ডন প্রতিবেদন : শুরু হলো ভাষার মাস, প্রাণের মাস। মাসটি শুরু হলে যেনো প্রাণের স্পন্দন বেড়ে যায় দ্বিগুণ।
এ মাস বাঙালির ভাষা রক্ষার স্মৃতিবাহী মাস। ৭০ বছর আগে ১৯৫২ সালের এ মাসেই প্রাণের ভাষা বাংলার রাষ্ট্রীয় মর্যাদার দাবিতে গড়ে ওঠা দুর্বার আন্দোলনের পরিণতিতে অর্জিত হয় আজকের বাংলাদেশ নামের এই ভূখণ্ড। ওই আত্মবলিদানের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ভিত্তিক আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার স্বপ্নও জেগে ওঠে, যা এই জাতিকে পরবর্তী ধাপে পথ দেখিয়েছে।
এটি শুধু ভাষার মর্যাদা রক্ষায় সীমাবদ্ধ থাকে নি, হয়ে উঠেছিলো জাতীয়তাবাদের প্রেরণা। আর সেই প্রেরণা নিয়ে বাঙালি এগিয়ে যায় স্বাধিকার আন্দোলনের দিকে, ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতার লাল সূর্য। শোকাবহ এ মাসেরসঙ্গে জড়িয়ে আছে গৌরব আর অহঙ্কারের অধ্যায়।
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে দুর্বার আন্দোলনের পথ ধরে শুরু হয় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন। একাত্তরে ৯ মাস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। সেদিক থেকে মূলত ফেব্রুয়ারি মাস একদিকে শোকাবহ হলেও অন্যদিকে আছে এর গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। কারণ, পৃথিবীর একমাত্র জাতি বাঙালিই ভাষার জন্য এ মাসে জীবন দিয়েছিলেন।
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে বেরিয়ে এলে তৎকালিন পুলিশ তাঁদের ওপর গুলি চালায়। এতে আবুল বরকত, আবদুল জব্বার এবং আবদুস সালামসহ কয়েকজন ছাত্রযুবা হতাহত হন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ ঢাকাবাসী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলে সমবেত হন। নানা নির্যাতন সত্ত্বেও ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরা প্রতিবাদ জানাতে পরেরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি পুনরায় রাজপথে নেমে আসেন।
তাঁরা মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে শহিদদের জন্য অনুষ্ঠিত গায়েবি জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। ভাষা শহিদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি এক রাতেরমধ্যে মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে গড়ে ওঠে একটি স্মৃতিস্তম্ভ, যা সরকার ২৬ ফেব্রুয়ারি গুঁড়িয়ে দেয়। একুশে ফেব্রুয়ারির এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলন আরও বেগবান হয়। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করলে ৭ মে অনুষ্ঠিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
ভাষার জন্য বাংলার দামাল সন্তানদের আত্মত্যাগ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায় ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর। ইউনেসকো ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ঘোষণা করে। এর মধ্যদিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে এখন বিশ্বের দেশে দেশে পালিত হয়।