আওয়ামী লীগই সব সময় দুর্গত মানুষের পাশে থাকে, বিএনপি থাকে না : তথ্যমন্ত্রী
বাসস : পঞ্চগড়ের নৌকাডুবিতে স্বজনহারা মানুষদের সহায়তা প্রদানের সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, গণমানুষের দল আওয়ামী লীগই সবসময় দুর্গত মানুষের পাশে থাকে, বিএনপি থাকে না, বরং তাঁরা মানুষের মৃত্যু, দুর্যোগ, দুর্বিপাক নিয়ে উপহাস করে।
রোববার (২ অক্টোবর) বিকেলে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদ মিলনায়তনে ২৫ সেপ্টেম্বর করতোয়া নদীতে নৌকাডুবিতে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের মাঝে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ত্রাণ ও আর্থিক সহায়তা বিতরণে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ‘শোকাহত পঞ্চগড়’ শিরোনামের এ ত্রাণ-সহায়তা বিতরণে দলের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন রেলপথমন্ত্রী ও পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. নূরুল ইসলাম সুজন।
স্বজনহারা ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের উদ্দেশে ড. হাছান মাহ্মুদ বলেন, ‘আজকে দল হিসেবে আমরা আপনাদের কাছে এসেছি। কিন্তু দেশে একটি বিরোধী দল আছে, রাজপথের বিরোধী দল। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবের বাড়ি উত্তরবঙ্গে, পাশের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে, আসতে যেতে লাগে এক বা দেড় ঘণ্টা। ফখরুল সাহেব কিন্তু এখনো আসেন নি। আমরা যাওয়ার পর উনি আসবেন আমি জানি। কারণ আওয়ামী লীগ চলে এসেছে, বিএনপিকে তো আসতে হবে। উনি না এসে ঢাকায় বসে নানা ধরনের কথা বলেছেন, এরা এগুলোই করেন, দুর্গতের পাশে থাকেন না।’
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চট্টগ্রামের মানুষ, নদী এবং সমুদ্রপাড়ের মানুষ। ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘুর্ণিঝড়ের দু’একদিন পরে পার্লামেন্টে আমাদের দলের পক্ষ থেকে সংসদে তখনকার বিরোধীদলীয় নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন যে, কয়েক লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া সেদিন পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে নির্লজ্জের মতো বলেছিলেন- যতো মানুষ মরার কথা ছিলো, অতো মানুষ মরে নাই। তখন জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন যে, কতো মানুষ মরলে, ততো মানুষ হতো, আপনি বলেন। এর কোনও জবাব ছিলো না। অর্থাৎ তাঁরা দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ায় না। তাঁরা মানুষের মৃত্যু, দুর্যোগ, দুর্বিপাক নিয়ে উপহাস করে।’
এখানেই খালেদা জিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার পার্থক্য, বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের পার্থক্য উল্লেখ করে ড. হাছান মাহ্মুদ বলেন, আওয়ামী লীগ শুধু কথা বলে না, মানুষের পাশে থাকে, মানুষের পাশে দাঁড়ায়। সেই কারণেই আমরা এসেছি, আমাদের দলের নেতারা ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এখানে বিএনপির নেতাকর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়া দূরে থাক, তাঁদের দেখাও যায় নি।
কিন্তু ভোট আসলে তাঁরা আসবে, বলবে পরীক্ষার খাতায় কি কি ভুল হয়েছে, বলেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ওদের পরীক্ষার খাতা তো সাদা। পরীক্ষাই দেয় নাই। আমরা তো লিখছি। আমরা ১৪ বছর ধরে লিখছি, আরও এক বছর লিখবো। লিখলে তো টুকটাক ভুল হবে। ওরা আসবে পরীক্ষার খাতায় কি ভুল হয়েছে সেটি দেখিয়ে দেওয়ার জন্য। তখন তাঁদেরকে বলবেন, এতোদিন আপনাদেরকে দেখি নাই কেন, ‘আপনারা শীতের পাখি এসেছেন সাইবেরিয়া, হিমালয় থেকে, ওখানেই চলে যান।’
তথ্যমন্ত্রী জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বিদেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সফরে থেকেও আপনাদের নেতা সুজন ভাইকে, ত্রাণমন্ত্রীকে, ধর্মমন্ত্রীকে ফোন করেছেন, দলকে নির্দেশনা দিয়েছেন। তাৎক্ষণিকভাবে সবাই ছুঁটে এসেছেন। প্রত্যেক নিহতের ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে জেলা প্রশাসন থেকে ২০ হাজার, ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে ২৫ হাজার, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৫০ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে। সুজন ভাই উকিল মানুষ এরপরও তিনি প্রত্যেককে ৫ হাজার ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পক্ষ থেকে প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে প্রকৃতপক্ষে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।’
তিনি তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই নৌকাডুবিতে মৃত্যুবরণকারীদের বিদেহী আত্মার শান্তি ও তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের শোক কাটিয়ে ওঠার শক্তির জন্য শ্রষ্টার কাছে প্রার্থনা জানান এবং বলেন, ‘এই ঘটনার পরপর আমাদের দলের অত্র এলাকার সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা উদ্ধার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। সরকারের পুলিশ বাহিনী, উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, ফায়ার বিগ্রেড, ডুবুরিরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এখনো যে তিনজনকে খুঁজে পাওয়া যায় নি, তাঁদেরকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। যাঁরা এই উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণ করেছেন, বিশেষ করে ডুবুরিরা, সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাই।’
‘আমাদের নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সবসময় আপনাদের পাশে আছেন এবং থাকবেন। আমাদের দল সবসময় আপনাদের পাশে আছে এবং থাকবে।’
স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে বোদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান সুজা, সাধারণ সম্পাদক ফারুক আলম, মাড়েয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আনছার রেজাউল করিম শামীম ও সাধারণ সম্পাদক সুশীল বর্মণ এবং জন্মাষ্টমী উদ্যাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডেন্ট সুকুমার চৌধুরী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এদিন দুপুর পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরিরা ৬৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছেন। তাঁদের তৎপরতা এখনও অব্যাহত রয়েছে।