিছুক্ষণ রাখার পর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার মুক্তমঞ্চে নেওয়া হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সহপাঠীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোট, রক্তদাতাদের সংগঠন ‘বাঁধন’, রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ড্রামা অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংগঠন তাঁর মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। এ সময় পাঁচ শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এরপর মাহমুদের মরদেহ জানাজার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে নেওয়া হয়। সেখানে মাহমুদের মামা মো. মুন্না সবার উদ্দেশে বলেন, ‘খুব অল্প বয়সে হিমেল আমাদের মাঝ থেকে চলে গেল। আমার বোন স্বামীহারা ছিলেন, এখন সন্তানহারা হলেন। তিনি এখন এটা কীভাবে মেনে নেবেন, আমি জানি না। আর কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। ভবিষ্যতে যেন আর কারও এ রকম না হয়, আশা করি স্যাররা সেটা দেখবেন।’
উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘সন্তানহারা পিতা হিসেবে আমার পক্ষে এখন কিছু বলা সম্ভব নয়। সন্তানের লাশ পিতার কাঁধে যে কত দুঃসহ! তারই তো আমাকে কাঁধে নেওয়ার কথা ছিল। আমরা তার মায়ের সঙ্গে কথা বলেছি। তার মায়ের আর্থিক দিক আমরা দেখব। তার মা মুনিরা আক্তারের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। আহত রায়হানের দায়িত্বও নেওয়া হয়েছে।’
মাহমুদের মৃত্যুর ঘটনায় শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে গতকাল মঙ্গলবার রাতে মৌখিকভাবে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টরকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার। এ ঘটনায় গতকাল দিবাগত রাত দুইটা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন। পরে তাঁরা উপাচার্যের কাছে লিখিতভাবে ৭ দফা দাবি দিয়ে সকাল পর্যন্ত আন্দোলনে বিরতি ঘোষণা করেন। শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে ছিল নিহত মাহমুদের পরিবারকে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া।
এ বিষয়ে উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘আমি আমার সর্বোচ্চ ক্ষমতা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ৫ লাখ টাকার বেশি দিতে পারছি না। এরপর আমরা ফাইন্যান্স কমিটিতে বসব। শিক্ষকদের সঙ্গে বসে কথা বলব। আমি তো নিজে নিজে ১০ কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিতে পারব না।’
বেলা পৌনে ১১টায় মাহমুদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে বেলা ১১টায় তাঁর মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয়ের লাশবাহী পিকআপ ভ্যানে করে তাঁর মায়ের বাড়ি নাটোরের কাপুড়িয়াপট্টির উদ্দেশে নেওয়া হয়। ভ্যানে তাঁর কয়েক সহপাঠীও ছিলেন। সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে করে উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার, সহ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়া ও অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম, ছাত্র উপদেষ্টা মো. তারেক নূর, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক প্রদীপ কুমার পাণ্ডেসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নাটোর রওনা হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮টি বাসে করে শিক্ষার্থীরাও নাটোরের দিকে যাত্রা করেন।
একই দুর্ঘটনায় মাহমুদের সঙ্গে তাঁর বন্ধু মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষার্থী রায়হান প্রামাণিক আহত হয়েছিলেন। তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। আজ সকালে বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কনক কুমার পাঠক বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘রায়হানের ডান পায়ের গোড়ালির কাছে সেলাই করা হয়েছে। সে শঙ্কামুক্ত বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।’